আবাসিক পাখি। নাদুসনুদুস চেহারা। বসে থাকা অবস্থায় গড়ন ডিম্বাকৃতির দেখায়। দেখতে অনেকটা কোয়েলের মতো। এ পাখির বাংলা নাম ‘নীলাভবুক বটেরা’। ইংরেজি নাম: ‘ব্লু ব্রেস্টেড কোয়েল’ বা কিং কোয়েল। বৈজ্ঞানিক নাম ‘কটুরনিক্স চাইনেনসিস’। এরা ‘রাজবটেরা’ নামেও পরিচিত। বাংলাদেশে তিন প্রজাতির বটেরা নজরে পড়ে নীলাভবুক বটেরা, বৃষ্টি বটেরা বা চীনা বটেরা ও বড় বটেরা। এদের মধ্যে নীলাভবুক বটেরা জাতটিই বেশি দেখা যায়।
আবাসস্থল
‘নীলাভবুক বটেরা’ ঢাকা ও সিলেট বিভাগের তৃণভূমিতে দেখা যায়। বিশেষ করে সিলেটের চা বাগানের ভেতর পোকামাকড় খুঁজে বেড়াতে দেখা যায়। বাংলাদেশের পাশাপাশি ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, চীন, ফিলিপাইন ও ইন্দোনেশিয়ায় এ পাখির দেখা মেলে।
দৈহিক বর্ণনা
কোয়েলের মতো দেখতে এ পাখিটির দৈর্ঘ্য ১৪ সেন্টিমিটার। ওজন ৫০ গ্রাম। তুলতুলে ও গোলগাল পাখি। স্ত্রী-পুরুষ পাখির চেহারা ভিন্ন। পুরুষ পাখির কপাল, গলা, বুক ও পেট নীলচে ধূসর। মাথায় হালকা সাদা-কালো ডোরা দাগ রয়েছে। পিঠ লালচে-বাদামির মিশ্রণ। গলায় সাদা-কালো চওড়া দাগ। অপরদিকে স্ত্রী পাখির কপাল লালচে। ঘাড়ের নিচ থেকে ডানা পর্যন্ত ছিট দাগ। বুক ও বগলে কালো ডোরা। এদের তলপেটে তামাটে রং, তবে তা দেখা যায় না। এ পাখির পা হলদে।
জীবনচক্র
এরা মূলত আর্দ্র তৃণভূমিতে বিচরণ করতে পছন্দ করে। এ ছাড়া রাস্তার আশপাশের ঘন ঝোপজঙ্গলের ভেতর বিচরণ করে। খাবারের সন্ধানে বের হয় জোড়ায় কিংবা পারিবারিক দলে। খাবার খোঁজে মুরগির মতো মাটিতে আঁচড় কেটে কিংবা ঝরাপাতা উল্টিয়ে। এরা ডাকে ‘কুই কি কিউ’ সুরে। ভয় পেলে সুর পাল্টে যায়, তখন ‘টির..টির..টির..’ সুরে ডাকে। এদের প্রধান খাবার শস্যবীজ, পোকামাকড় প্রভৃতি। প্রজনন মৌসুম জ্যৈষ্ঠ থেকে ভাদ্র অর্থাৎ জুন থেকে আগস্টে। ঝোপজঙ্গলের ভেতর মাটির ওপর কিংবা গর্তে ঘাস ও লতাপাতা দিয়ে বাসা বাঁধে। এরা গাছে তেমন থাকে না। ডিম পাড়ে চারটি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১৮ থেকে ২০ দিন।
নীলাভবুক বটেরা দেখার জন্য সিলেটে বেড়াতে যেতে পারেন। সিলেটের দর্শনীয় স্থান দেখার পাশাপাশি এ পাখি সম্পর্কে ধারণা নিতে পারবেন। ছবি তুলে সংগ্রহে রাখতে পারেন।