প্রিমিয়ার সিকিউরিটিজ মামলা : অপরাধের সঙ্গে জড়িত নই বললেন সাঈদ এইচ চৌধুরী

নিজস্ব প্রতিবেদক: ব্যবসা সততার সঙ্গে করেছি। কোনো অপরাধের সঙ্গে জড়িত নই বললেন প্রিমিয়ার সিকিউরিটিজ মামলার আসামি শিল্পপতি সাঈদ এইচ চৌধুরী। গতকাল মঙ্গলবার পুঁজিবাজার-সংক্রান্ত মামলা নিষ্পত্তিতে গঠিত বিশেষ ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত হয়ে সাফাই সাক্ষী প্রদানকালে তিনি এসব কথা বলেন। সাফাই সাক্ষী শেষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের জন্য আগামী ১০ এপ্রিল নির্ধারণ করেছেন ট্রাইব্যুনালের বিচারক আকবর আলী শেখ।

‘আমি প্রিমিয়ার সিকিউরিটিজের একজন স্পিপিং পার্টনার। আমি শুধু শেয়ার কিনেছি। এ প্রতিষ্ঠান থেকে কোনো সুযোগ সুবিধা নেইনি। তাছাড়া অন্যান্য ব্যবসা নিয়ে ব্যস্ত থাকায় তার কোনো খোঁজ রাখিনি।’

সাফাই সাক্ষী প্রদানের পর বিএসইসির প্যানেল আইনজীবী মাসুদ রানা খান তাকে জেরা করেন। সাফাই সাক্ষী প্রদান করালে ট্রাইব্যুনালে আসামি এমএ রউফ চৌধুরীর আইনজীবী শেখ বাহারুল ইসলাম ও আবদুস সালাম খান এবং আসামি সাঈদ এইচ চৌধুরীর আইনজীবী আলহাজ মো. বোরহান উদ্দিন উপস্থিত ছিলেন।

বিএসইসির প্যানেল আইনজীবী মাসুদ রানা খান বলেন, মঙ্গলবার প্রিমিয়ার সিকিউরিটিজের মামলায় আসামি সাঈদ এইচ চৌধুরীর সাফাই সাক্ষী প্রদানের জন্য পূর্বনির্ধারিত ছিল। তার সাফাই সাক্ষী শেষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের জন্য আগামী ১০ এপ্রিল নির্ধারণ করেছেন ট্রাইব্যুনালের বিচারক।

এর আগে গত ৮ মার্চ আত্মপক্ষ সমর্থনে নিজেদের নির্দোষ দাবি করেন এ মামলার আসামি এমএ রউফ চৌধুরী ও সাঈদ এইচ চৌধুরী। ওই দিন এমএ রউফ চৌধুরী আত্মপক্ষ সমর্থনের পাশাপাশি নিজেই সাফাই সাক্ষী প্রদান করেছিলেন। আর সাঈদ এইচ চৌধুরীর সাফাই সাক্ষী প্রদানের জন্য গতকাল নির্ধারিত ছিল।

এ মামলার ৪ জন সাক্ষীর মধ্যে ডিএসইর মহাব্যবস্থাপক রুহুল খালেক, সিনিয়র এক্সিকিউটিভ দেলোয়ার হোসেন ও বিএসইসির সহকারী পরিচালক এনামুল হককে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা গত ১৮ জানুয়ারি জেরা করেন। আর গত ১ মার্চ অপর সাক্ষী মনিরউদ্দিন আহমেদকে জেরা করা হয়।

এ মামলার আসামিরা হলেন: প্রিমিয়াম সিকিউরিটিজের তৎকালীন চেয়ারম্যান এমএ রউফ চৌধুরী, পরিচালক সাঈদ এইচ চৌধুরী ও আনু জায়গীরদার এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক মশিউর রহমান উচ্চ-আদালতের স্থগিতাদেশের কারণে আসামি মশিউর রহমান ও আনু জায়গীরদারের বিচারকাজ বন্ধ রয়েছে। যা আগামী ২ মে পর্যন্ত কার্যকরি।

মামলা সূত্রে জানা যায়, আসামিরা প্রিমিয়াম সিকিউরিটিজের নামে ১৯৯৬ সালের জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত প্রতারণার মাধ্যমে বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ার লেনদেন করেছেন। এ সময়ে তারা মিতা টেক্সটাইল, প্রাইম টেক্সটাইল, বাটা সুজ ও বেক্সিমকো ফার্মার শেয়ার লেনদেন করেন। প্রতিষ্ঠানটি ওই সময় মোট ১২৪ কোটি ৮৭ লাখ টাকা লেনদেন করে। এর মধ্যে শুধু ফরেন ডেলিভারি ভার্সেস পেমেন্টের (ডিভিপি) মাধ্যমে ৮৫ লাখ টাকা লেনদেন করে।

একইভাবে আসামিরা ডিভিপির মাধ্যম ছাড়াও স্থানীয়ভাবে শেয়ারের অন্যতম ক্রেতা-বিক্রেতা ছিলেন। আসামিরা ওই সময়ের মধ্যে বেক্সিমকো ফার্মার ১৩ লাখ ২৪ হাজার ৭৯৫টি শেয়ার বিক্রি করেন। এর মধ্যে ডিভিপির মাধ্যমে ৯ লাখ ৯৮ হাজার ৭০০টি শেয়ার বিক্রি করেন। আর এখানেও অনিষ্পত্তি হওয়া শেয়ার ছিল এক লাখ এক হাজার ৫০০টি। এসব ফরেন ডিভিপির মাধ্যমে লেনদেন নিষ্পত্তির জন্য প্রতিষ্ঠানটি স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক ও ইন্দোসুয়েজ ব্যাংক ব্যবহার করতো। আসামিদের এ ধরনের কার্যকলাপ সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ক্ষতি, অপকার ও অনিষ্ট করেছে, যার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অধ্যাদেশ লঙ্ঘন হয়েছে।

এ সময় এক নম্বর আসামি প্রিমিয়াম সিকিউরিটিজ ওই সময়ে ২১ লাখ ৪৩ হাজার ৬৩টি শেয়ার বিক্রি করে, যার মূল্য ছিল ৬৮ কোটি ৩১ লাখ টাকা। স্টক এক্সচেঞ্জের রেকর্ড মোতাবেক আসামিরা এসিআই লিমিটেডের এক লাখ ৬৪ হাজার ৮১৯টি শেয়ার বিক্রি করেন। অথচ ব্যাংক রেকর্ড অনুযায়ী শেয়ার বিক্রির পরিমাণ দুই লাখ ৩৪ হাজার ৫৩৮টি, যার মধ্যে ফরেন ডিভিপির মাধ্যমে লেনদেন অনিষ্পত্তি হওয়া শেয়ারের পরিমাণ ছিল ৮ কোটি ৪৭ লাখ টাকা।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০