ক্রীড়া প্রতিবেদক: এখনও উইকেট সেভাবে বোলারদের দিকে হাত বাড়িয়ে দেয়নি। একজন ব্যাটসম্যান ইচ্ছে করলে কাটিয়ে দিতে পারেন অনেকটা সময়। কিন্তু তৃতীয় দিনের শুরু থেকেই আসা-যাওয়ার মিছিলে যোগ দেন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। এক সময় ফলোঅনের শঙ্কাও ভর করেছিল সফরকারীদের ওপর। তবে অধিনায়ক মুশফিকুর রহিমের দৃঢ়তা ও মেহেদি হাসান মিরাজের দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে সেই লজ্জা কাটিয়ে ওঠে টাইগাররা। তাতে অবশ্য বিপদ কাটেনি। শ্রীলঙ্কার দেওয়া ৪৯৪ রানের জবাবে হাথুরুসিংহের শিষ্যদের প্রথম ইনিংস থেমেছে ৩১২ রানে। এরপরই গল স্টেডিয়ামে শুরু হয় বৃষ্টি। যে কারণে ৩৯.৪ ওভারের আগেই দিনের খেলা হয়ে যায় শেষ। তাতে কিছুটা হলেও স্বস্তিতে টাইগাররা। স্বাগতিকরা প্রথম ইনিংসে এখনও এগিয়ে ১৮২ রানে।
গল ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়ামে তৃতীয় দিনের শুরু থেকেই উইকেট হারাতে থাকে বাংলাদেশ। সৌম্য সরকার, সাকিব আল হাসান, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, লিটন কুমার দাসদের আউটের ধরন দেখলে বলা যায়, তাতে বোলার কৃতিত্ব কতটুকু। এদের সবাই আউট হয়েছেন দৃষ্টিকটুভাবে। চাইলেই টিকে থাকা তাদের জন্য কঠিন কিছু ছিল না। অহেতুক শট খেলে নিজেদের উইকেট বিলিয়ে দিয়ে এসেছিলেন তারা। তবে একপ্রান্তে প্রতিপক্ষ বোলারদের দারুণ খেলছিলেন মুশফিকুর রহিম। দলের বিপদের সময় মেহেদি হাসান মিরাজকে নিয়ে ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে ১০৬ রান যোগ করেন তিনি। তাতে ফলোঅন এড়ায় বাংলাদেশ। এর কিছুক্ষণ পরই আবারও সেই তাড়াহুড়ায় ৩১২ রানে গুটিয়ে যায় টাইগারদের প্রথম ইনিংস। ৮৫ রান করে হেরাথের বলে উইকেট থেকে বেরিয়ে এসে মারতে গিয়ে বোল্ড হন মুশফিক। অন্যদিকে ৪১ রান করা মিরাজ এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে পড়েন দিলরুয়ান পেরেরার বলে।
দ্বিতীয় দিনে চমৎকার ব্যাটিং করা সৌম্য গতকাল বাজে শটে ৭১ রানে ফিরে যান সাজঘরে। লেগ স্টাম্পে করা সুরঙ্গা লাকমলের শর্ট বল ছেড়ে দিতে গিয়েও ছাড়েননি বাঁহাতি উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান। পুলও ঠিকমতো করতে পারেননি, ফাইন লেগে সহজ ক্যাচ মুঠোয় নেন লাহিরু কুমারা। একপ্রান্ত আগলে রেখে দারুণ খেলে যান মুশফিক। সাকিব খেলেন তার স্বভাবসুলভ মতোই। যা খেসারত দিয়েছেন দ্রুতই। চায়নাম্যান লাকশান সান্দাকানের গুগলিতে শেষ হয় তার মারমুখী ব্যাটিং।
এদিকে নিজের ইনিংস বড় করতে পারেননি মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। লাহিরু কুমারার বলে লাইনে না গিয়ে খেলার চড়া মাশুল গুনতে হয় তার। বোল্ড হয়ে পথ ধরেন প্যাভিলিয়নের। ঘরোয়া লিগের ডাবল সেঞ্চুরিয়ান লিযান কুমার দাস শুরু করেছিলেন চোখ ধাঁধানো চারের শটে। কিন্তু রঙ্গনা হেরাথের বলে আলস শটে সিøপে ক্যাচ দিয়েই ফিরে যান এ ডানহাতি। এরপরই তরুণ মিরাজকে নিয়ে ফলোঅন এড়ানোর লড়াই শুরু করেন মুশফিক। তার সঙ্গে মুশির ১০৬ রানের জুটিতে সেই শঙ্কা উড়ায় অতিথিরা।
লাঞ্চ বিরতির পরও মুশফিক-মিরাজ খেলছিলেন দারুণ। কিন্তু প্রতিপক্ষ অধিনায়ক দ্বিতীয় নতুন বল নিলে আবারও সর্বনাশ শুরু হয় বাংলাদেশের। অফ স্পিনার দিলরুয়ান পেরেরার বলে এলবিডব্লিউ হয়ে মিরাজের বিদায়ে ভাঙে ষষ্ঠ উইকেট জুটি। ৭৭ বলে পাঁচটি চারে মিরাজের রান ৪১। পরের বলে একই পরিণতি হয় তাসকিন আহমেদের। অফ স্পিনারের হ্যাটট্রিক ঠেকিয়ে দেন মুস্তাফিজুর রহমান। ঠিক সে সময়ে দলকে যতটা সম্ভব টেনে তুলতে চেষ্টা করেন মুশফিক। কিন্তু তিনি সফল হননি। ৮৫ রানে হেরাথের বলে বোল্ড হন তিনি। এর কিছুক্ষণ পরই শেষ হয় সফরকারীদের প্রথম ইনিংস।
শ্রীলঙ্কার হয়ে পেরেরা ও হেরাথ নেন তিনটি করে উইকেট। একটি করে উইকেট নেন লাকমাল, কুমারা ও সান্দাকান।
বৃষ্টির কারণে শ্রীলঙ্কা দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নামতে পারেনি। আজ খেলা শুরু হবে ১৫ মিনিট আগে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
শ্রীলঙ্কা ১ম ইনিংস: ৪৯৪/১০
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ৯৭.২ ওভারে ৩১২/১০ (তামিম ৫৭, সৌম্য ৭১, মুমিনুল ৭, মুশফিক ৮৫, সাকিব ২৩, মাহমুদউল্লাহ ৮, লিটন ৫, মিরাজ ৪১, তাসকিন ০, শুভাশীষ ০*, মোস্তাফিজ ৪; লাকমাল ১/৪২, কুমারা ১/৭০, পেরেরা ৩/৫৩, হেরাথ ৩/৭২, সান্দাকান ১/৬৯)