ফলোঅন এড়ানোর লড়াইয়ে বাংলাদেশ

ক্রীড়া প্রতিবেদক: নিউজিল্যান্ড সফর থেকে চোটের সঙ্গে লড়াই করছেন তিনি। যা একটুখানি উঁকিও দিয়েছিল হায়দরাবাদ টেস্টের তৃতীয় দিনের শেষবেলায়। ইশান্ত শর্মার বলে হাতের আঙুলে আঘাত পেয়েছিলেন মুশফিকুর রহিম। কিন্তু তাতে দমে জাননি। পরের বলেই হাঁকিয়েছেন চার। গতকাল সামনে থেকে দলকে নেতৃত্ব দিয়ে ঠিক যেন এভাবেই খেলেন গেলেন টেস্ট অধিনায়ক। তার অপরাজিত ৮১ রানে ভর করে ফলোঅন এড়ানোর কঠিনতর লক্ষ্যে লড়ছে বাংলাদেশ। সঙ্গে রয়েছেন মেহেদী হাসান মিরাজ। ৬ উইকেটে ৩২২ রান তুলে দিন শেষ করেছে বাংলাদেশ। ভারতের চেয়ে এখনও সফরকারীরা পেছনে ৩৬৫ রান। স্বাগতিকদের দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে পাঠাতে টাইগারদের আরও করতে হবে ১৬৫ রান।

অধিনায়কত্বের সঙ্গে উইকেটের পেছনের দায়িত্ব নিয়ে বেশ কয়েকবারই প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছেন মুশফিকুর রহিম। চলতি হায়দরাবাদ টেস্টেও যা পিছু ছাড়েনি। সমালোচকদের জবাব দেওয়ার জন্য এমন একটা ইনিংসই হয়তো দরকার ছিল মুশির, যা গতকাল করলেন তিনি। শুধু এখানেই থেমে থাকেনি। ব্যাট হাতে দলকে দেখাচ্ছেন পথও। আর তাকে যোগ্য সঙ্গ দিয়ে যাচ্ছেন মিরাজ। সপ্তম উইকেটে দিন শেষে এ জুটি অবিচ্ছিন্ন ১১৮ রানে।

হায়দরাবাদ টেস্টে অনন্য মাইলফলকে পৌঁছেছেন মুশফিকুর রহিম। বাংলাদেশের চতুর্থ ব্যাটসম্যান হিসেবে টেস্টে তিন হাজারি ক্লাবে জায়গা করে নিয়েছেন এ ডানহাতি ব্যাটসম্যান। তার আগে রয়েছেন সাকিব আল হাসান, তামিম ও সাবেক অধিনায়ক হাবিবুল বাশার।

ভারতে দেওয়া বিশাল রানের বোঝা সামলে গিয়ে ১০৯ রানের চার উইকেট হারিয়ে বসে বাংলাদেশ। ঠিক তখনই ব্যাটিংয়ে নামেন মুশফিক। অন্য প্রান্তে ছিলেন সাকিব আল হাসান। মূলত এ দুজনই সফরকারীদের ম্যাচে ফেরার ইঙ্গিত দেন। ভারতীয় বোলারদের শুরু থেকে মেরে খেলেছেন সাকিব। অন্য প্রান্তে মুশি ছিলেন রক্ষণাত্মক। তবে সুযোগ পেলে তিনিও ছাড়েননি স্বাগতিক বোলারদের। পঞ্চম উইকেটে দারুণ খেলছিলেন তারা। দলীয় স্কোরের সঙ্গে তারা যোগ করেন ১০৭ রান। ঠিক এ সময় রবিচন্দ্রন অশ্বিনের বলে অযথা তুলে মারতে গিয়ে মিড অনে উমেশ যাদবের হাতে ধরা পড়েন। আউট হওয়ার আগে ১০৩ বলে ১৪টি চারে সাজানো ৮২ রান করেন তিনি। বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি সাব্বির রহমানের ইনিংস। অথচ ৩৫ বলে ১৬ রান করে ভালো একটা ইনিংস খেলার ভিত মোটামুটি তৈরিই করে ফেলেছিলেন তিনি। কিন্তু রবীন্দ্র জাদেজার বলে এলবিডব্ল– হয়ে শেষ হয় তার ইনিংসটি। ২৩৫ রান তুলতেই ৬ উইকেট নেই ঠিক এ সময় মুশফিকের প্রতিরোধ-লড়াইয়ের সঙ্গী মিরাজ।

এর আগে দিনের শুরুটা হয়েছিল তামিম ইকবালের রানআউটের মধ্য দিয়ে। ভুবনেশ্বর কুমারের করা দিনের তৃতীয় ওভারের চতুর্থ বলটি স্কয়ার লেগে ঘুরিয়েছিলেন মুমিনুল হক। উমেশ যাদবের হাতে বল রেখে দ্বিতীয় রান নিতে গিয়েই মুমিনুলের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতে রানআউট তামিম। সকালের দিকে দারুণ বল করছেন ভারতীয় পেসার উমেশ যাদব। তবে তার বল ভালোমতোই সামলে ছিলেন সফরকারী ব্যাটসম্যান।

লড়াইয়ে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদও। কিন্তু মুমিনুলের মতো থিতু হয়ে খেলতে গিয়েই কাটা পড়লেন এলবিডব্ল–র ফাঁদে। তবে ঠিকই ম্যাচের হাল ধরেছেন মুশফিকুর রহিম। এখন দেখার বিষয় মিরাজকে নিয়ে আজ কতটুকু এগোতে পারেন বাংলাদেশের টেস্ট অধিনায়ক। তাই দেখার জন্য সকাল থেকেই টাইগার সমর্থকরা বসে যাবেন টিভি সেটের সামনে।

সংক্ষিপ্ত স্কোর

ভারত ১ম ইনিংস: ১৬৬ ওভারে ৬৮৭/৬ ইনিংস ঘোষণা (রাহুল ২, বিজয় ১০৮, পুজারা ৮৩, কোহলি ২০৪, রাহানে ৮২, ঋদ্ধিমান ১০৬*, অশ্বিন ৩৪, জাদেজা ৬০*; তাসকিন ১/১২৭, রাব্বি ০/১০০, সৌম্য ০/৪, মিরাজ ২/১৬৫, সাকিব ০/১০৪, তাইজুল ৩/১৫৬, সাব্বির ০/১০, মাহমুদউল্লাহ ০/১৬)।

বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ১০৪ ওভারে ৩২২/৬ (তামিম ২৪, সৌম্য ১৫, মুমিনুল ১২, মাহমুদউল্লাহ ২৮, সাকিব ৮২, মুশফিক ৮১*, সাব্বির ১৬, মেহেদী ৫১*; যাদব ২/৭২, ইশান্ত ১/৫৪, অশ্বিন ১/৭১৭, জাদেজা ১/৬০)