প্লাস্টিক বোতলে বাড়ি

জাহেদুল ইসলাম সমাপ্ত: ইট, বালু ও কংক্রিটের দালানকোঠার খবর তো আর ঢোল পিটিয়ে জানানোর কিছু নেই। মাটি কিংবা টিনের বাড়ির খবরও সবার জানা। বাঁশের বেড়ার যুগও যে একেবারে শেষ হয়ে গেছে, তাও নয়। তবে পরিত্যক্ত প্লাস্টিক ব্যবহার করে বাড়ি নির্মাণ হয়তো অনেকের কাছে অজানা। অথচ জানেন কি, বাংলাদেশেই পরিত্যক্ত প্লাস্টিক বোতল দিয়ে বাড়ি তৈরি করে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছেন লালমনিরহাটের শিক্ষক দম্পতি রাশেদুল আলম ও আসমা খাতুন।

পরিবেশবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী এ দম্পতির বাড়ি লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার চন্দ্রপুর ইউনিয়নের নওদাবাস গ্রামে। তদের শিশুপুত্র রাফিদুল আলম ঠিকমতো কথা বলতে পারে না। চিকিৎসক পরামর্শ দিয়েছেন তাকে খোলামেলা পরিবেশে শিশুদের সঙ্গে মেলামেশার সুযোগ দিলে হয়তো এ সমস্যা কিছুটা হলেও কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে। এ কারণে ঢাকা থেকে গ্রামে ফিরে আসেন তারা।

পৈতৃক জমিতে প্রথমে ইটের দালান তৈরির সিদ্ধান্ত নেন। তবে ব্যয়বহুল হওয়ার কারণে সিদ্ধান্ত থেকে পিছিয়ে আসেন। তাছাড়া পরিবেশের ক্ষতির দিকটিও তারা বিবেচনায় রাখেন। এরপর পরিবেশবান্ধব প্লাস্টিকের বোতলের বাড়ি তৈরির সিদ্ধান্ত নেন।

রাশেদুল আলম বলেন, ‘প্রথমে বোতলবাড়ির বিষয়ে ইন্টারনেটে সার্চ করি। তথ্যউপাত্ত বিশ্লেষণ করে স্ত্রী ও পরিবারের সম্মতি নিয়ে প্লাস্টিক বোতল সংগ্রহের কাজ শুরু করি। লালমনিরহাট বিসিক শিল্পনগরী ও স্থানীয়ভাবে প্লাস্টিকের পুরোনো ও কুড়ানো বোতল কিনি।’

রাজমিস্ত্রিরা এ ধরনের দালান তৈরিতে আগ্রহ দেখাননি প্রাথমিক পর্যায়ে। এ বছরের ৮ ফেব্রæয়ারি ১৭০০ বর্গফুটের বাড়ির কাজ শুরু করি। বাড়িটি নির্মাণে এক লিটার, আধা লিটার ও ২৫০ মিলিগ্রামের খালি প্লাস্টিকের (পিইটি) ৮০ হাজার বোতল ব্যবহƒত হবে। বাড়িটিতে চারটি শয়নকক্ষ, একটি রান্নাঘর, একটি খাবারঘর, দুটি শৌচাগার ও একটি বারান্দা থাকছে। বাড়িটির সেপটিক ট্যাংকও প্লাস্টিক বোতলের। প্লাস্টিক বোতলের দেয়াল বা প্রাচীর গাঁথতে সিমেন্ট ও বালির মিশ্রণ ব্যবহার হচ্ছে। দরজা ও জানালা যথারীতি স্টিল বা কাঠের হবে। ছাদে টিন ব্যবহার করা হবে।

নওদাবাস গ্রামের আবদুল বারী মোক্তারের ছেলে রাশেদুল আলম গ্রামের একটি স্থানীয় স্কুল থেকে এসএসসি ও এইচএসসি পাসের পর ঢাকার শেখ

বোরহানুদ্দীন পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কলেজ থেকে পরিবেশবিজ্ঞানে অনার্স-মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। রাজধানীর নবাবকাটরার নিমতলীর আফসার উদ্দিনের মেয়েকে বিয়ে করেন। পরে পড়াশোনা শেষে দুজনেই ওই কলেজে পার্টটাইম অধ্যাপনা করেন প্রায় আট বছর। তাদের স্বপ্ন ছিল পরিবেশবান্ধব একটি বাড়ি তৈরি করা।

রাশেদুল আলম ও আসমা খাতুন বলেন, ‘শীতকালে উষ্ণ ও গ্রীষ্মকালে শীতল থাকবে এ বাড়ি।’ এজন্য তারা পর্যাপ্ত জায়গা উš§ুক্ত রেখেছেন। বাড়িটি নির্মাণে প্রায় চার লাখ টাকা খরচ হচ্ছে বলে তারা জানিয়েছেন।

লালমনিরহাট বিসিক শিল্পনগরীর প্লাস্টিক বোতল বিক্রেতা হামিদুল ইসলাম বলেন, আমি জীবনেও শুনিনি প্লাস্টিকের বোতল দিয়ে বাড়ি হয়। রাশেদুল আলম আমার কাছ থেকে কয়েক হাজার প্লাস্টিকের খালি বোতল কিনেছেন। এতে আমার ব্যবসা ভালো হয়েছে।

রাজমিস্ত্রি দিনহরি চন্দ্র রায় বলেন, সারা জীবন ইট দিয়ে বাড়ি বানিয়েছি। এবার প্লাস্টিক বোতলের কাজ করলাম। আমি ভীষণ খুশি, সবাই কাজ দেখার জন্য আসে, ছবি তোলে, আমার খুব ভালো লাগে।

কালীগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) পারভেজ নেওয়াজ খান বলেন, প্লাস্টিক বোতলে বালি ভরে বাড়ি নির্মাণে নির্মাণ খরচ কম। তবে এ ধরনের বাড়ি নির্মাণের বেলায় সুনির্দিষ্ট নীতিমালা ও কারিগরি সুবিধা-অসুবিধা বিষয়ে গবেষণা এবং নীতিমালা প্রণয়নের প্রয়োজন রয়েছে। দরিদ্র মানুষদের কাছে এ ধরনের বাড়ি মডেল হিসেবে কাজ করবে বলে আশাবাদী তিনি।

 

লালমনিরহাট

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০