আমন আবাদ

ফলন ভালো হলেও দুশ্চিন্তায় যশোরের কৃষকরা

প্রতিনিধি, যশোর: আমন ধান কাটার ধুম লেগেছে যশোরের কৃষিজমিতে। ধান কেটে ঘরে ওঠানো ও মাড়াইয়েও ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় চলতি বছর ধানের ফলন হয়েছে ভালো। ফলন ও দাম দুই-ই ভালো। তবে শেষমেষ উৎপাদন খরচ মেটাতে গিয়ে কৃষকের মুখে কালো মেঘের ছায়া নেমে আসছে। সার-কীটনাশক ও শ্রমিক খরচের বেড়ে যাওয়াই এর কারণ বলছেন কৃষকরা।

যশোরের আট উপজেলার বিস্তৃত ফসলের জমিতে এখন ধান কাটা আর মাড়াইয়ে ব্যস্ত কৃষকরা। বাঘারপাড়া উপজেলার সিলুমপুর গ্রামের কৃষক বদর উদ্দীন মণ্ডল বলেন, এ বছর পাঁচ বিঘা জমিতে আমন আবাদ করেছিলাম। আবহাওয়া অনুকূলে হওয়ায় ফলন ভালো হয়েছে। ইতোমধ্যে ক্ষেতের ধান কেটে উঠানে এনেছেন তিনি। এখন চলছে মাড়াইয়ের কাজ।

তিনি বলেন, এ বছর ধানের ফলন ও দাম দুই-ই ভালো। তবে উৎপাদন খরচ বেড়েছে কয়েকগুণ। অন্যান্য বছর ৩৩ শতাংশের এক বিঘা জমিতে আমন ধান আবাদ করতে খরচ হতো ৯ থেকে ১০ হাজার টাকা। এবার সেখানে খরচ হয়েছে প্রায় সাড়ে ১৩ হাজার টাকা। যে কারণে বাজারে ধানের দাম ভালো পেলেও উৎপাদন খরচের কারণে লাভ হচ্ছে যৎসামান্য।

একই এলাকার কৃষক মোতাচ্ছিম বিল্লাহ বলেন, এক বিঘা জমিতে আমন ধান চাষ করতে প্রায় ১৪ হাজার টাকা খরচ হয়। এর মধ্যে জমিতে ধান লাগাতে ১২০০, আগাছা পরিষ্কার করতে ১০০০, সার ৩০০০, সেচ খরচ খরচ ৩০০০, জমি থেকে ধান কেটে ঘরে তুলে বাজারে নেয়া পর্যন্ত পাঁচ হাজার টাকা খরচ হয়। এর সঙ্গে রয়েছে ধানের চারা বাবদ ৫০০ টাকা। সব মিলিয়ে ১৩ থেকে সাড়ে ১৩ হাজার টাকা খরচ হয়। অথচ এর আগের বছরে উৎপাদান খরচ এর চেয়ে অনেক কম ছিল।

সদর উপজেলার ইছালী এলাকার কৃষক হাদিজ্জামান মিলন বলেন, ধানের বাজার আপাতত ভালো। বাজারে এ মুহূর্তে গুটি স্বর্ণ বিক্রি হচ্ছে ৯৭০ থেকে ৯৮০ টাকা মণ, হাবু ধান ১৩৪০ থেকে ১৩৬০, জিরে মিনিকেট (পুরোনো) ১৪০০ ও ব্রিধান-৪৯ এক হাজার ৭০ থেকে ১১০০ টাকায়। এ দামে ধান বিক্রি করলে আমরা কিছুটা লাভ করতে পারব। তবে সামনে বাজারে পর্যাপ্ত পরিমাণে নতুন ধান ওঠবে, তখন দাম পড়ে যাওয়ার শঙ্কায় আছি।

তিনি আরও বলেন, সাধারণত কৃষক আমন আবাদ তুলে সামনে বোরোর খরচ সংগ্রহ করে। কিন্তু বর্তমান দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে আমরা আমন আবাদ করে সামান্য লাভ করায় বোরোর জন্য কোনো টাকা বাচাতে পারছি না।

সদর উপজেলা ও বাঘারপাড়া এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, বিস্তীর্ণ মাঠে কৃষক ধান কাটার কাজে ব্যস্ত রয়েছেন। কেউ ধান কাটছেন আবার কেউ আঁটি বাঁধছেন। আবার কেউ মাথায় বা গরুর গাড়িতে করে তাদের ধান বাড়ির উঠানে নিয়ে যাচ্ছেন। সদর উপজেলার লেবুতলা এলাকার কৃষক আমজাদ হোসেন বলেন, অন্যান্য বছর প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে আমন মৌসুমে ধান ঘরে তুলতে বেগ পেতাম। কিন্তু এ বছর ধানকাটার উপযুক্ত সময়ে আবহাওয়া অবিকল চৈত্রের মতো। যে কারণে ধান কেটে মাড়াই করে তা শুকিয়ে বাজারে তুলতে কোনো অসুবিধা হচ্ছে না।

তিনি আরও বলেন, আমাদের এলাকায় এখন পর্যন্ত যারা ধান কেটে মাড়াই করতে পেরেছেন তারা বিঘাপ্রতি ২০ থেকে ২২ মণ করে ফলন পেয়েছেন। আমনের এমন ফলন কৃষকের জন্য খুবই স্বস্তির বলে তিনি জানান। এ বছর কভিডের কারণে নানা সংকটের মধ্যে দিয়ে ধান চাষ করতে হয়েছে। এখন যদি ধানের ন্যায্য দাম বহাল না থাকে তাহলে চরম ক্ষতিতে পড়বেন কৃষক।

যশোর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা দীপঙ্কর কুমার দাস বলেন, যশোরে চলতি বছর আমনের বাম্পার ফলন হয়েছে। জেলায় মোট এক লাখ ৩৮ হাজার ৯৪৫ হেক্টর আমন আবাদ হয়েছে। ইতোমধ্যে আট উপজেলার ৯০ শতাংশ আমন ধান কেটে কৃষক ঘরে তুলেছেন।

তিনি আরও বলেন, আবহাওয়ার আগাম বার্তা যা বলছে তাতে আশা করা যায় সামনে বড় ধরনের কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ হবে না। ফলে

আর এক সপ্তাহের মধ্যে নির্বিঘেœ কৃষক তাদের কষ্টার্জিত ফসল সহজে ঘরে তুলতে পারবেন। এ বছর আমনের ভালো ফলন ও দাম নিয়ে কৃষক লাভবান হবেন।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০