নিজস্ব প্রতিবেদক: কবি ও কলামিস্ট ফরহাদ মজহারকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। রাজধানীর শ্যামলীর আদাবরের নিজ বাসা থেকে গতকাল সোমবার ভোর ৫টার দিকে বের হওয়ার পর থেকে তিনি নিখোঁজ রয়েছেন বলে পুলিশ ও তার পরিবার সূত্রে জানা গেছে।
গতকাল সোমবার বেলা ৩টায় তেজগাঁও থানার পুলিশের উপ-কমিশনার বিল্পব কুমার সরকার বলেন, তার স্ত্রী ফরিদা আখতার তাদের কাছে অভিযোগ করেছেন, ফরহাদ মজহারকে অপহরণ করা হয়েছে। সেই অনুযায়ী তিনি তার স্ত্রীকে আদাবর থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করতে বলেছেন। বিডিনিউজ
এদিকে ফরহাদ মজহারকে অপহরণে সরকারি কোনো সংস্থা জড়িত বলে সন্দেহ করছে বিএনপি। গতকাল বিকালে নয়াপল্টনে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভী বলেন, প্রখ্যাত কলামিস্ট, গবেষক, কবি এবং প্রথিতযশা বুদ্ধিজীবী ফরহাদ মজহারের পরিবার সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যোগাযোগ করে যে তথ্যটুকু পেয়েছি, তা হƒদয়বিদারক, অমানবিক এবং সারা জাতির জন্য ভীতি ও শঙ্কার। আমরা যেটা মনে করি, সরকারের অজান্তে এই ঘটনা ঘটেনি। সরকারের কোনো এজেন্সি বা কোনো টিম এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত।
এদিকে পুলিশ বলছে, খুলনাঞ্চলে ফরহাদ মজহারের অবস্থান শনাক্ত করেছেন তারা। উদ্ধারের চেষ্টা চালাচ্ছে। আর রিজভী বলেন, অপহরণের ২৪ মিনিট পর ফরহাদ মজহারকে দিয়ে বলানো হয়, আপনারা টাকা জোগাড় করেন এবং সেই টাকা দিলে পরে ছেড়ে দেওয়া হবে। একজন সাংবাদিক জানিয়েছেন, এই টাকার পরিমাণ প্রায় ৩৫ লাখ টাকা। এরপর পুলিশকে ঘটনা জানানো হলে তারা যে মোবাইল নম্বরে যোগাযোগ করেছেন, তা ট্র্যাক করার চেষ্টা করে। তারা ট্র্যাক করে দেখেছেন, কখনও গাড়িটি মানিকগঞ্জের দিকে আছে আবার পরে বলেছেন, মাগুরা-যশোরের দিকে আছে। বিষয়টা রহস্যজনক।’
পরে অপহƒত কবি-কলামিস্ট ফরহাদ মজহারের অবস্থান খুলনাঞ্চলে বলে জানতে পেরেছে পুলিশ। তাকে উদ্ধারের চেষ্টা চলছে বলেও জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার।
পুলিশের উচ্চ পর্যায়ের এক কর্মকর্তা বলেন, দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের দিকে তার অবস্থান শনাক্ত হয়েছে। আমরা সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে রাখছি। আমরা তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে তাকে উদ্ধারের চেষ্টা চালাচ্ছি। তবে বিষয়টি এখনও বেশ রহস্যজনক।
সকাল ১০টার দিকে ফরহাদ মজহারের এক আত্মীয় আদাবর থানায় গিয়ে মৌখিক অভিযোগ জানানোর পর বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধানে নামে পুলিশ। আদাবর থানার এসআই মহসিন আলী জানান, ফরহাদ মজহারের একজন আত্মীয় সকাল ১০টার দিকে থানায় আসেন।
তিনি বলেছেন, ফরহাদ মজহার কোনো একজনের ফোন পেয়ে ভোর সাড়ে ৪টা থেকে ৫টার মধ্যে বাসা থেকে বের হয়ে যান। পরে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে তিনি নিজেই স্ত্রীকে ফোন করে ৩৫ লাখ টাকা জোগাড় করতে বলেন।
ফরহাদ মজহার থাকেন শ্যামলী রিংরোডের হক গার্ডেন নামের একটি ভবনে। আদাবর থানার ওসিসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সেখানে গেছেন। ফরহাদ মজহারের স্ত্রী ফরিদা আখতার এ বিষয়ে কথা বলতে চাননি।
তাদের পারিবারিক বন্ধু পরিচয় দিয়ে গৌতম দাশ বলেন, ফরহাদ মজহারকে ভোরে কয়েকজন ডেকে নিয়ে যায়। ২৪ মিনিট পর তিনি টেলিফোনে বলেছেন, ‘আমাকে তুলে নিয়ে যাচ্ছে’।
এসআই মহসীন বলেন, ‘তার স্ত্রী বলেছেন তিনি সকাল ৫টা ৫ মিনিটে বের হয়েছিলেন। আমরা সিসিটিভি ফুটেজে দেখেছি, তিনি ৫টা ২৫ মিনিটে বের হয়েছেন।’
এর আগে ২০১৩ সালে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে শাহবাগে গড়ে ওঠা গণজাগরণ আন্দোলনের সমালোচক ফরহাদ মজহার বিভিন্ন বক্তব্যের জন্য আলোচিত।