অ্যাপভিত্তিক রাইড শেয়ারিং সেবা দ্রুতই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। যানজট ঠেলে সময়মতো অফিস, বাসা বা গন্তব্যে পৌঁছাতে অনেকে রাইড শেয়ার করছেন। যানটি অনেক ক্ষেত্রে মোটরসাইকেল হওয়ায় যানজটের মধ্যে অল্প জায়গা দিয়ে বেরিয়ে দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছানো সহজ হচ্ছে। এর ভাড়াও সিএনজিচালিত থ্রিহুইলারের চেয়ে কম পড়ছে। সবচেয়ে বড় সুবিধা-অ্যাপভিত্তিক যোগাযোগ ঘটায় গন্তব্যে যেতে সাধারণত আপত্তি করছেন না চালক। অ্যাপ চালু থাকা মানেই তিনি সেবা দিতে প্রস্তুত। এ ধরনের সেবার মাধ্যমে অনেকেরই বাড়তি রোজগারের সুযোগ হয়েছে। অনেকে এটাকে নিয়েছেন পেশা হিসেবেও। সাম্প্রতিক সময়ে রাজধানীর ব্যস্ত স্থানে রাইড শেয়ার করা মোটরসাইকেল আরোহীদের অবস্থান বেড়েছে। যাত্রীদের ডাকাডাকিও করছেন তারা। বিষয়টি দৃষ্টিকটুও বটে। এসব মোটরসাইকেলে সম্প্রতি অতিরিক্ত হেলমেট সংযোজন করা হয়েছে। মোটরসাইকেলে রাইড শেয়ারিং আইনসম্মত এখন। আরোহীর হেলমেট পরাও সেক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক। রাস্তায় বের হলেই এখন সবচেয়ে বেশি যেটি চোখে পড়ে-চালক ও যাত্রী উভয়ের মাথায় হেলমেট। নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলন গড়ে তোলা শিক্ষার্থীদের অন্যতম সফলতাও বলা যায় এই হেলমেটের ব্যবহার। হেলমেটবিহীন মোটরসাইকেল চালকদের কাছে জ্বালানি তেল বিক্রি না করতেও নির্দেশনা জারি করেছে পুলিশ। এর পাশাপশি মানুষও সচেতন হয়েছে। রাইড শেয়ারিং সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোও চালকদের হেলমেট ছাড়া মোটরসাইকেল চালাতে নিরুৎসাহিত করছে। হেলমেট না থাকলে যাত্রীরাও উঠতে চান না অনেক ক্ষেত্রে।
হেলমেট অনেক ক্ষেত্রে বড় দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা করে। ২০১৬ সালে ইউনাইটেড ন্যাশনস ইকোনমিক কমিশন ফর ইউরোপ (ইউএনইসিই) মোটরসাইকেলের হেলমেট সমীক্ষা শীর্ষক একটি গবেষণা সম্পাদন করে। এতে বলা হয়, দুর্ঘটনায় অন্যান্য যাত্রীবাহী গাড়ির চেয়ে মোটরসাইকেল আরোহীর মৃত্যুর শঙ্কা ২৬ গুণ বেশি। সঠিক মানের হেলমেট ব্যবহার করলে আবার দুর্ঘটনায় বেঁচে যাওয়ার সম্ভাবনা ৪২ শতাংশ বেড়ে যায়। সেক্ষেত্রে মোটরসাইকেলে স্টার্ট দেওয়ার আগেই চালকের উচিত মাথায় হেলমেট পরে নেওয়া। মানবদেহের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো তার মাথা। তাতে আঘাত মানে জীবন-মরণের প্রশ্ন। দুর্ঘটনায় মাথা রক্ষার জন্য তাই সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হয়। হেলমেটের বাইরের শক্ত খোলসের নিচে থাকে নরম স্তর, যেটি মাথার সঙ্গে লেগে থাকে; মাথাকে রাখে সুরক্ষিত। অথচ এখন কমদামি ও মানহীন হেলমেটের ব্যাপক ব্যবহার হচ্ছে বিশেষত যাত্রীর ক্ষেত্রে। এর মান নির্ধারণে কোনো কর্তৃপক্ষও নেই। অধিকাংশ হেলমেটই আসে ভারত, চীন ও থাইল্যান্ড থেকে। যুক্তরাষ্ট্রে সব মোটরসাইকেল হেলমেটে ‘ডিওটি’ (ডিপার্টমেন্ট অব ট্রান্সপোর্ট) মুদ্রিত স্টিকারসহ বিক্রি করা বাধ্যতামূলক। এর মানে, এটা প্রয়োজনীয় মানসম্পন্ন। এদিকে দেশে হেলমেটের মান নির্ধারণে স্বীকৃত প্রতিষ্ঠান না থাকায় ক্রেতা ‘দাম’-এর ভিত্তিতে মান বিচার করেন, যা সঠিক নয়।
গতকাল শেয়ার বিজে প্রকাশিত ‘হেলমেটের নামে প্লাস্টিক টুপি, নিরাপত্তা ঝুঁকিতে বাইকযাত্রীরা’ শীর্ষক প্রতিবেদন রাইড শেয়ারিং সেবা গ্রহীতাদের উদ্বেগ বাড়াবে। এতে বলা হয়, রাইড শেয়ারিং কোম্পানিগুলো মোটরসাইকেল চালকদের ভালো মানের হেলমেট দিলেও যাত্রীদের জন্য মানহীন হেলমেট দিচ্ছে। সেবাগ্রহীতাদের অভিযোগ, নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের পর পুলিশও শক্ত অবস্থান নেওয়ায় রাইড শেয়ারিং কোম্পানিগুলো আইন মানার নামে মানহীন হেলমেট দিচ্ছে যাত্রীদের জন্য। এগুলো প্রকৃতপক্ষে প্লাস্টিকের টুপি। অথচ সামনে বসা চালক ভালো হেলমেট ব্যবহার করছেন। এতে দুর্ঘটনা ঘটলে চালক তুলনামূলক কম আহত হলেও যাত্রীর ঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে।
এসব মানহীন হেলমেট নিয়ন্ত্রণে বিএসটিআই’র ভূমিকা সম্পর্কে সংস্থাটির ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, হেলমেট বিএসটিআই’র তালিকাভুক্ত পণ্য নয়; তাই এর গুণগত মানের লাইসেন্স দেওয়া সংস্থাটির কাজ নয়। বিষয়টি বিআরটিএ’র দেখা উচিত।
বিএসটিআইর এ কর্মকর্তা ঠিক বলেননি। বাজারে বিক্রি হওয়া সব হেলমেট বিএসটিআই’র নির্ধারিত মান অনুযায়ী উৎপাদন বা আমদানি হওয়ার কথা। হেলমেটে বিএসটিআইর মানচিহ্নও থাকার কথা। কারণ এটি বিএসটিআইর বাধ্যতামূলক মান পরীক্ষার তালিকায় থাকা ১৯৪টি পণ্যের একটি। আমরা মনে করি, মানহীন হেলমেট আমদানির দায় এড়াতে পারে না বিএসটিআই। আবার হেলমেটের নামে প্লাস্টিক টুপির ব্যবহার বন্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে বিআরটিএকেই। সবচেয়ে বড় কথা, যাত্রীদের নিরাপত্তা বিধানে রাষ্ট্রকেই ব্যবস্থা নিতে হবে এবং তা দ্রুত।
প্লাস্টিক টুপি নয়, ব্যবহার হোক প্রকৃত হেলমেট
