Print Date & Time : 18 June 2025 Wednesday 12:45 am

ফটিকছড়ির ঘরে ঘরে জ্বর সর্দি-কাশির প্রকোপ

ওবাইদুল আকবর রুবেল, ফটিকছড়ি (চট্টগ্রাম): মিজানের বয়স সাত বছর। ওর জ্বর ছিল টানা পাঁচ দিন, সঙ্গে সর্দি-কাশিও ছিল। হঠাৎ জ্বর ১০২ ডিগ্রিতে উঠত। এ অবস্থায় চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার পাইন্দং ফকিরাচান এলাকার বাসিন্দা মো. নবী হোসেন তার ছেলেকে ভর্তি করান উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের শিশু ওয়ার্ডে।

তিনি জানান, চিকিৎসকের পরামর্শে তার ছেলের চিকিৎসা চলছে। তবে এখন জ্বর না থাকলেও কাশি রয়ে গেছে।

মিজানের মতো উপজেলার সব ঘরে সর্দি-কাশি-জ্বরের প্রকোপ চলছে। ঘরে-বাইরে অনেকে খুকখুক করে কাশছেন। কেউবা নাক টানছেন। চিকিৎসা কেন্দ্রগুলোয় জ্বর-সর্দি-কাশি এবং গায়ে-হাতে ব্যথা নিয়ে রোগীরা আসছেন।

উপজেলায় অস্বাভাবিকভাবে ঘরে ঘরে জ্বর, সর্দি-কাশি, গলাব্যথা ও শ্বাসকষ্টের রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। শিশু থেকে বৃদ্ধ কমবেশি সবাই আক্রান্ত হচ্ছেন। কারও হালকা জ্বর এসে কমে যাচ্ছে। কাও জ্বরের তীব্রতা বেশি। জ্বরের সঙ্গে কারও কারও সর্দি-কাশি দেখা গেছে। কাশি বেশ কয়েক দিন ভোগাচ্ছেও। গত এক সপ্তাহে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বহির্বিভাগে রোগীদের মধ্যে ৫০ শতাংশ জ্বরে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

হঠাৎ জ্বর-সর্দি-কাশির রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় উপজেলাজুড়ে আতঙ্ক বিরাজ করছে।

তবে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা বাড়ছে ও কমছে। এই রোদ, এই বৃষ্টি; এই গরম, এই ঠাণ্ডা। খেয়ালি এই আবহাওয়ার সঙ্গে বাড়ছে সর্দি-কাশি-জ্বরের মতো মৌসুমি রোগ। জ্বর-সর্দি-কাশির তীব্রতা থাকছে তিন থেকে সাত দিন। জ্বর সেরে গেলেও শুকনো কাশি ও দুর্বলতা ভোগাচ্ছে অনেককে।

তারা বলছেন, অন্যান্য ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো এ ক্ষেত্রেও একসঙ্গে পরিবারের একাধিক সদস্য জ্বর-সর্দি-কাশিতে ভুগছেন। অনেকের গলাব্যথাও হচ্ছে। এক্ষেত্রে বিচলিত হওয়া যাবে না। জ্বর কিংবা ঠাণ্ডা ও গলা খুসখুস মানেই কভিড নয়। জ্বর হলেই আতঙ্কিত না হয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ সব হাসপাতালের আউটডোরে বেশিরভাগ শিশু জ্বর-সর্দি-কাশি নিয়ে আসছে। হাঁচি-কাশির সঙ্গে শরীরে তীব্র ব্যথাও হচ্ছে।

স্থানীয় সংবাদকর্মী মোহাম্মদ জিপন উদ্দিন জানান, ‘গত কয়েক দিন ধরে জ্বর-সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত হয়েছি। চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ সেবন করছি। তবে প্রতিটি ঘরে ঘরে জ্বর-সর্দি-কাশির রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।’

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. অতনু চৌধুরী বলেন, ‘আসলে জ্বরের রোগি বাড়ছে। জ্বরটি হচ্ছে শরৎকালিন একটি জ্বর। এটি একটি ভাইরাস যা সহজে একই পরিবারের ৫ থেকে ৬ জনকে জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে। সাধারণত রোগিরা বর্হিবিভাগ থেকে চিকিৎসা নিয়ে চলে যাচ্ছে। তবে কিছু রোগি যাদের জ্বর বেশি আমরা তাদের ভর্তি করছি। যেহেতু এখন ডেঙ্গু ও করোনার সিজন তাই আগে থেকে টেষ্ট করে নিচ্ছি।’

উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. নাবিল চৌধুরী বলেন, আমরা গত মাসের পরিসংখ্যানে দেখলাম যে, আউটডোরে প্রতিদিন ৩শ’ থেকে সাড়ে তিনশ’ রোগি হয় যার মধ্যে অর্ধেকই জ্বর-সর্দিতে আক্রান্ত। বছরের এসময়ে সাধারণত এমন রোগ হয়।’ তাই আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।