নিজস্ব প্রতিবেদক:পুঁজিবাজার সপ্তাহের ব্যবধানে নামমাত্র সূচকের উত্থানের মাধ্যমে গত সপ্তাহ পার করেছে। সপ্তাহটিতে সূচক কিছুটা বাড়লেও লেনদেন কমেছে প্রায় ২৩ শতাংশ। গত সপ্তাহে লেনদেনে অংশ নেয়া বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিটদর অপরিবর্তিত ছিল। বিনিয়োগকারীদের স্বল্প সময়ে মুনাফার আশায় পুঁজিবাজারে লেনদেন কমেছে বলে জানিয়েছেন বাজারসংশ্লিষ্টরা। বর্তমানে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর সর্বশেষ প্রান্তিকের আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশের সময় চলছে। ফলে কোন কোম্পানি কেমন ব্যবসা করেছে এবং এর কারণে কোন কোম্পানির শেয়ার থেকে ভালো মুনাফা হবে, সে আশায় অনেকে বিনিয়োগ কমিয়ে দিয়েছেন বলে জানান তারা। তাই নতুন করে বিনিয়োগের জন্য টাকা হাতে রেখে দেয়ায় লেনদেন কমে গেছে বলে জানা যায়।
এদিকে গত সপ্তাহে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহের শীর্ষে থাকা ট্যানারি খাতে উত্থান হয়েছে। ফলে আলোচ্য খাতে শেয়ারদর সবচেয়ে বেশি বেড়েছে। বিপরীতে গত সপ্তাহে পাট খাতে সবচেয়ে বেশি পতন হয়েছে। ফলে আলোচ্য খাতে শেয়ারদর বেশি কমেছে। এদিকে দর বৃদ্ধির দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে সেবা ও আবাসন খাতের শেয়ার। এছাড়া গত সপ্তাহে টেলিকমিউনিকেশন, আর্থিক এবং মিউচুয়াল ফান্ড খাতের শেয়ারদর কমা বা বৃদ্ধির কোনো পরিবর্তন হয়নি।
বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেন হয়েছে ২ হাজার ২৩৬ কোটি ৬ লাখ টাকার। আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল ২ হাজার ৮৯৩ কোটি ৩৩ লাখ টাকার। এক সপ্তাহের ব্যবধানে লেনদেন কমেছে ৬৫৭ কোটি ২৭ লাখ টাকার বা ২২ দশমিক ৭২ শতাংশ। ডিএসইতে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয়েছে ৪৪৭ কোটি ২১ লাখ টাকার। আগের সপ্তাহে গড়ে লেনদেন হয়েছিল ৫৭৮ কোটি ৬৬ লাখ টাকার। গত সপ্তাহে ডিএসইতে তালিকাভুক্ত ৪০১টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়। এর মধ্যে শেয়ারদর বেড়েছে ৪৭টির, দর কমেছে ৮৪টির ও অপরিবর্তিত রয়েছে ২৩৮টি কোম্পানির। লেনদেন হয়নি ৩২টি কোম্পানির শেয়ার।
আলোচ্য সপ্তাহে ডিএসইর প্রধান সূচকের উত্থানে লেনদেন শেষ হয়। এক সপ্তাহে ব্যবধানে প্রধান সূচক ডিএসইএক্স দশমিক ৯৮ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়ায় ৬ হাজার ২১৫ দশমিক ১৮ পয়েন্টে। ডিএসই৩০ সূচক ৩ দশমিক শূন্য ৪ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়ায় ২ হাজার ২০১ দশমিক ৯৩ পয়েন্টে। এছাড়া শরিয়াহ সূচক ডিএসইএস দশমিক ৩৭ পয়েন্ট কমে দাঁড়ায় ১ হাজার ৩৪৭ দশমিক ৫২ পয়েন্টে।
বাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, আগের সপ্তাহে বিনিয়োগকারী স্বল্প সময়ে মুনাফা তুলতে কিছু নির্ধারিত শেয়ারে বিনিয়োগ করেছেন। এতে সে সপ্তাহে সূচক ও লেনদেন বড় উত্থান হয়েছে। ফলে মুনাফা সংগ্রহে বিক্রির চাপ বেড়েছে এবং সূচক ও লেনদেন কমেছে।
