নাজমুল হুসাইন : দেশে রড উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে দেড় শতাধিক। এদের মধ্যে মান সংস্থা বিএসটিআই’র লাইসেন্সধারীর সংখ্যা মাত্র ৭০টি। বাকিগুলো রয়েছে নজরদারির বাইরে। এদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ নি¤œমানের রড তৈরি করে ভুয়া বিএসটিআই ও শক্তিশালী গ্রেডের সিল মেরে বাজারজাত করছে। এ অবস্থায় চরম ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে এ নির্মাণসামগ্রীটি।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের বাজারে ভুয়া ও নি¤œমানের রডের উপস্থিতি নতুন নয়। কয়েক বছর ধরেই এসব রডে বাজার ছেয়ে গেছে। নি¤œমানের ইনগট ও জাহাজ ভাঙা স্ক্র্যাব থেকে রড বানিয়ে তাতে বাজারে থাকা শক্তিশালী গ্রেড চিহ্ন [৫০০ ডব্লিউ (টিএমটি) বা ৪০০ ডব্লিউ (৬০ জি)] দিয়ে তা বাজারে বিক্রি করা হচ্ছে। সনদ না থাকলেও লাগানো হচ্ছে বিএসটিআই’র মানচিহ্ন। আর এসব রড দিয়ে নির্মিত হচ্ছে সরকারি-বেসরকারি ও ব্যক্তি পর্যায়ের স্থাপনা। যা যে কোনো সময় ভেঙে পড়ার ঝুঁকি রয়েছে। এভাবে লাইসেন্সবিহীন রি-রোলিং মিলগুলো বাজারের অসাধু ব্যবসায়ীর যোগসাজশে ধোঁকা দিচ্ছে ক্রেতাদের।
রি-রোলিং মিলের ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত দুই-তিন বছর ধরে ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থা এসব রডের বিষয়ে তথ্য দিলেও দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। সর্বশেষ গত জানুয়ারিতেও শিল্প মন্ত্রণালয়ে এসব ভুয়া রড বিক্রেতার মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ অটো রি-রোলিং অ্যান্ড স্টিল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিএআরএসএমএ)। এ প্রেক্ষিতে নকল ও ভেজাল রডের বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে শিল্প মন্ত্রণালয় বিএসটিআইকে নির্দেশ দেয় বলে ব্যবসায়ীরা জানান। তবে নির্দেশ দিলেও মোবাইল কোর্ট পরিচালনায় পর্যাপ্ত পুলিশ ও ম্যাজিস্ট্রেট সংকট থাকায় সংস্থাটির পক্ষ থেকে এখনও কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএআরএসএমএ’র চেয়ারম্যান শেখ মাসাদুল আলম মাসুদ শেয়ার বিজকে বলেন, ‘দুবছর থেকে সরকারের বিভিন্ন মহলকে ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে অনুরোধ করা হচ্ছে। ২০১৫ সালে আমরা প্রথম শিল্পমন্ত্রী ও বিএসটিআই’র সাবেক মহাপরিচালকের সঙ্গে কথা বলি। সে সময় বিএসটিআই অভিযান চালিয়ে শুধু চট্টগ্রামে কিছু মিলকে জরিমানা ও মামলা করে।’
তিনি বলেন, ‘কিন্তু এখন আবার এসব ছেয়ে যাচ্ছে। এতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে গত বছর জুনে সাক্ষাৎ করি আমরা। তিনি আইজিকে নির্দেশনা দেন পদক্ষেপ নিতে। পরে আমরা আইজির সঙ্গেও দেখা করি। এভাবে আমরা র্যাব ডিজির সঙ্গেও দেখা করেছি। তিনিও আমাদের আশ্বস্ত করেছিলেন ভুয়া রড বন্ধ হবে। কিন্তু সেটা কবে?’
বিএআরএসএমএ’র দাবি, প্রতিবছর দেশে প্রায় ৮০ লাখ টন রড উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে। আর উৎপাদন হয় প্রায় ৪০ থেকে ৪৫ লাখ টন। প্রতিবছর প্রায় ১০ থেকে ১৫ লাখ টন নি¤œমানের রড বাজারে সরবরাহ হচ্ছে, যা রড বাজারের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ। আর এর আনুমানিক বাজারমূল্যে প্রায় সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা বেশি। সরকার এ টাকার পুরো রাজস্ব থেকেই বঞ্চিত হচ্ছে। অপরদিকে এই রড প্রকৃত বাজারমূল্য থেকে পাঁচ হাজার টাকা কম দামে বাজারে সরবরাহ করা হয়। ফলে মুনাফার লোভে বিক্রেতারাও নি¤œমানের রড বিক্রিতে ঝুঁকছেন। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন প্রকৃত ব্যবসায়ীরা।
আইনি পদক্ষেপের বিষয়ে বিএসটিআই পরিচালক (সিএম, অতিরিক্ত) প্রকৌশলী এসএম ইসহাক আলী বলেন, ‘ভুয়া রডের বিষয়ে আমরা অবগত রয়েছি। কয়েক মাস আগে একবার বাজারে অভিযান চালিয়ে চার প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তবে এখনও বিএসটিআই অভিযানের জন্য প্রস্তুত। তবে বার বার মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করা হলেও মোবাইল কোর্টে প্রয়োজনীয় ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশ পাওয়া যাচ্ছে না।’
শিল্প মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (অধিদফতর ও আইন) সহিদুল ইসলাম বলেন, ‘বিএসটিআইকে ম্যাজিট্রেট দেওয়ার জন্য জনপ্রশাসনে চিঠি দেওয়া হয়েছে। যেহেতু এসব প্রতিষ্ঠানের অধিকাংশ রাজধানীর বাইরে, তারা চাইলে জেলা প্রশাসকের সহায়তায় মোবাইল কোর্ট করতে পারে। যা হোক দ্রুত এসব অনিয়ম আইনের আওতায় আসবে।’

Print Date & Time : 21 June 2025 Saturday 8:44 pm
প্রয়োজনীয় জনবল স্বল্পতায় নীরব কর্তৃপক্ষ
শেষ পাতা ♦ প্রকাশ: