ফাইন্যান্সিয়াল সেক্টরে কিছুই নেই, তবু অর্থনীতি সচল রেখেছি: অর্থ উপদেষ্টা

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক: মাত্র ১৫ শতাংশ কর দিয়ে বহুল আলোচিত কালোটাকা সাদা করার সুযোগ তুলে দেয়ার পক্ষে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এরই পরিপ্রেক্ষিতে এই সুবিধা বাতিল করার জন্য সরকার উপায় খুঁজছে বলে এনবিআরের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে এনবিআর হেডকোয়ার্টার্সে কর্মকর্তাদের বৈঠকে বিষয়টি তুলে ধরেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দিন।
বৈঠক শেষে এনবিআরের এক কর্মকর্তা বলেন, এনবিআরের পক্ষ থেকে উপদেষ্টা মহোদয়কে মৌখিকভাবে জানানো হয়েছে, এ সুবিধা (১৫ শতাংশ কর দিয়ে কালোটাকা বৈধ করার সুবিধা) বাতিল করে দিলেই ভালো। তিনি (অর্থ উপদেষ্টা) বিষয়টি উপদেষ্টা পরিষদের সভায় তুলবেন। এরপর এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসবে।

কেননা এটি বাতিল করতে হলে অর্ডিন্যান্স জারি করতে হবে। গত বাজেটে সরকার ১৫ শতাংশ কর দিয়ে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দেয়, যা নিয়ে বিস্তর সমালোচনা হয় তখন। কেননা বৈধভাবে আয় করা করদাতাদের সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ পর্যন্ত কর ছাড়াও সারচার্জ দিতে হয়। অন্যদিকে অপ্রদর্শিত বা অবৈধভাবে অর্জিত অর্থের মালিকদের ১৫ শতাংশ কর দিয়ে টাকা সাদা করার সুযোগ দেয়ায় তা অনিয়মকে উৎসাহিত করবে বলে ব্যাপক সমালোচনা হয় বিভিন্ন পক্ষ থেকে।


সম্প্রতি ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিও (এফবিসিসিআিই) কালোটাকার সুযোগ বাতিলের দাবি জানিয়েছে। মঙ্গলবার সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, আপনারা তো জানেন না, ফাইন্যান্সের ভেতরে (ফাইন্যান্সিয়াল সেক্টরে) কিছুই নেই। তবু আমরা অর্থনীতির সবই সচল রেখেছি। অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘১৫ বছরের জঞ্জাল…।’ এ সময় এনবিআর চেয়ারম্যান পাশ থেকে বলেন, ‘একটু সময় তো লাগবে।’

এর আগে গত ২০ আগস্ট ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের সঙ্গে এক বৈঠকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস বলেছিলেন, তার সরকার উত্তরাধিকার সূত্রে একটি ভঙ্গুর অর্থনীতি পেয়েছে। তবে তিনি আত্মবিশ্বাসী যে, গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারের মাধ্যমে শিগগির পরিস্থিতির উন্নতি হবে। এছাড়া বন্দরে পণ্য যাতে দ্রুত খালাস করা হয় এবং আমদানি-রপ্তানির পণ্যবাহী কনসাইনমেন্ট যাতে দ্রুত খালাস করা হয়, এনবিআর কর্মকর্তাদের সে নির্দেশও দেন বলে জানান অর্থ উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘বিল অব এন্ট্রি বা বিল অব লেডিং যাতে টাইমলি ছাড়া হয়…। সরকারের পক্ষ থেকে যাতে কোনো রকম বাধার সৃষ্টি না হয়। যিনি রাজস্ব দেন, তাকে আটকানো, যিনি দেন না তাকে ছেড়ে দেয়াÑএটা যাতে না হয়।’ প্রাইভেট সেক্টরের মাল যাতে দ্রুত ছাড় দেয়া হয়,’ বলেন তিনি।

