ওয়াইল্ডলাইফ ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া (ডব্লিউআইআই), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ওয়াইল্ড টিমের নারী সদস্যরা একসঙ্গে গঙ্গা ও পদ্মায় ‘সি টু সোর্স: গঙ্গা’ শীর্ষক নদী অভিযান শুরু করেছে। টিমটি প্লাস্টিক দূষণ নিয়ে গবেষণা করবে।
কীভাবে উৎস থেকে প্লাস্টিক বর্জ্য সমুদ্রে চলে যায় ও প্লাস্টিক কীভাবে যাওয়া-আসা করে, কোথায় জমে ও সংযুক্ত হয় সেটা আরও ভালোভাবে বোঝা ও ডকুমেন্টেশনের পাশাপাশি এ সম্পর্কিত জ্ঞানের অভাব পূরণের জন্য ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক এ অভিযানের আয়োজন করেছে। অভিযানটি দুই নদীপ্রবাহের মধ্যস্থিত বিভাগ-রেখা বা ওয়াটারসেডে প্লাস্টিক বর্জ্য কীভাবে জমা হয় তা বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে নথিগত করা ও সর্বব্যাপী সমাধান বের করার এক অনন্য ও অদ্বিতীয় সুযোগ সৃষ্টি করবে।
একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক বর্জ্য সারা বিশ্বের জন্য একটি ভয়াবহ সমস্যা। প্রতি বছর আনুমানিক ৯ মিলিয়ন টন প্লাস্টিক সমুদ্রে জমা হয়। এর পেছনে নদীগুলো একটি বড় ভূমিকা রাখে। কারণ প্লাস্টিক অবশেষ নদী থেকে সমুদ্রে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে নদীগুলো কনভেয়র বেল্টের মতো কাজ করে।
‘সি টু সোর্স: গঙ্গা’ শীর্ষক অভিযানটি কয়েকটি আন্তর্জাতিক নদী বিষয়ক অভিযানের মধ্যে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের জন্য ‘প্ল্যানেট অর প্লাস্টিক?’ উদ্যোগের প্রথম অংশ। গত বসন্তে গঙ্গায় প্রাথমিক অভিযানের পর অভিযাত্রী দলটি বর্ষা মৌসুমে এ অভিযান পরিচালনার পরিকল্পনা করেছে যেন ঋতু পরিবর্তনের প্রভাব বোঝা যায়।
ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক সোসাইটির অপারেটিং প্রোগ্রামের ভাইস প্রেসিডেন্ট ভেলেরি ক্রেইগ বলেন, প্লাস্টিক বর্জ্য সংকট সমাধানে নতুন সল্যুশন সরবরাহ করতে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক বদ্ধপরিকর। এ ধরনের অভিযানের ফলে বিশ্বব্যাপী নারীরা বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল ও গণিত বিষয়ে এগিয়ে যাবে।
প্লাস্টিকের সমস্যা সমাধানে বিজ্ঞান ও তথ্যভিত্তিক স্থানীয় সল্যুশন তৈরির সক্ষমতা অর্জনে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের ফেলো জেনা জ্যামবেক ও হিদার কোন্ডেওয়ের নেতৃত্বে বিজ্ঞানী ও প্রকৌশলীদের ১৫ সদস্যের একটি দল আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করবে। ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের এক্সপ্লোরার এমিলি ডানকান, ইমোজেন নাপার ও লিলিগোল সেডাঘাট ও ভারতের ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ইউনিভার্সিটি অব এক্সিটার, ইউনিভার্সিটি অব জর্জিয়া, ইউনিভার্সিটি অব প্লেমাউথ, ডব্লিউএলএল, ওয়াল্ডটিম, জুলোজিক্যাল সোসাইটি অব লন্ডন ও অন্যান্য ইনস্টিটিউশনের প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত আন্তর্জাতিক দলের সঙ্গে কাজ করবেন জ্যামবেক ও কোল্ডেওয়ে। ইসাবেলা ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশের পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব কবীর বিন আনোয়ার প্রকল্পের প্রতি ইতোমধ্যে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। সমুদ্রে বর্জ্যরে উৎসমুখ থেকেই প্লাস্টিক দূষণ কমানোর প্রতিশ্রুতির অংশ হিসেবে পরিবেশবান্ধব উপায়ে সমুদ্রকে প্লাস্টিক মুক্ত করাই দলটির প্রধান লক্ষ্য।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের এ প্রকল্পে সহযোগিতা করতে পেরে আমরা আনন্দিত।
দ্য ‘সি টু সোর্স : গঙ্গা’ অভিযান প্লাস্টিক দূষণকে ভূমি, পানি ও মানুষ এ তিনটি মাত্রায় বিভক্ত করেছে। ভূমিতে কর্মরত দলটি বিভিন্ন সম্প্র্রদায়ের ব্যবহৃত প্লাস্টিকের পরিমাণ-সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ, ব্যবহারের পর প্লাস্টিক বর্জ্য সংগ্রহ ও পরিচালন পদ্ধতিসহ পরিবেশে প্লাস্টিকের ধরন ও গতিবিধি পরিমাপ করবে। পানিতে কর্মরত দলটি বাতাস, পানি, পলল ও নদীনির্ভর জীবদের মধ্যে প্লাস্টিক দূষণের মাত্রা সম্পর্কে অধ্যয়ন করবে। আর্থসামাজিক দলটি অভিযানের আওতাভুক্ত স্থানীয় সম্প্রদায়কে প্লাস্টিক দূষণ সম্পর্কে সচেতন করে তুলতে একটি জরিপ সম্পন্ন করবে। পাশাপাশি গৃহস্থালি প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও এ সমস্যার স্থানীয় সমাধান পদ্ধতি সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করবে।