ফারুক আহমেদ চৌধুরী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ: পর্যাপ্ত কাস্টমস সুবিধা না থাকা, ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর মধ্যে সমন্বয়হীনতা ও রাজনৈতিক হস্তক্ষেপে ব্যাহত হচ্ছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনামসজিদ স্থলবন্দরের আমদানি-রফতানি কার্যক্রম। সময়মতো পণ্য খালাস করতে না পেরে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় বন্দরবিমুখ হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। কাস্টমস কর্তৃপক্ষের নানা হয়রানি ও পণ্য খালাসে ধীর গতির কারণে পচনশীল পণ্য ফল আমদানি বন্ধ করে দিয়েছে ব্যবসায়ীরা। রাজস্ব বোর্ডের বেঁধে দেওয়া লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ।
সুবিধাজনক যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে ব্যবসায়ীদের কাছে জনপ্রিয় দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম স্থলবন্দর সোনামসজিদ। ভারত থেকে পেঁয়াজ, পাথর, ফ্লাইঅ্যাশ, পোলট্রিফিড ও ফলসহ বিভিন্ন পণ্য আমদানি হয় এ বন্দর দিয়ে। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, কাস্টমস জটিলতার কারণে দেড় বছর ধরে যথাসময়ে পণ্য খালাস করতে পারছেন না। এতে অনেক ব্যবসায়ীই অন্য বন্দরে চলে যাচ্ছেন। ফলে দিন দিন কমে যাচ্ছে আমদানি-রফতানির পরিমাণ।
এছাড়া সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশন ও শ্রমিক সমন্বয় কমিটিসহ বন্দরসংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলোর নির্বাচনে রাজনৈতিক নেতাদের হস্তক্ষেপ এ বন্দরের ব্যবসা-বাণিজ্যকে আরও ক্ষতিগ্রস্ত করেছে বলে অভিযোগ ব্যবসায়ীদের।
সূত্রে জানা যায়, ব্যবসায়িক সুবিধার কারণে হিলি ও ভোমরা বন্দর দিয়ে ফল আমদানি করছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের আমদানিকারকরা। চাঁপাইনবাবগঞ্জের আমদানিকারক মেসার্স সাহেলা এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী নুরুল ইসলাম, মেসার্স তালেব এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী আবু তালেব, মেসার্স সুজার এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী সুজার আলী ও মেসার্স নুর এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী বেলাল হোসেন বর্তমানে সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে ফল আমদানি করছেন।
সোনামসজিদ কাস্টমস সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরের (২০১৭-১৮) প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৩৬ কোটি ৯৬ লাখ ৯৮ হাজার টাকা। এর বিপরীতে আদায় হয়েছে ১৭২ কোটি ৩৯ লাখ ৩২ হাজার টাকা। ফলে অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসের কাস্টমসের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৬৪ কোটি ৫৭ লাখ ৬৬ হাজার টাকা রাজস্ব আয় কম হয়েছে। সহকারী কাস্টমস কমিশনার সোলাইমান হোসেনও স্বীকার করছেন যে, ফল আমদানি না হওয়ায় রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি দেখা দিয়েছে।
ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, রাজস্ব আয়ের পরিমাণ বাড়াতে গিয়ে সোনামসজিদ কাস্টমসে আমদানি করা সব ধরনের পণ্যের শুল্কমূল্য দফায় দফায় বৃদ্ধি করা হয়েছে। পাশাপাশি নানামুখী হয়রানির ফলে আমদানিকারকরা সোনামসজিদ বন্দর ছেড়ে অন্য স্থলবন্দর দিয়ে পণ্য আমদানি করছেন। এসব কারণে সোনামসজিদে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা আদায়ে ঘাটতি দেখা দিয়েছে।
সূত্র জানায়, ফলসহ পচনশীল সব ধরনের পণ্যে রাজস্ব প্রদানে ব্যবসায়ীদের ১০ শতাংশ ছাড় দিত কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। সম্প্রতি মোয়াজ্জেম হোসেন রাজস্ব বিভাগের নতুন কমিশনার হিসেবে যোগদানের পর ১০ শতাংশ ছাড় বন্ধ করে দেয়। ছাড় না পেয়ে এ বন্দর দিয়ে ফল আমদানি করছেন না ব্যবসায়ীরা। ভোমরা ও হিলিবন্দর দিয়ে জাতীয় আমদানিকৃত পণ্যে ১০ শতাংশ ছাড় পাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।
সোনামসজিদ সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন জানান, ভারত থেকে আমদানি করা পণ্য যথাসময়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও ছাড় করায় বিলম্ব হয়ে থাকে। এছাড়া আমদানি করা পণ্য ছাড়ে কাস্টমসের কড়াকড়ি ও নিয়মিত পণ্য ছাড়ে বিলম্ব করার কারণে এ বন্দর দিয়ে পণ্য আমদানিতে নিরুৎসাহিত হচ্ছেন আমদানিকারকরা।
সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হারুনুর রশিদ জানান, শুরু থেকে এ বন্দরটি ছিল ফল ও পাথর আমদানির জন্য জনপ্রিয়। ১৯৯২ সাল থেকে প্রায় দুই যুগ এ বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ৮০ থেকে ৯০ ট্রাক ফল আমদানি হতো।
তিনি জানান, কাস্টমস কর্তৃপক্ষের পদে পদে হয়রানি ও পণ্য খালাসে ধীরগতির কারণে ফলজাতীয় পচনশীল পণ্য আমদানি করছেন না ব্যবসায়ীরা। কাস্টমস কর্তৃপক্ষ দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করলে ব্যবসায়ীরা এ বন্দর দিয়ে ফল আমদানি করবেন। রাজস্ব আদায়ে শুধু লক্ষ্যমাত্রা পূরণ নয়, আগের মতো অতিরিক্ত রাজস্ব আদায় হবে সোনামসজিদ কাস্টমসে।
বন্দরের সহকারী কাস্টমস কমিশনার সোলাইমান হোসেন জানান, বন্দরে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে কাস্টমসের নিয়মনীতি মোতাবেক আমদানি করা পণ্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও ছাড়করণ করা হয়। এ ছাড়করণের সময় নিয়মনীতি মেনে কড়াকড়ি আরোপ করায় কিছুটা আমদানি কমে গেছে। তিনি জানান, বন্দরে কোনো পণ্য ছাড়ে অনিয়ম হচ্ছে না।