নিজস্ব প্রতিবেদক: ফারইস্ট ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের সাবেক এমডিসহ সাত ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ভুয়া আয়কর উপদেষ্টা কোম্পানি দেখিয়ে ১০ চেকের মাধ্যমে আড়াই কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে মামলাটি দায়ের করা হয়েছে।
গতকাল দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে সংস্থাটির উপ-পরিচালক মো. আব্দুল মাজেদ বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। দুদক সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৪০৯/৪২০/১০৯ ধারা ও মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২-এর ৪(২) ধারায় মামলাটি দায়ের করা হয়।
মামলার আসামিরা হলেনÑফারইস্ট ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক শান্তনু সাহা, সাবেক উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও চিফ ফিন্যান্সিয়াল অফিসার মো. হাফিজুর রহমান, সাবেক সিনিয়র অ্যাসিসট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট নাজমুন নাহার, অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার আহসানুল ইসলাম, সিনিয়র অ্যাসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট ও হেড অব আইসিসিডি তানভীর হাসান, সিনিয়র অ্যাসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট বিপ্লব সাহা এবং সিনিয়র অ্যাসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট ও কোম্পানি সেক্রেটারি শেখ খালেদ জহির।
মামলার এজাহারে অভিযোগ করা হয়েছে, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে প্রতারণার মাধ্যমে এ. হোসেন অ্যান্ড কোম্পানিকে ফারইস্ট ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের ইনকাম ট্যাক্স অ্যাডভাইজার হিসেবে দেখায়। প্রকৃত অর্থে কোম্পানিটি ফারইস্ট ফাইন্যান্সের ট্যাক্স অ্যাডভাইজার নয়। তারপরও বিভিন্ন ব্যাংক থেকে নেয়া ঋণের সুদ দেয়ার নামে ওই সুদ-প্রদান খাত থেকে টাকা উত্তোলন করে। নির্দিষ্ট ব্যাংকে জমা না দিয়ে এ. হোসেন অ্যান্ড কোম্পানির নামে ১০টি চেকের মাধ্যমে দুই কোটি ৭১ লাখ ৪৬ হাজার ৯৭০ টাকা দেয়। আর ওই টাকা আত্মসাৎ করে স্থানান্তর, পাচার, প্লেসমেন্ট ও লেয়ারিংয়ের মাধ্যমে বৈধ করার চেষ্টা করেছে আসামিরা।
রেকর্ডপত্র পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ২০১৯ সালের ২৩ জানুয়ারি পর্যন্ত ফারইস্ট ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড বিভিন্ন ব্যাংক থেকে যে ঋণ নিয়েছে তার বিপরীতে সুদ পরিশোধ বাবদ ভাউচার এন্ট্রি পাস করানো হয়েছে। অর্থাৎ নির্দিষ্ট ব্যাংকের ঋণচুক্তির বিপরীতে সুদ বাবদ কত টাকা পরিশোধ করতে হবে ভাউচারে এন্ট্রি দিয়ে তা পাস করানো হয়েছে। কিন্তু চেক লেখার সময় ভাউচারে বর্ণিত প্রাপকের পরিবর্তে আয়কর কনসালট্যান্ট এ. হোসেন অ্যান্ড কোংয়ের নামে চেক ইস্যু করা হয়। অর্থ আত্মসাতের এ কর্মকাণ্ড কোম্পানির আয়কর পরামর্শক এবং কর্মচারীদের সুপরিকল্পিত ও সুসংগঠিত অপরাধ বলে দুদকের অনুসন্ধানে প্রমাণিত হয়েছে।
অনুসন্ধানে আরও দেখা গেছে, এ. হোসেন অ্যান্ড কোংয়ের অন্তর্ভুক্তিকরণ প্রকৃতপক্ষে একটি অতিরিক্ত স্তর সৃষ্টির মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের অপরাধকে আড়াল করা হয়। এসব অপরাধ আড়াল করার জন্য ২০১৮ সালে ১৭ এপ্রিল অনুষ্ঠিত কোম্পানির ১৮৪তম বোর্ড সভায় ২০১৬-১৭ কর বর্ষের জন্য কোম্পানির ট্যাক্স পরামর্শক এ. হোসেন অ্যান্ড কোংকে অ্যাডভাইজরি ফি দেয়ার বিষয়টি অনুমোদন করেছে। ওই রেজুলেশনে টাকার অঙ্ক উল্লেখ করা হয়নি। বিধি মোতাবেক উপদেষ্টা নিয়োগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন নিতে হয়। কিন্তু তাকে আয়কর উপদেষ্টা বা অ্যাডভাইজার নিয়োগের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন চাওয়া হয়নি। এছাড়া একই ব্যক্তিকে কোম্পানির ট্যাক্স কনসালট্যান্ট ও ট্যাক্স অ্যাডভাইজার নিয়োগে কোনো সুযোগ নেই। আয়কর পরামর্শককে একই সঙ্গে আয়কর উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ ও ফি প্রদান বেআইনি এবং বিধিবহির্ভূত।