Print Date & Time : 18 June 2025 Wednesday 5:12 pm

ফটিকছড়ি সড়কের ‘মহাযন্ত্রণা’ ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা!

ওবাইদুল আকবর রুবেল, ফটিকছড়ি (চট্টগ্রাম): নেই কোনো ড্রাইভিং লাইসেন্স, নেই ট্রেনিং। তারপরও চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির বিভিন্ন সড়ক থেকে মহাসড়কে দিব্যি দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। উপজেলা সদরসহ বিভিন্ন ইউনিয়নে তিন চাকার এ যানের সংখ্যা দিন দিন বাড়তে থাকায় এক দিকে যেমন বাড়ছে যানজট, তেমনি ঘটছে দুর্ঘটনা। জানমালের ক্ষতি হচ্ছে প্রতিনিয়ত। যত্রতত্র দাঁড়িয়ে যাত্রী নামানো-ওঠানো হয়। এতে প্রায়ই যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে সড়কে। দুর্ঘটনায় ঘটছে প্রাণহানি। অটোরিকশার কারণে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে জনজীবন। এ যেন মহাসড়কের এক মহা যন্ত্রণা। প্রকাশ্যে হাইওয়ে পুলিশ এবং ট্রাফিক পুলিশের সামনে দিয়ে হরহামেশা এসব অবৈধ অটোরিকশা চলাচল করলেও তারা কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেন না বলে দাবি সচেতন মহলের।

জানা যায়, ফটিকছড়ি ও নাজিরহাট পৌরসভার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও এলাকার সড়কে দিব্যি দাপিয়ে বেড়াচ্ছে সহস্রাধিক ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। উচ্চগতি সম্পন্ন এসব মোটরচালিত রিকশায় প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। তা ছাড়া এসব অটোরিকশার ব্যাটারি অবৈধ পন্থায় চার্জ করা হয়। তাতে বিদ্যুতের অপচয় বাড়ছে। যে কারণে অফ-পিক আওয়ারেও লো-ভল্টেজ, লোডশেডিং তথা বিদ্যুৎ সরবরাহে বিঘœ সৃষ্টি হচ্ছে।

এদিকে ওইসব ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইক সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাওয়ায় বিবিরহাট রোড, রাজঘাট, দরগাহ রোড, ঈদগাঁ রোড ও নাজিরহাট পৌরসভার ছকিনা কমিউনিটি সেন্টার সংলগ্ন, পেট্রোলপাম্প এলাকা, মেডিকেল রাস্তার

মাথাসহ বেশ কিছু এলাকায় বাণিজ্যিক ভিত্তিতে গ্যারেজ গড়ে উঠেছে। অনেক অটোরিকশা মালিক মাসিক চুক্তিতে ওইসব গ্যারেজে রেখে চার্জ দেয়া হয় বলে জানা গেছে।

পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তারা জানায়, এ উপজেলায় যে পরিমাণ ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও ইজিবাই চলাচল করছে এক একটি অটোরিকশা ও ইজিবাই ব্যাটারির ছয় ঘণ্টা চার্জ দিতে হয়। ৬ ঘণ্টা চার্জ দিলে গড়ে তিন ইউনিট বিদ্যুতের প্রয়োজন হয়।

সরেজমিনে দেখা গেছে, শত শত ব্যাটারিচালিত অবৈধ রিক্সা-অটোরিকশা মহাসড়কে চলাচল করছে। সড়কে এসব রিকশা-অটোরিকশা জটলা করে মহাসড়ক দখলে সৃষ্টি হচ্ছে যানজটের। ট্রাফিকের দায়িত্বরতদের সামনেই এসব তিন চাকার যান চলাচল এবং দীর্ঘ সময় যাত্রীর জন্য অপেক্ষা করলেও তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি।

মহাসড়কে তিন চাকার এসব ব্যাটারিচালিত রিকশা-অটোরিকশা চলাচলের কারণে প্রতিনিয়তই ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। এতে প্রাণহানিসহ আহতের ঘটনা ঘটছে হরহামেশাই। অনেকে পঙ্গুত্ববরণ করে অতি কষ্টে দিনাতিপাত করছেন।

ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালক মো. আনাম বলেন, দীর্ঘদিন বিদেশে ছিলেন। করোনা সময়ে দেশে ফিরে এসে একটি অটোরিকশা কেনা হয়। কেনার পর থেকে তিনি নিজেই এটি চালিয়ে আসছেন। আগে যেখানে বাড়ির ব্যবহারিক বিদ্যুৎ বিল আসতো আড়াশ থেকে ৩০০ টাকার মতো। কিন্তু অটোরিক্সা চার্জ দেয়ায় প্রতি মাসে বিল আসছে ১৬শ থেকে ১৮শ টাকা।

আরেক অটোরিকশা চালক মো. শামসুদ্দীন বলেন, ‘বাড়ির ব্যবহারিক বিদ্যুৎ থেকে রাতে ৫-৬ ঘণ্টা চার্জে দিলে ১২-১৪ ঘণ্টার মতো চালানো যায়। তবে বেশি পাওয়ারি ব্যাটারিগুলোতে চার্জ বেশি হয়, তাই বেশিক্ষণ চালানো যায়।’

গ্যারেজ মালিক মো. শহিদুল বলেন, তার গ্যারেজে মাসিক চুক্তিতে ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা, সিএসজি ও ভ্যান গাড়ি রাখা হয়। যাদের বাড়িতে জায়গা নেই বা নিরাপত্তার অভাব রয়েছে তারা এখানে রাখছেন বলে জানায়। অটোরিকশাগুলোর ব্যাটারিতে তার গ্যারেজ থেকে চার্জে দেয় চালকরা।’

বাস ও ট্রাক চালকরা জানায়, অটোরিকশা হঠাৎ করে রাস্তার মাঝখানে থেমে যাওয়া কিংবা হঠাৎ করে রাস্তার মাঝখানে চলে আসার কারণেই ঘটে দুর্ঘটনা। ছোট গাড়ি হওয়ার পরও তারা বড় গাড়িকে ওভারটেক করতে গিয়ে বিপরীত দিয়ে আসা গাড়ির মুখোমুখি সংঘর্ষে প্রাণহানির ঘটনা ঘটে।

এ ব্যাপারে নজিরহাট হাইওয়ে থানার ওসি আজিল মাহমুদ বলেন, ‘আমি নতুন এসেছি। এসব অবৈধ তিন চাকার গাড়ির বিরুদ্ধে দ্রুত পদক্ষেপ নেবো। যাতে মহাসড়কে এসব যান চলাচল করতে না পারে।’