তিনি বলেন, ‘রাজস্ব আদায় যাতে ম্যাক্সিমাম হয় মানুষকে কষ্ট না দিয়ে। সারাক্ষণ তো লোন নিয়ে চলতে পারব না। চলতি বছরের রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা সংশোধন করে কমিয়ে আনা হবে কি নাÑএমন প্রশ্নে এনবিআরের চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান বলেন, ‘ব্যবসায়ীদের ফুল কনফিডেন্স এনে তাদের কাছ থেকে রেভিনিউ আদায় করব। কাভার করতে পারব (লক্ষ্যমাত্রা)।’ এছাড়া রাজস্ব যাতে সময়মতো আদায় হয়, সে চেষ্টা চালাবেন বলে জানান তিনি।

অন্যদিকে অর্থনৈতিক গতিশীলতা ফেরাতে নানা ক্ষেত্রে সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা থাকলেও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে ব্যাংক, পুঁজিবাজার ও রাজস্ব খাতের সংস্কার সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে বলে জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘আমাদের সংস্কার প্রয়োজন। যেমন ব্যাংক খাতের সংস্কার, রাজস্ব সংস্কার, ক্যাপিটাল মিডিয়া। এগুলো আমাদের জন্য ইমিডিয়েট কনসার্ন। কারণ আমরা যদি এসব সংস্কার না করি, তাহলে এটা আমাদের জন্য পরে কঠিন হবে।’
মঙ্গলবার অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) কার্যালয়ে যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার সারাহ কুকের সঙ্গে বৈঠকের পর অর্থ উপদেষ্টা সাংবাদিকদের এ কথা বলেন। সালেহ উদ্দিন বলেন, এই তিন খাতের সংস্কারে বাংলাদেশকে সহায়তা করার ‘আগ্রহ প্রকাশ করেছে’ যুক্তরাজ্য। দুই দেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধির বিষয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। কী ধরনের সংস্কারে যুক্তরাজ্য সহযোগিতা করবেÑসাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে সারাহ কুক বলেন, ‘অর্থনৈতিক সংস্কারের ক্ষেত্রে যেটা তিনি (অর্থ উপদেষ্টা) অগ্রাধিকার দিচ্ছেন এবং সহায়তা প্রয়োজন ভাবছেন, সেখানেই যুক্তরাজ্য সমর্থন করবে।’

অর্থ উপদেষ্টা আলোচনায় ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্প্রসারণে ‘ব্যবসার পরিবেশ, ইজ অব ডুয়িং বিজনেজ ও ডাইভার্সিফিকেশনে’ জোর দিয়েছেন বলে জানান। বেসরকারি খাতের বিনিয়োগও যে গুরুত্বপূর্ণ, সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, ‘ব্রিটেনের বড় বড় ব্যবসায়ী এখানে বিনিয়োগ করেছেন।’ আরও বেশি বেসরকারি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে বাংলাদেশে ব্যবসার পরিবেশ উন্নত করতে হবে বলে মন্তব্য করে উপদেষ্টা বলেন, ‘তা না হলে বেসরকারি খাত আসবে না।’

বাংলাদেশ এখন যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় বাজারে মূলত তৈরি পোশাক রপ্তানি করে। রপ্তানি বাড়াতে পণ্যে বৈচিত্র্য আনার ওপরও গুরুত্ব দেন তিনি। অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘যুক্তরাজ্য মূলত অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও নারীর ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে কাজ করছে। আমরা এগুলোও চালিয়ে যাব।’ যুক্তরাজ্য থেকে বাংলাদেশে সরাসরি বিনিয়োগ বৃদ্ধি করার বিষয়ে এক প্রশ্নে ব্রিটিশ হাইকমিশনার বলেন, ‘বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের অত্যন্ত শক্তিশালী অংশীদারত্ব রয়েছে। আমাদের খুব শক্তিশালী বাণিজ্য ও বিনিয়োগের পরিবেশ রয়েছে। অবশ্যই আমরা যুক্তরাজ্য থেকে আরও বেশি সরাসরি বিনিয়োগ (এফডিআই) বাংলাদেশে দেখতে চাই।’

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০