মনিরুল ইসলাম টিটু, ফরিদপুর : আবহাওয়া পরিবর্তনের ফলে ঠাণ্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা বাড়ছে প্রতিদিনই। ফরিদপুরের হাসপাতালগুলোতে প্রতিদিন সহস াধিক নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, সর্দি-কাশি ও জ্বরে আক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে শিশু রোগীর সংখ্যা বেড়ে হয়েছে দ্বিগুণ।
ফরিদপুর সদরের ‘ডা. জাহেদ মেমোরিয়াল শিশু হাসপাতাল’ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ছাড়াও বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে শিশুদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। অনেক শিশু ঠাণ্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হওয়ায় অভিভাবকেরা চিন্তিত হয়ে পড়েছেন।
গত শনিবার সকালে সরেজমিনে ফরিদপুরের ডা. জাহেদ মেমোরিয়াল শিশু হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালে ঠাণ্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত শিশুদের নিয়ে অভিভাবকদের উপচে পড়া ভিড়। বৃহত্তর ফরিদপুরের বিভিন্ন জেলা থেকে এসেছেন তারা। নেবুলেইজার দিয়ে শিশুদের শ্বাস-প্রশ্বাস নেয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। আক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসক ও নার্সদের।
ডা. জাহেদ মেমোরিয়াল শিশু হাসপাতালের স্বাস্থ্য সহকারী মো. টিটু মণ্ডল জানান, হাসপাতালে ঠাণ্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত শিশুদের ভিড় বাড়ছে। প্রতিদিন আউটডোরে ৮০০ থেকে ৮৫০ জন শিশুকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। এছাড়া প্রতিদিন ৮০ থেকে ৮৫ জন শিশুকে হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। শিশুদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে আমাদের।
ফরিদপুর সদর হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স গোলাপী বেগম জানান, বর্তমানে হাসপাতালে ঠাণ্ডা ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ১৭৭ জন শিশু ভর্তি রয়েছে। প্রতিদিনই আক্রান্ত শিশু ভর্তি হচ্ছে, আবার কিছু শিশু সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে যাচ্ছে।
শরীয়তপুর থেকে আসা সালমা বেগম বলেন, আমার বাচ্চার বয়স ৮ মাস। হঠাৎ করেই ঠাণ্ডা লেগেছে। প্রাথমিকভাবে শরীয়তপুরে চিকিৎসা করিয়েছিলাম, কিন্তু কমেনি। শ্বাস নিতে সমস্যা হচ্ছিল, সে কারণে শিশু হাসপাতালে নিয়ে এসেছি। ডাক্তার দেখিয়েছি, ডাক্তার বলেছে হাসপাতালে ভর্তি করতে। ভর্তি করেছি চিকিৎসা চলছে।
ফরিদপুর সদর উপজেলার কানাইপুর থেকে আসা সালাম শেখ বলেন, আমার ছেলের বয়স দুই বছর। দুই দিন হলো ঠাণ্ডা লেগেছে, সঙ্গে ডায়রিয়া। সকালে শিশু হাসপাতালে এনে ছেলেকে ডাক্তার দেখিয়েছি। ওষুধ লিখে দিয়েছে, এখন বাড়ি নিয়ে যাচ্ছি।
মাদারীপুরের রাজৈর থেকে আসা শারমিন আক্তার বলেন, আমার ৯ মাস বয়সী মেয়েকে নিয়ে এসেছি ডাক্তার দেখাতে। ঠাণ্ডা লেগেছে, শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। ডাক্তার দেখিয়েছি, ভর্তি করতে বলেছে। ডাক্তার বলেছে, কয়েকদিন সময় লাগছে, ঠিক হয়ে যাবে।
ডা. জাহেদ মেমোরিয়াল শিশু হাসপাতালের নবজাতক ও শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. পার্থ প্রতিম শিকদার বলেন, রাতে ঠাণ্ডা পড়ায় শিশুরা নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, সর্দি-কাশি ও জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে। তবে আগের বছরের তুলনায় এবারের ঠাণ্ডাজনিত রোগ সেরে উঠতে একটু সময় লাগছে। তিনি আরও বলেন, বর্তমানে শিশুদের আক্রান্তের হার অনেক বেশি। চিকিৎসা দেয়ার পাশাপাশি অভিভাবকদের বিভিন্ন নিয়ম অনুসরণ করতে বলা হচ্ছে। তবে চিন্তার কোনো কারণ নেই।
ডা. জাহেদ মেমোরিয়াল শিশু হাসপাতালের সাধারণ সম্পাদক মো. সালাহউদ্দিন ফরিদ বলেন, গত এক সপ্তাহে ঠাণ্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে। প্রতিদিন ৮০০ থেকে ৮৫০ জন শিশুকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। গত সপ্তাহে ৫ হাজার ৬৬৫ জন শিশুকে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। এছাড়া প্রতিদিন ৮০ থেকে ৮৫ জন শিশুকে ভর্তি করে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, হাসপাতালে বর্তমানে ৩০ জন মেডিকেল অফিসার, ৬ জন কনসালটেন্ট ও ৮৮ জন নার্স কর্মরত রয়েছেন। প্রতিদিন সকালে আউটডোরে ৫ জন চিকিৎসক চিকিৎসা দিয়ে থাকেন। হাসপাতালে বেড রয়েছে ১০০টি। এছাড়া ৪০টি বেড রয়েছে দরিদ্র শিশুদের জন্য। যাদের বিনামূল্যে খাবার ও চিকিৎসা হাসপাতালের পক্ষ থেকে প্রদান করা হয়। বর্তমানে রোগীর চাপ বেড়ে যাওয়ায় রোগীদের সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসক ও নার্সদের।