বিদ্যুতের প্রিপেইড মিটারে ২০০ থেকে ৩২০ ডিজিটের ওটিপি!

নিজস্ব প্রতিবেদক: চাঁদপুরের মঞ্জুর তাহসীন গত জানুয়ারি মাসে ফেসবুকে বিদ্যুতের প্রিপেইড সংক্রান্ত এক গ্রুপে স্ট্যাটাস দিয়ে লিখেছেন, ২০০ ডিজিটের ওটিপি টাইপ করতে ভুল করেছি! কি করবো এখন?

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার রাজিব রাজ একই গ্রুপে লিখেছেন, ২০ টা টাইপ করে এন্টার দিয়ে দিয়ে ২৪০ ডিজিট টাইপ করলাম। এরপর তিনি কিছু সমস্যার কথা মিটারের ছবিসহ তুলে ধরেন।

এদিকে বিদ্যুতের প্রি-পেইড মিটারের ব্যালান্স রিচার্জের জন্য রাজধানীর শনির আখড়ার বাসিন্দা সালাহউদ্দিন মাহমুদের ফোনে এসেছে ৩২০ ডিজিটের ওয়ান-টাইম পাসওয়ার্ড বা ওটিপি কোড। যদিও স্বাভাবিক সময়ে প্রিপেইড মিটার রিচার্জে ২০ ডিজিটের ওটিপি আসে।

এই ভোগান্তি শুধু তাহসীন, রাজিব বা সালাহউদ্দিনের বেলাতেই ঘটেনি। সারাদেশ থেকে প্রিপেইড মিটার গ্রাহকের অনেকেই ২০০ সংখ্যার বেশি ওটিপি কোড পাওয়ার অভিযোগ করেছেন।  এ নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে সিলেটের এক গ্রাহক অসীম তালুকদার লিখেছেন, “সাধারণ একটি মিটার রিচার্জ করার জন্য কেন ২৪০, ৩২০, ৩৫০ বা ৩৬০ ডিজিটের কোড লাগবে! ডিজিটালাইজেশনের নামে সাধারণ মানুষের হয়রানি এভাবে বাড়ানোর কাজ কেউ কীভাবে করতে পারে? তাঁদের কী কোনো কাণ্ডজ্ঞান নেই?”

এ বিষয়ে  ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি)-র চিফ ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ তরিকুল হক বলেন, “বিদ্যুতের ট্যারিফ বা দাম পরিবর্তন করা হলে, লোডশেডিং বাড়লে, নতুন সংযোগ বা অভ্যন্তরীণ কোনো পরিবর্তনের ফলে অনেক সময় গ্রাহক এই ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হন।”

তিনি জানান, প্রি-পেইড মিটার রুপান্তরের একটি পরিকল্পনা আছে তাঁদের– যার আওতায় প্রিপেইড মিটারকে রুপান্তর করা হবে অ্যাডভান্স মিটার ইনফ্রাস্ট্রাকচার (এএমআই)-এ। আগামীতে বিল পরিশোধ করা তার ফলে অনেকটাই সহজ হয়ে যাবে।

পিডিবি’র একজন কর্মকর্তা এর কারণ ব্যাখ্যা করে বলেন,  বছরের শুরুতে সব গ্রাহকের তথ্য হালনাগাদ করা হয়। “এতগুলো সংখ্যা ব্যবহারের কারণ, প্রতিটি সংখ্যা দ্বারা গ্রাহকের নাম, শ্রেণিবিভাগ ইত্যাদি তথ্য বোঝানো হয়। বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিগুলোর সার্ভারে এসব এনক্রিপটেড তথ্য সংরক্ষণ করা হয়। নতুন কোনো তথ্য হালনাগাদ করতে নাহলে, তখন ২০টি ডিজিট দিয়েই রিচার্জ করা যায়।”

অবশ্য তিনি এটাও বলেন যে, বিদ্যুতের পরবর্তী দাম পরিবর্তনের আগপর্যন্ত এই সমস্যা আর হবে না।

উৎপাদিত বিদ্যুতের সদ্ব্যবহার ও অপচয় রোধে স্বয়ংক্রিয় বিলিং সুবিধা সৃষ্টি করার জন্য ২০১১ সালে প্রি-পেইড মিটার চালু করা হয়। বর্তমানে প্রি-পেইড মিটার আরও আধুনিকায়ন করে অনলাইন স্মার্ট প্রি-পেমেন্ট মিটার সংযোগ দেওয়া হচ্ছে। বর্তমানে প্রি-পেইড মিটারের গ্রাহক ৫০ লাখের বেশি।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, গত বছরের জুলাই পর্যন্ত দেশে মোট বিদ্যুৎ গ্রাহক ৪ কোটি ৩১ লাখ। এদের মধ্যে ১১ দশমিক ৮৫ শতাংশ প্রি-পেইড মিটারের আওতায় রয়েছেন। আর দেশব্যাপী প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের কাজ করছে বিদ্যুৎ বিতরণকারী ছয়টি কোম্পানি।

এগুলো হলো- বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি), বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (বিআরইবি), ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ডিপিডিসি), ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেড (ডেসকো), ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ওজোপাডিকো), এবং নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেড (নেসকো)।

বর্তমানে প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের ছয়টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০