নজরুল ইসলাম: সরকারের ফাঁকি দেয়া রাজস্ব পরিশোধ না করে প্রতিষ্ঠান বিক্রি করে দিয়েছে সোনালী সোপ ফ্যাক্টরি অ্যান্ড কেমিক্যাল কোম্পানি। প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে ১৪ কোটি ২৬ লাখ ৯১ হাজার ৩৭৪ টাকা ৪০ পয়সা রাজস্ব ফাঁকি ও আত্মসাতের অভিযোগে মামলা দায়ের ও তদন্ত শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
দুদক সূত্র জানিয়েছে, কতিপয় কাস্টমস কর্মকর্তার যোগসাজশে সোনালী সোপের মালিক নুর উদ্দিন এসব টাকা লোপাট করেছেন।
দুদক এনবিআরের কাছে সোনালী সোপের ১৯৯৯-২০০০ থেকে ২০০৩-২০০৪ পর্যন্ত চারটি অর্থবছরের ভ্যাট রেজিস্ট্রেশন নম্বর ৫০৬২০০০০৯৬ ও ৫০৬১০১৩৬৮৮১-এর সনদসহ যাবতীয় তথ্য চেয়েছে। এসব ভ্যাট রেজিস্ট্রেশনের আওতায় বিল অব এন্ট্রির মাধ্যমে ক্রুড নারিকেল তেল ও কস্টিক সোডা আমদানি এবং বিক্রির সময় প্রদত্ত ভ্যাটের তালিকাসহ সংশ্লিষ্ট রেকর্ডপত্র, ক্রুড নারিকেল তেল ও কস্টিক সোডার মাধ্যমে প্রস্তুত করা সাবান বিক্রির সময় প্রদত্ত ভ্যাটের তালিকাসহ সংশ্লিষ্ট রেকর্ডপত্র, মালামাল আমদানি, বিক্রি ও সাবান প্রস্তুত করে বিক্রির সময় প্রদত্ত তালিকাসহ সংশ্লিষ্ট রেকর্ডপত্রসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য রেকর্ডপত্রও চাওয়া হয়েছে।
গত ১৫ সেপ্টেম্বর দুদকের সহকারী পরিচালক একেএম বজলুর রশীদ স্বাক্ষরিত এক পত্রে এনবিআরের কাছে এসব তথ্য চাওয়া হয়েছে। তিনি মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা।
তদন্তের অগ্রগতির বিষয়ে জানতে চাইলে একেএম বজলুর রশীদ শেয়ার বিজকে বলেন, এখনও রেকর্ডপত্র পাইনি।
সোনালী সোপের বিরুদ্ধে ১৯৯৯-২০০০ থেকে ২০০৩-২০০৪ পর্যন্ত অর্থবছরে জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে শিল্পপ্রতিষ্ঠানে ব্যবহারের জন্য আমদানি করা কাঁচামাল রেজিস্টারে লিপিবদ্ধ না করা এবং উৎপাদিত পণ্যের হিসাব অনুযায়ী সরকারি রাজস্ব জমা না দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। এসব অভিযোগে ২০০৪ সালের ১১ জুলাই তেজগাঁও থানায় মামলা (নম্বর ২৮) দায়ের করা হয়।
সরেজমিন তেজগাঁও শিল্প এলাকার ১১৩/এ ও ১১৭ নম্বর হোল্ডিংয়ে গিয়ে দেখা গেছে, ১১৩/এ ঠিকানায় একসময় সোনালী সোপ অ্যান্ড কেমিকেলের ফ্যাক্টরি ছিল। এর মালিক ছিলেন নুর উদ্দিন। সেখানে এখন রিগজ গ্রুপের কারখানা। সোনালী সোপ ফ্যাক্টরির কোনো অস্তিত্ব নেই। আর ১১৭ নম্বর হোল্ডিংয়ে এখন শমরিতা হসপিটাল।
রিগজ গ্রুপের প্রতিষ্ঠান বেস্টক্লিন বিডির জেনারেল ম্যানেজার শেয়ার বিজকে বলেন, নুর উদ্দিনের কাছ থেকে তাদের কোম্পানি জায়গাটি কিনে নিয়েছে। ২০০২ সালের দিকে সোনালী সোপ ফ্যাক্টরিটি বন্ধ করে দেন নুর উদ্দিন। এখন হাতিরঝিলের কাছে বউবাজার এলাকায় তার একটি বাড়ি রয়েছে, সেটিতে রিগজ গ্রুপ গোডাউন ভাড়া নিয়েছে।
