প্রিমিয়াম সিকিউরিটিজ শেয়ার কেলেঙ্কারি মামলায় ৩ সাক্ষীকে জেরা

নিজস্ব প্রতিবেদক : ১৯৯৬ সালে শেয়ার কারসাজিতে প্রিমিয়াম সিকিউরিটিজ মামলায় চারজন সাক্ষীর মধ্যে তিনজনকে জেরা করা হয়েছে। একই সঙ্গে আরেক সাক্ষীকে জেরা করার জন্য ১ মার্চ দিন ধার্য করেছেন পুঁজিবাজারবিষয়ক স্পেশাল ট্রাইব্যুনালের বিচারক আকবর আলী শেখ। গতকাল বুধবার জেরা শেষে পরবর্তী দিন ধার্য করা হয়।

এ মামলার আসামিরা হলেন এমএ রউফ চৌধুরী, সাঈদ এইচ চৌধুরী, প্রিমিয়াম সিকিউরিটিজের তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক মশিউর রহমান ও পরিচালক আনু জায়গীরদার। এর আগে ৯ জানুয়ারি জেরা করার লক্ষ্যে সাক্ষীদের হাজির হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনাল সমন জারি করেন।

নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির প্যানেল আইনজীবী মাসুদ রানা খান বলেন, ‘বুধবার প্রিমিয়াম সিকিউরিটিজের মামলায় সাক্ষীদের জেরা করার জন্য পূর্বনির্ধারিত ছিল। এদিন ডিএসইর মহাব্যবস্থাপক রুহুল খালেক, সিনিয়র এক্সিকিউটিভ দেলোয়ার হোসেন ও বিএসইসির সহকারী পরিচালক এনামুল হককে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা জেরা করেছেন। অপর সাক্ষী মনিরউদ্দিন আহমেদকে ১ মার্চ জেরা করা হবে।’

মামলাটি বিচারিক কার্যক্রম ছয় মাস স্থগিত থাকার পর সাক্ষীদের জেরা করার মাধ্যমে আবার চালু হয়েছে। এর আগে ৮ জানুয়ারি মামলাটি চালিয়ে নেওয়ার জন্য আসামি এমএ রউফ চৌধুরীর পক্ষে তার আইনজীবী শেখ বাহারুল ইসলাম ও আব্দুস সালাম খান ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। এতে আরেক আসামি সাঈদ এইচ চৌধুরী আইনজীবী মো. বোরহান উদ্দিন সমর্থন করেন।

অন্যদিকে আসামি মশিউর রহমান ও আনু জায়গীরদার স্থগিতাদেশের মেয়াদ আরও ছয় মাস বাড়িয়েছেন। এ-সংশ্লিষ্ট উচ্চ আদালতের বর্ধিত স্থগিতাদেশের কপি ৮ জানুয়ারি ট্রাইবুন্যালে উপস্থাপন করেন, যা ২৯ নভেম্বর ২০১৬ থেকে ২ মে ২০১৭ পর্যন্ত কার্যকর। এর আগে ১৭ এপ্রিল এ দুই আসামির মামলার বিচারকাজে ছয় মাসের স্থগিতাদেশ দেন উচ্চ আদালত।

মামলা সূত্রে জানা যায়, আসামিরা প্রিমিয়াম সিকিউরিটিজের নামে ১৯৯৬ সালের জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত প্রতারণার মাধ্যমে বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ার লেনদেন করেছেন। এ সময় তারা মিতা টেক্সটাইল, প্রাইম টেক্সটাইল, বাটা সুজ ও বেক্সিমকো ফার্মার শেয়ার লেনদেন করেন। প্রতিষ্ঠানটি ওই সময়ে মোট ১২৪ কোটি ৮৭ লাখ টাকা লেনদেন করে। এর মধ্যে প্রতিষ্ঠানটি শুধু ফরেন ডেলিভারি ভার্সেস পেমেন্টের (ডিভিপি) মাধ্যমে ৮৫ লাখ টাকা লেনদেন করে।

এ সময় ১ নম্বর আসামি প্রিমিয়াম সিকিউরিটিজ ওই সময়ে ২১ লাখ ৪৩ হাজার ৬৩টি শেয়ার বিক্রি করে,যার মূল্য ছিল ৬৮ কোটি ৩১ লাখ টাকা।

স্টক এক্সচেঞ্জের রেকর্ড মোতাবেক আসামিরা এসিআই লিমিটেডের এক লাখ ৬৪ হাজার ৮১৯টি শেয়ার বিক্রি করেন। অথচ ব্যাংক রেকর্ড অনুযায়ী শেয়ার বিক্রির পরিমাণ দুই লাখ ৩৪ হাজার ৫৩৮টি, যার মধ্যে ফরেন ডিভিপির মাধ্যমে লেনদেন অনিষ্পত্তি হওয়া শেয়ারের পরিমাণ ছিল আট কোটি ৪৭ লাখ টাকা।

একইভাবে আসামিরা ডিভিপির মাধ্যম ছাড়াও স্থানীয়ভাবে শেয়ারের অন্যতম ক্রেতা-বিক্রেতা ছিলেন। আসামিরা ওই সময়ের মধ্যে বেক্সিমকো ফার্মার ১৩ লাখ ২৪ হাজার ৭৯৫টি শেয়ার বিক্রি করেন। এর মধ্যে ডিভিপির মাধ্যমে ৯ লাখ ৯৮ হাজার ৭০০টি শেয়ার বিক্রি করেন। আর এখানেও অনিষ্পত্তি হওয়া শেয়ার ছিল এক লাখ এক হাজার ৫০০টি। এসব ফরেন ডিভিপির মাধ্যমে লেনদেন নিষ্পত্তির জন্য প্রতিষ্ঠানটি স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক ও ইন্দোসুয়েজ ব্যাংক ব্যবহার করতো। আসামিদের এ ধরনের কার্যকলাপ সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ক্ষতি, অপকার ও অনিষ্ট করেছে, যার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অধ্যাদেশ-১৯৬৯ এর ২১ ধারা বলে গঠিত তদন্ত কমিটি ১৯৯৭ সালের ২৭ মার্চ একটি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে। প্রতিবেদনে আসামিরা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অধ্যাদেশ-১৯৬৯ এর ১৭ ধারার ই(২) বিধান লঙ্ঘন করেছেন বলে উল্লেখ করা হয়। আর সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অধ্যাদেশের ২৪ ধারার অধীনে আসামিদের শাস্তি দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে তদন্ত প্রতিবেদনে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০