প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবায় জোর দিন

 

সব শ্রেণি-পেশার মানুষের জন্য সহনীয় ও যৌক্তিক খরচে গুণগত মানের প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করাই হলো সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা। সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা অর্জনই বৈশ্বিক টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অভীষ্ট, যা বাংলাদেশ ২০৩০ সালের মধ্যে অর্জনে অঙ্গীকারবদ্ধ। জাতিসংঘের আহ্বানে ২০১৭ সাল থেকে প্রতিবছর ১২ ডিসেম্বর বিশ্বব্যাপী সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। এ বছর দিবসটি পালিত হয়েছে মঙ্গলবার। এ উপলক্ষে ‘হেলথ ফর অল: টাইম ফর অ্যাকশন’ শীর্ষক আলোচনায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘দেশে প্রতি এক হাজার ১০০ জনের জন্য হাসপাতালে গড়ে একটি শয্যা রয়েছে। আমাদের যে পরিমাণ রোগী হয়, অনেক রোগী ফ্লোরে থাকে, এটা অস্বীকার করতে পারব না। গত সাত-আট বছরে হাসপাতালের বেড দ্বিগুণ হয়েছে। তারপরও সব রোগীকে বেডে রাখতে পারি না। আমাদের জনসংখ্যা অনুযায়ী গড়ে এক হাজার ১০০ জনের জন্য একটি বেড রয়েছে, যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মান অনুযায়ী অনেক কম।

সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে অবশ্যই হাসপাতালের শয্যা বাড়াতে হবে। প্রাথমিক স্বাস্ব্যসেবা নিশ্চিত করা গেলে স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান বিশেষ করে হাসাপাতালে রোগীর চাপ কমবে। শয্যাসংখ্যা লোকসংখ্যার তুলনায় অপর্যাপ্ত হলেও স্বীকার করতে হবে দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা এখনও সরকারি হাসপাতালের ওপর অধিকাংশে নির্ভরশীল।  স্বাধীনতার পর ৫০ বছরে স্বাস্থ্যসেবায় বাংলাদেশ অনেক ঈর্ষণীয় অর্জন আছে। কিন্তু আমাদের সাধারণ মানুষ স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণে অনেক ভোগান্তর শিকার। সরকারি হাসপাতালের বহির্বিভাগের সেবাই তাদের ভরসা। শয্যা পেতে জনে জনে ধরনা দিতে হয়। তা ছাড়া উপযুক্ত কর্মপরিবেশের অভাব, সিন্ডিকেট ও দালাল চক্রের প্রভাবসহ বহুমুখী সীমাবদ্ধতার জাঁতাকলে পিষ্ট সরকারি হাসপাতালগুলো সেবাগ্রহণকারীদের  প্রত্যাশা অনুযায়ী চিকিৎসাসেবা দিতে পারছে না। ব্যয়বহুল অসংক্রামক রোগের চিকিৎসার ব্যয়ভার মেটানোর জন্যই বড়সংখ্যক পরিবার প্রতিবছর দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে যাচ্ছে। কেউ নিঃস্ব হয়েও যাচ্ছে। তাই স্বাস্থ্য খাতে সরকারের বাজেট বরাদ্দ বাড়ানো যেমন প্রয়োজন, তেমনি প্রয়োজন বরাদ্দকৃত বাজেটের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দাবি অনুযায়ী, স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বর্তমান পাঁচ থেকে ১৫ শতাংশে উন্নীত করতে হবে। কিন্তু এ বরাদ্দ বৃদ্ধি রাতারাতি সম্ভব নয়। উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে চিকিৎসকরা যেতে চান না। তারা নানা তদবির করে রাজধানীতে কিংবা বিভাগীর শহরগুলোয় থাকতে চান। তাই  কর্তব্যকালীন ও এসিআরের ভিত্তিতে স্বাস্থ্য ক্যাডারের চিকিৎসকদের উচ্চশিক্ষায় ভর্তি এবং পরবর্তী সময় পদায়নের সুযোগ সৃষ্টি করা হলে বিদ্যমান রিটেনশন এবং কাজে অনুপস্থিতিজনিত সমস্যা দূরীভূত হতে পারে। সমান সুবিধা ক্ষেত্র বিশেষে বেশি পেলে গ্রামেও থাকবেন তারা। অনেক সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা যন্ত্রপাতি অকেজো। বছরের পর বছর চিকিৎসকরা বাইরে পরীক্ষা করার পরামর্শ দেন। ফলে রোগীর খরচ বহুগুলে বেড়ে যায়। তাছাড়া প্রতিকারমূলক চিকিৎসাব্যবস্থার পাশাপাশি প্রতিরোধমূলক স্বাস্থ্যের ওপর জোর দিয়ে প্রাথমিক স্বাস্থ্যের শক্তিশালী কাঠামো গড়ে তুললে সাধারণ মানুষ উপকৃত হবে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০