প্রতিনিধি, ফরিদপুর: চলতি বছরে ফরিদপুরে মুড়িকাটা পেঁয়াজের আবাদ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের নির্ধারিত লক্ষমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে, যার ফলশ্রুতিতে উৎপাদনের লক্ষমাত্রাও ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা কৃষক ও কৃষি কর্মকর্তাদের।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, ফরিদপুরের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে জেলায় পাঁচ হাজার হেক্টর জমিতে মুড়ি কাটা পেঁয়াজ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হলে বছরজুড়ে পেঁয়াজের বাজারমূল্য চড়া থাকায় চাষিরা মুড়ি কাটা পেঁয়াজ আবাদে ঝুঁকে পড়ে। এতে জেলায় মুড়িকাটা পেঁয়াজের আবাদ তিনশ হেক্টর বেড়ে পাঁচ হাজার তিনশ হেক্টরে দাঁড়ায়।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, ফরিদপুরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মো. রফিকুল ইসলাম জানান, এ বছর মৌসুমের শুরুতে প্রয়োজনীয় বৃষ্টিপাত থাকায় অনেকেই যথাসময়ে পেঁয়াজ রোপণ করতে পেরেছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলন ও মান ভালো হয়েছে উল্লেখ করে তিনি জানান, পাঁচ হাজার হেক্টর জমিতে আবাদের বিপরীতে ৭৫ হাজার মোট্রক টন পেঁয়াজ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়। কিন্তু আবাদের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি ফলন ভালো হওয়ায় এ বছর উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা লাখ টন ছুয়ে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
তিনি আরও জানান, সারাদেশের পেঁয়াজের চাহিদা বছরজুড়ে থাকে ২৮ লাখ মেট্রিক টন। যার মধ্যে ফরিদপুর জেলার মানুষের কাছে মসলা জাতীয় এ পণ্যের চাহিদা রয়েছে ৩০ হাজার মেট্রিক টন।
তিনি জানান, মুড়িকাটা ও হালি পেঁয়াজ সব মিলিয়ে জেলায় উৎপাদন হয় প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ মেট্রিক টন, যা দেশের মোট চাহিদার ২০ শতাংশ।
ওই কৃষিবিদ আরও জানান, এতদাঞ্চলের কৃষকরা আগেভাগেই মুড়িকাটা পেঁয়াজের আবাদ করায় ডিসেম্বরের শুরু থেকেই বাজারে উঠতে থাকে মুড়িকাটা পেঁয়াজ। কিন্তু শুক্র ও শনিবারের দুই দিনের বৃষ্টিপাতের কারণে পেঁয়াজের জমি থেকে পেঁয়াজ তোলা সাময়িকভাবে বন্ধ রয়েছে, কয়েক দিন রোদ হলে ফের জমি থেকে পেঁয়াজ তুলবেন চাষিরা। এতে ডিসেম্বরের মাঝামাঝিতে বাজারে রাজত্ব করবে এই পেঁয়াজ।
এদিকে ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. সোহেল মিয়া জানান, এই মুহূর্তে বাজারে মূল্য বেশি থাকায় জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় মূল্য নিয়ন্ত্রণে অভিযান পরিচালনার পাশাপাশি সচেতন করা হচ্ছে ব্যবসায়ীদের। তিনি ধারণা করেন, বাজারে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত পেঁয়াজের সরবরাহ বাড়লে মূল্যে প্রভাব পড়বে।
ফরিদপুরের সদর উপজেলার পেঁয়াজচাষিরা জানান, পেঁয়াজের বাজারমূল্য ভালো থাকায় তারা জমি থেকে পেঁয়াজ তুলতে শুরু করলেও বৃষ্টির কারণে তুলতে পারছেন না। চাষিদের দাবি সব ঠিকঠাক থাকলে ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে বাজারে রাজত্ব করা এই পেঁয়াজ ফেব্রুয়ারি ছাড়িয়ে মার্চ মাস পর্যন্ত ভোক্তার চাহিদা মেটাবে।
কৃষকদের দাবি, ডিজেল, সার ও ওষুধসহ প্রয়োজনীয় কৃষি উৎপাদন সংশ্লিষ্ট উপকরণের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় এ বছর বেড়েছে মুড়িকাটা পেঁয়াজের উৎপাদন খরচ। তাদের দাবি, এই পেঁয়াজ বাজারে ওঠার পর বর্তমান মূল্যে প্রভাব পড়বে। তবে অতিমাত্রায় মূল্য কমে গেলে প্রান্তিক চাষিরা ক্ষতিতে পড়বেন বলেও মনে করেন তারা।