সরেজমিনে বউবাজার এলাকায় গিয়ে জানা গেছে, নুর উদ্দিনের বাড়িটি হাজীর বাড়ি নামে পরিচিত। ১৭১ নম্বর হোল্ডিংয়ের বাড়িটিতে লেখা রয়েছে শিল্পপ্লট। সাইনবোর্ড ঝুলছে এম আবদুল মাবুদ অ্যান্ড ব্রাদার্স লিমিটেড ও এশিয়ান কনজিউমার কেয়ার প্রাইভেট লিমিটেডের।
বাড়ির ভেতরে ম্যানেজার রাশেদের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। অভিযোগের বিষয়ে নুর উদ্দিনের বক্তব্য নেয়ার জন্য তার সঙ্গে দেখা করতে চাইলে রাশেদ অপারগতা প্রকাশ করেন। পরে মোবাইল ফোনে বক্তব্য জানতে চাইলে রাশেদ বলেন, নুর উদ্দিন সাহেবের বয়স হয়েছে। তিনি এখন আল্লাহ-আল্লাহ করেন। তার ব্যবসায়িক অবস্থা এখন ভালো নয়। এই বাড়িটির ভাড়া দিয়ে কোনোমতে চলেন।
দুদক সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৯-২০০০ অর্থবছরের ভ্যাট রেজিস্ট্রেশন নম্বর ৫০৬২০০০০৯৬-এর মাধ্যমে ২০০০ সালের ২৭ জুন বিল অব এন্ট্রি নম্বর সি-০৩৬২৪, একই বছর ২৮ মে সি-৩৫৬৮২, সি-৩৫৬৮৯ ও ৭ জুন সি-৩৯২৩৯-এর মাধ্যমে ২৫৬ মেট্রিক টন ক্রুড নারিকেল তেল আমদানি করে সোনালী সোপ।
২০০০-২০০১ অর্থবছরে ভ্যাট রেজিস্ট্রেশন নম্বর ৫০৬২০০০০৯৬-এর ১৩টি বিল অব এন্ট্রির মাধ্যমে মোট ১২৮০ মেট্রিক টন ক্রুড নারিকেল তেল ও বিল অব এন্ট্রি ৩৯১৮৬-এর মাধ্যমে ১৪ মেট্রিক টন আরবিডি পাম অয়েল আমদানি করে।
২০০০-২০০১ অর্থবছরে ভ্যাট রেজিস্ট্রেশন নম্বর ৫০৬২০০০০৯৬-এর আওতায় ২০০২ সালের ২ জুন বিল এন্ট্রি নম্বর সি-৪৮৯২৫১-এর মাধ্যমে ২৯৭ দশমিক ৯২ মেট্রিক টন ক্রুড নারিকেল তেল আমদানি করে।
২০০২-২০০৩ অর্থবছরে ভ্যাট রেজিস্ট্রেশন নম্বর ৫০৬২০০০০৯৬-এর আওতায় ২০০২ সালের ৭ আগস্ট বিল অব এন্ট্রি নম্বর সি-০৬৫৬৮, একই বছর ১২ ডিসেম্বর সি-১৩২১০ এবং ২০০৩ সালের ১৪ জুন সি-৪১৯৯১-এর মাধ্যমে মোট ৪৩২ দশমিক চার মেট্রিক টন ক্রুড নারিকেল তেল আমদানি করা হয়।
২০০৩-২০০৪ অর্থবছরে ভ্যাট রেজিস্ট্রেশন নম্বর ৫০৬২০০০০৯৬-এর আওতায় ২০০৩ সালের ২৭ ডিসেম্বর বিল অব এন্ট্রি নম্বর সি-১৫১৪৭০, একই বছর ৫ জুলাই সি-৪৮৮৩৯, ৭ মে সি-৪৮৮৫৬ এবং ২২ সেপ্টেম্বর সি-৮৪৪৫৮-এর মাধ্যমে মোট ৭৬২ মেট্রিক টন ক্রুড নারিকেল তেল আমদানি করা হয়।
২০০২-২০০৩ অর্থবছরে ভ্যাট রেজিস্ট্রেশন নম্বর ৫০৬২০০০০৯৬-এর আওতায় ২০০৩ সালের ২০ মার্চ বিল অব এন্ট্রি নম্বর সি-১৯৯৫২ (কোড নম্বর ২৮.১৫.১১.০০)-এর মাধ্যমে ৬০০ মেট্রিক টন কস্টিক সোডা আমদানি করা হয়।
২০০৩-২০০৪ অর্থবছরে ভ্যাট রেজিস্ট্রেশন নম্বর ৫০৬১০১৩৬৮৮১-এর আওতায় ২০০৩ সালের ৭ অক্টোবর বিল অব এন্ট্রি নম্বর সি-৯৪৫৬০-এর মাধ্যমে এক হাজার মেট্রিক টন কস্টিক সোডা আমদানি করা হয়। এনবিআরের কাছে এসব লেনদেনের সব তথ্য চেয়েছে দুদক।