এখন জ্যৈষ্ঠ মাস, চারদিকে চলছে নানা ধরনের ফলের সমারোহ। সারা বছরের চেয়ে এ মাসে প্রায় সব রকমের ফলই পাওয়া যায় বাজারে। এখন আম, লিচু, জামরুল কাঁঠাল, জাম, আনারস প্রভৃতি রসাল ফল বাজারে পাওয়া যাচ্ছে হাটবাজারসহ দেশের আনাচে-কানাচে। বিশেষ করে আম, লিচু ও আনারস পাওয়া যাচ্ছে অনায়াসে। আর এসব ফল খেতে সাধারণ ভোক্তাদের একটু সতর্ক থাকা উচিত।
অসাধু ব্যবসায়ীরা অতিমাত্রায় মুনাফার লোভে মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর বিভিন্ন রাসায়নিক দ্রব্য দিয়ে এসব ফল দ্রুত পাকিয়ে বাজারজাত করে। এভাবে তারা গ্রাহকদের ঠকায়। তাই রাসায়নিক দ্রব্যে পাকানো অপরিপক্ব বিষাক্ত ফল খেয়ে মানুষ নানা অসুখ-বিসুখে আক্রান্ত হতে পারে। এমনকি মৃত্যু পর্যন্তও ঘটতে পারে।
আম, লিচু, জাম প্রভৃতি ফল পাকলে গাছ থেকে ঝরে পড়ে। কোনো পাখি ঠোকর দিলেও ঝরে পড়ে। তখন শিশুরা দৌড়ে গিয়ে পড়া ফল কুড়িয়ে নেয় এবং খেয়ে ফেলে। তখনি ঘটে দারুণ বিপদ। অনেকের মনে থাকার কথা, কয়েক বছর আগে দিনাজপুরে লিচু খেয়ে ১১ শিশুর মর্মান্তিক মৃত্যু ঘটেছিল। প্রথমে ধারণা করা হয়েছিল, গাছে কীটনাশক দেয়া পড়া লিচু খেয়েই তারা মারা যায়। কিন্তু পরে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর জানা যায়, ওই শিশুরা কীটনাশক দেয়া লিচু খেয়ে মারা যায়নি, মৃত্যুর জন্য দায়ী লিচুতে থাকা ‘হাইপোগ্লাইসিন’ নামীয় ক্ষতিকর রাসায়নিক দ্রব্য।
শিশুরা যদি সকালে খালি পেটে লিচু খায়, তাহলে হঠাৎ করেই তার শরীরের শর্করার মাত্রা কমে যায়। আর সে সময় ‘হাইপোগ্লাইসিনের প্রভাবে পেটে বিষক্রিয়ার সৃষ্টি হয়ে শিশুসহ বড়দেরও মারা যাওয়ার আশঙ্কা থাকে বেশি। তাই যখনই আমরা এ-জাতীয় ফল খাব, তখন অতিমাত্রায় সাবধান থাকব।
ওই বছর ভারতের বিহার রাজ্যেও লিচু খেয়ে ১৯০ শিশু অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্র্তি হয় এবং তার মধ্যে ১২২ জনই মারা যায়।
শুধু এই লিচু খেলেই এমন বিপাকীয় অবস্থা ঘটে, এমন নয়। অন্যান্য ফল খেলেও তা হতে পারে, যেমন আম, কাঁঠাল, জাম, জামরুল ও পেয়ারা খেয়ে শিশু, কিশোর এমনকি বড়রাও অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে।
বাগান থেকে ফল বাজারে আসার জন্য সরকার একটা সময় বেঁধে দিলেও বেশি মুনাফার আশায় অসাধু ব্যবসায়ী বা বাগান মালিকেরা অপরিপক্ব ফলে রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করে ফলের স্বাদ নষ্ট করছে এবং মানুষের খাওয়ার অযোগ্য করে কেমিক্যাল দিয়ে টকটকে রং বানিয়ে গ্রাহককে আকৃষ্ট করে বেশি দাম নিয়ে তাদের হাতে তুলে দিচ্ছে ফল নামক বিষ। ইদানীং লাল রংসহ মিষ্টি করতে তরমুজেও ব্যবসায়ী চক্র একপ্রকার রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করছে। ফলে তরমুজ লাল ও মিষ্টি হচ্ছে।
ভোক্তা বা গ্রাহকরা সোচ্চার হলেই পরিবর্তন সম্ভব। ফল দেখে-শুনে-বুঝে কিনতে হবে এবং খেতে হবে।
আলকামা সিকদার
তেজগাঁও, ঢাকা