প্রতিনিধি, ফরিদপুর: প্রায় ১৪ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ফরিদপুর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সাবেক সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান (৪৫) ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ফরিদপুর সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে দুটি মামলা হয়েছে। এতে সিদ্দিকের নামে ১১ কোটি ৫৪ লাখ ২৭ হাজার ১৯৫ টাকা এবং তার স্ত্রী মুসরীন আক্তারের নামে ২ কোটি ৩৫ লাখ ৪১ হাজার ১ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ থাকার অভিযোগ আনা হয়েছে।
দুদকের উপপরিচালক রেজাউল করিম গতকাল সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে এ দুটি মামলা করেন। মামলার এজাহারে বলা হয়, ‘সিদ্দিকুরের স্ত্রী মুসরীন একজন গৃহিণী। তার নিজস্ব কোনো ব্যবসা বা আয়ের উৎস পাওয়া যায়নি। ২০১২-১৩ থেকে ২০২১-২২ করবর্ষে তার স্বামীর অবৈধভাবে অর্জিত সম্পদই তার নামে দেখানো হয়েছে। স্বামীর প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় তিনি জ্ঞাত আয়বহির্ভূত ২ কোটি ৩৫ লাখ ৪১ হাজার ১ টাকা সম্পদের মালিক হয়েছেন। অন্যদিকে সিদ্দিকুর রহমান ১৯৯৬-৯৭ থেকে ২০২১-২২ করবর্ষ পর্যন্ত ১১ কোটি ৫৪ লাখ ২৭ হাজার ১৯৫ টাকা জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদের মালিক হয়েছেন।
দুদকের প্রাথমিক তদন্তে বলা হয় মো. সিদ্দিকুর রহমান ও তার স্ত্রী মুসরীন আক্তার বিভিন্ন দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ উৎস থেকে এই ১৩ কোটি ৮৯ লাখ ৬৮ হাজার ১৯৬ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন করে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪-এর ২৭ (১) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।
জানতে চাইলে সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে এর আগে ১৯টি মামলা হয়েছে। প্রমাণ না পাওয়ায়, সাক্ষী না পাওয়ায় আদালত আমাকে অব্যাহতি দিয়েছেন। আমি দুদকের বড় একটি চাহিদা পূরণ করিনি বলে আমার ও আমার স্ত্রীর নামে এ মামলা দেয়া হয়েছে। দুদকের মামলা নিয়ে আমি শঙ্কিত নই। আমার ট্যাক্স ফাইলে আমার সম্পদের সব হিসাব রয়েছে।’
সিদ্দিকুরের অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে এ দুটি মামলার বাদী দুদক ফরিদপুরের উপপরিচালক রেজাউল করিম বলেন, সিদ্দিকুর ও তার স্ত্রীর আয়বহির্ভূত সম্পত্তি থাকায় এ মামলা করা হয়েছে। উৎকোচ নেয়ার অভিযোগ সম্পর্কে তিনি বলেন, এ-জাতীয় অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই। কারও বিরুদ্ধে মামলা হলে তিনি বাঁচার জন্য অনেক কথাই বলে থাকেন।
সিদ্দিকুর রহমান ফরিদপুর শহরের গুহলক্ষ্মীপুর মহল্লার বাসিন্দা। ফরিদপুরে সন্ত্রাস ও দুর্নীতি দমনে ২০২০ সালের ৭ জুন পুলিশের বিশেষ অভিযান শুরু হয়। সে সময় ফরিদপুর-৩ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য খন্দকার মোশাররফের সাবেক এপিএস এএইচএম ফোয়াদসহ তার বেশ কয়েকজন ঘনিষ্ঠ সহচর গ্রেপ্তার হন। সিদ্দিকুর রহমান ফোয়াদের ঘনিষ্ঠজন ছিলেন। ওই ঘটনার পর থেকে সিদ্দিকের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা হয় এবং বেশ কয়েকবার তাকে কারাগারে যেতে হয়। এ ছাড়া খন্দকার মোশাররফের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত দুই ভাই শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন বরকত ও ফরিদপুর প্রেস ক্লাবের সভাপতি ইমতিয়াজ হাসান রুবেলের নামে ঢাকার কাফরুল থানায় আড়াই হাজার কোটি টাকা পাচার অভিযোগে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে মামলা হয়। এই মামলার সম্পূরক অভিযোগপত্রে সিদ্দিকুর রহমানের নাম রয়েছে।