পাখি দেখতে অনেকেই পছন্দ করেন। নানা জাতের পাখির সঙ্গে পরিচিত হতে বিভিন্ন জায়গায় ভ্রমণও করে থাকেন তারা। তাছাড়া ভ্রমণের স্থানগুলোয় যখন নানা জাতের নানা রঙের পাখি বিচরণ করতে দেখা যায়, তখন মনোমুগ্ধকর পরিবেশের সৃষ্টি হয়। ভাবুক হয়ে পড়েন পর্যটকরা। বিমোহিত হন তারা। প্রাণোচ্ছল হয়ে ওঠে তাদের মন। এমন পরিবেশ ভ্রমণপিপাসুদের বারবার না টেনে কি পারে! এমনই একটি পাখি লাল মাছরাঙা। এ পাখির আবাসস্থল সুন্দরবনে। বনটি পাখির জন্য তেমন বিখ্যাত না হলেও এখানে এমন অনেক পাখি রয়েছে, যা অন্য কোথাও দেখা যায় না। এদের মধ্যে অন্যতম এ লাল মাছরাঙা। বাংলাদেশের খুব পরিচিত ভ্রমণস্থান সুন্দরবন। এখানে ভ্রমণপিপাসুরা আসেন মূলত বন ও বিভিন্ন পশু দেখার জন্য। পাশাপাশি অতি সুন্দর এ পাখিটিও দেখে আসতে পারেন।
বিরল আবাসিক পাখি লাল মাছরাঙা। সুন্দরবন ছাড়া দেশের অন্য কোথাও এ পাখির দেখা মেলে না। পাখিটির ইংরেজি নাম ‘রাডি কিংফিশার’। বৈজ্ঞানিক নাম ‘হেলসিওন করোমান্ডা’। গোত্র ‘হালসিওনিদি’। অঞ্চলভেদে এরা ‘রাঙা মাছরাঙা ও লালচে মাছরাঙা’ নামেও পরিচিত। এ পাখিকে সাধারণত বিচরণ করতে দেখা যায় ভারতের সিকিম, আসাম, নাগাল্যান্ড, মণিপুর ও পশ্চিমবঙ্গে। এছাড়া নেপাল, ভুটান, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, লাওস, চীন, জাপান, কোরিয়া, তাইওয়ান, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন ও ইন্দোনেশিয়ায় এর সন্ধান মেলে। বিশ্বে বিপদমুক্ত হলেও বাংলাদেশে লাল মাছরাঙা সংকটাপন্ন। দেশের বন্য প্রাণী আইনে এ প্রজাতি সংরক্ষিত।
বিবরণ
লাল মাছরাঙা লম্বায় ২৫ থেকে ২৬ সেন্টিমিটার হয়ে থাকে। ওজন ৭৭ গ্রাম। টকটকে লালচে পাখি। দেহজুড়ে রয়েছে নানা রং। মাথার রং উজ্জ্বল লাল তামাটে। ঘাড় ও পিঠের ওপরের অংশ লালচে বাদামি। পিঠের মাঝ থেকে লেজের প্রান্ত পর্যন্ত ফিকে নীলচে-বেগুনি। গলার নিচ থেকে লেজের কাছাকাছি পর্যন্ত ফিকে লালচে। লেজের অপর পাশ সাদা। ঠোঁটের গোড়া প্রবাল লাল, ডগা গোলাপি লাল। পা ও পায়ের পাতা সিঁদুরে লাল। চোখের তারা গাঢ় বাদামি। স্ত্রী-পুরুষ দেখতে একই রকম। তবে অপ্রাপ্তবয়স্কদের রঙে পার্থক্য দেখা যায়। এদের কোমর থেকে লেজের ওপর পর্যন্ত গাঢ় নীল। গলা ও তলপেটের চারদিকে কালো বেড় রয়েছে।
স্বভাব
অন্য পাখিদের চেয়ে এ পাখি কিছুটা ব্যতিক্রমী। অন্য মাছরাঙা পাখির তুলনায় এরা দেখতে বেশ সুন্দর। পানি ও কাদার ওপরে শিকার করে থাকে। ওপর থেকে শিকারের আনাগোনা দৃষ্টিতে এলে দ্রুত ডানা ঝাপটে নিচে নেমে আসে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এরা একা বিচরণ করে থাকে। তবে মাঝেমধ্যে জোড়ায় দেখা যায়। ভয় পেলে কম্পিত সুরে ডাকে ‘টিটিটিটিটি’। মাঝে মাঝে ‘কুয়িররর-র-র-র-র’ সুরে গান গায়। মনোহর না হলেও সুরটা শুনতে মন্দ নয়। মন্দ নয় দেখতেও। তবে এদের দেখা পাওয়া যায় না সহজে। দেখা পাওয়ার চেয়ে ডাকটা কানে আসে বেশি। এরা মাটিতে গর্ত করে বা গাছের কোটরে বাসা বাঁধে। মাটির গর্ত নিজেরাই খোঁড়ে। গর্ত চওড়ায় পাঁচ সেন্টিমিটার ও দৈর্ঘ্যে ৫০ থেকে ১০০ সেন্টিমিটার হয়ে থাকে। সাধারণত সুন্দরবনের ভেতরে ছোট নদী বা খালের পাড়ে গাছের ডালে বসে শিকার খোঁজে। মৎস্যভুক পাখি এরা। এছাড়া ছোট কাঁকড়া, ফড়িং, বড় পোকা, ছোট ব্যাঙ প্রভৃতি শিকার করে।
প্রজনন
মার্চ থেকে এপ্রিল এদের প্রধান প্রজননের সময়। ডিম পাড়ে পাঁচ থেকে ছয়টি। ডিম ফোটায় ১৭ থেকে ২২ দিন।