তারা বলছেন, বর্তমানে কোম্পানিগুলোর সর্বশেষ আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশের সময় চলছে। এতে যে কোম্পানির ব্যবসা ভালো হয়েছে, তা প্রকাশের পর শেয়ারদরে প্রভাব পড়বে। ফলে সেই শেয়ারে বিনিয়োগ করে স্বল্প সময়ে মুনাফা নিতে চান বিনিয়োগকারী। এ কারণে আগের সপ্তাহে করা বিনিয়োগের মুনাফা তুলে নিয়ে টাকা হাতে রেখেছেন তারা। তাই ধীরে ধীরে বাছাইকৃত কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগের ফলে সূচক কিছুটা বাড়লেও লেনদেন কমেছে।
গত সপ্তাহে আগ্রহ বেশি থাকা ট্যানারি খাতের শেয়ারদর বেড়েছে ১ দশমিক ৩০ শতাংশ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা সেবা ও আবাসন খাতে দর বেড়েছে ১ দশমিক ১০ শতাংশ। শূন্য দশমিক ৮০ শতাংশ দর বৃদ্ধি পেয়ে তৃতীয় স্থানে ছিল ভ্রমণ ও অবকাশ খাতের শেয়ার। শেয়ারদর সবচেয়ে বেশি কমেছে পাট খাতে। এ খাতে গত সপ্তাহে ৪ দশমিক ৯০ শতাংশ শেয়ারদর কমেছে। ৩ শতাংশ শেয়ারদর কমে আইটি খাত দ্বিতীয় স্থানে ছিল। ২ দশমিক ৫০ শতাংশ শেয়ারদর কমে তৃতীয় স্থানে ছিল কাগজ ও মুদ্রণ খাত।
অন্যদিকে গত সপ্তাহে লেনদেনের দিক দিয়ে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে আইটি খাতে। খাতটিতে ডিএসইর মোট লেনদেনের ১৮ দশমিক ৯০ শতাংশ লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতে ডিএসইর মোট লেনদেনের ১৭ দশমিক ৫০ শতাংশ লেনদেন হয়েছে। ৮ দশমিক ৯০ শতাংশ লেনদেন হয়ে তৃতীয় স্থানে ছিল ট্যানারি খাত।
অন্যদিকে গেল সপ্তাহের শেষে ডিএসইর পিই রেশিও অবস্থান করে ১৪ দশমিক ২৮ পয়েন্টে; যা আগের সপ্তাহ শেষে ছিল ১৪ দশমিক ২১ পয়েন্ট।
চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) বিদায়ী সপ্তাহে লেনদেনের পরিমাণ আগের সপ্তাহের তুলনায় কমেছে ৯ দশমিক ১৬ শতাংশ। তবে একটি বাদে বাকি পাঁচ ধরনের সূচক বেড়েছে।
সিএসইর সূত্র মতে, গত সপ্তাহে লেনদেন হয়েছে ৩৬ কোটি ১ লাখ টাকার। আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল ৩৯ কোটি ৬৩ লাখ টাকার। এক সপ্তাহের ব্যবধানে লেনদেন কমেছে ৩ কোটি ৩০ লাখ টাকার বা ৯ দশমিক ১৬ শতাংশ। তালিকাভুক্ত ২২৬টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়। এর মধ্যে শেয়ারদর বেড়েছে ৩৭টির, দর কমেছে ৫৬টির ও অপরিবর্তিত রয়েছে ১৩৩টি কোম্পানির।
পাঁচ ধরনের সূচকের উত্থানে লেনদেন শেষ হয়েছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রধান সূচক সিএএসপিআই দশমিক ১৪ শতাংশ বেড়ে দাঁড়ায় ১৮ হাজার ৩৩১ দশমিক ২৭ পয়েন্টে। সিএসই৫০ সূচক দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ, সিএসই৩০ সূচক দশমিক ৪২ শতাংশ, সিএসইসিএক্স সূচক দশমিক ১৩ শতাংশ ও সিএসআই সূচক দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ বেড়ে দাঁড়ায় যথাক্রমে ১ হাজার ৩১৩ দশমিক ৮৩ পয়েন্টে, ১৩ হাজার ৪২৮ দশমিক ১৬ পয়েন্টে, ১০ হাজার ৯৮৮ পয়েন্টে ও ১ হাজার ১৫১ দশমিক ৪৪ পয়েন্টে। এছাড়া সিএসই এসএমইএক্স সূচক ১ দশমিক ৩৮ শতাংশ কমে দাঁড়ায় ১ হাজার ৭২৪ দশমিক ৫২ পয়েন্টে।