ওবাইদুল আকবর রুবেল, ফটিকছড়ি (চট্টগ্রাম): হঠাৎ করে চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে বাড়ছে চোখ ওঠা রোগীর সংখ্যা। পুরো উপজেলায় প্রত্যেকটি এলাকায় এ রোগের প্রকোপ দেখা দিয়েছে। এছাড়া হাসপাতালেও বেড়েছে এ রোগীর সংখ্যা। প্রতি বছর গ্রীষ্মে এ ভাইরাসজনিত ছোঁয়াচে রোগের দেখা মিললেও এবার শরতে বেড়েছে এর প্রকোপ।
চক্ষু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কারও চোখে তাকালেই ‘চোখ ওঠা’ রোগ হয় না। তবে এ রোগ ছোঁয়াচে, এটির জন্য অ্যান্টিবায়োটিক ড্রপ ব্যবহার করতে হবে। চিকিৎসকরা বলছেন, গরমে আর বর্ষায় চোখ ওঠার প্রকোপ বাড়ে। একে বলা হয় কনজাংটিভাইটিস বা চোখের আবরণ কনজাংটিভার প্রদাহ। সমস্যাটি চোখ ওঠা নামেই পরিচিত। রোগটি ছোঁয়াচে। ফলে দ্রুত অন্যদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। কনজাংটিভাইটিসের লক্ষণ হলো চোখের নিচের অংশ লাল হয়ে যাওয়া, চোখে ব্যথা, খচখচ করা বা অস্বস্তি। প্রথমে এক চোখ আক্রান্ত হয়, তারপর অন্য চোখে ছড়িয়ে পড়ে। এ রোগে চোখ থেকে পানি পড়তে থাকে। চোখের নিচের অংশ ফুলে ও লাল হয়ে যায়। চোখ জ্বলে ও চুলকাতে থাকে। আলোয় চোখে আরও অস্বস্তি হয়।
কনজাংটিভাইটিস রোগটি আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শ থেকে ছড়ায়। রোগীর ব্যবহার্য রুমাল, তোয়ালে, বালিশ অন্যরা ব্যবহার করলে এতে আক্রান্ত হয়। এছাড়া কনজাংটিভাইটিসের জন্য দায়ী ভাইরাস বাতাসের মাধ্যমেও ছড়ায়। আক্রান্ত ব্যক্তির আশপাশে যারা থাকে, তারাও এ রোগে আক্রান্ত হয় বলে জানান চিকিৎসকরা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলা প্রতিটি এলাকায় ঘরে ঘরে চোখ ওঠা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশু ও বৃদ্ধসহ অনেকে। এছাড়া বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও হাটবাজারে অধিকাংশ মানুষের কনজাংটিভার প্রদাহ বা চোখ ওঠা রোগীর দেখা মেলছে। রোগটি ছোঁয়াচে হওয়ার ফলে দ্রুত অন্যদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ছে।
উপজেলার পাইন্দং ইউনিয়নের বেড়াজালী এলাকার বাসিন্দা জেবল হোসেন বলেন, কাল আমি চোখ ওঠা রোগে আক্রান্ত হই। পরে আমার পরিবারে ছোট নাতনিসহ আরও দুইজন সদস্য একই রোগে আক্রান্ত। তার মতো একই রোগে আক্রান্ত হয়েছে সুন্দরপুরের আহমদুল্লাহ। তিনি জানান, প্রথমে আমার চোখ ওঠে, পরে আমার পরিবারের সবার হয়ে যায়। এমনকি ছোট বাচ্চারাও আক্রান্ত হয়েছে। উপজেলা সদর বিবিরহাট ও নাজিরহাট পৌরসভার কয়েকটি ফার্মেসির মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত কয়েকদিনে আগের তুলনায় চোখের ড্রপের চাহিদা বেড়েছে দুই থেকে তিনগুণ। এছাড়া চশমা দোকানেও ভিড় বেড়েছে।
ফটিকছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নাবিল চৌধুরী বলছেন, ‘চোখ ওঠা’ ছোঁয়াচে রোগ। পরিবারের একজনের থেকে অন্যজনের হতে পারে। সুতরাং এসব ক্ষেত্রে রোগ প্রতিরোধের জন্য পরিবারের সবাই সচেতন হতে হবে, আর আক্রান্তরা উদ্বিগ্ন না হয়ে চক্ষু চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। পাশাপাশি বাসায় আইসোলেশনে থাকতে হবে। চোখের রোগের জন্য আমাদের আলাদা সেবা কর্নার আছে। আমরা সেখান থেকে সেবা দিচ্ছি।