নিজস্ব প্রতিবেদক: বেসরকারি দি ফারমার্স ব্যাংকের ১৭ কর্মকর্তা ও গ্রাহকের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল মঙ্গলবার দুদকের পক্ষ থেকে এ নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। ব্যাংকটির কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের পর তারা বিদেশে পালিয়ে যেতে পারে, এমন সন্দেহে দুদক এ নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। ১৭ জনের ঋণ কেলেঙ্কারি নিয়ে দুদক তদন্ত করছে বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রণব কুমার ভট্টাচার্য্য।
দুদকের উপ-পরিচালক মো. সামছুল আলম পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) অতিরিক্ত মহাপরিচালককে চিঠি পাঠিয়ে তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা আরোপে ব্যবস্থা নিতে বলেছেন। চিঠির অনুলিপি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিবের কাছেও পাঠানো হয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে পরস্পর যোগসাজশে ব্যাংকের কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ, ওই টাকায় অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং নামে-বেনামে বিদেশে অর্থপাচারের অভিযোগ রয়েছে। অত্র অভিযোগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা সপরিবারে অন্য দেশে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। সুতরাং অভিযোগের সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিদেশ গমন রহিতকরণ একান্ত প্রয়োজন।
১৭ জনের মধ্যে কর্মকর্তা হিসেবে রয়েছেন একেএম শামিম (এমডি অ্যান্ড সিইও), আবদুল মোতালেব পাটোয়ারী (ডিএমডি), গাজী সালাউদ্দিন (এসইভিপি), মো. জাহাঙ্গীর আলম মজুমদার (ইভিপি), জিয়া উদ্দিন আহমেদ (এসভিপি), মো. লুৎফুল হক (ভিপি), মো. মনিরুল হক (ভিপি), মো. তাফাজ্জল হোসেন (এফভিপি), মোহাম্মদ শামসুল হাসান ভুঁইয়া (এভিপি), মাহবুব আহমেদ (এইও) ও মোহাম্মদ জাকির হোসেন (ইও)।
গ্রাহকদের মধ্যে রয়েছেনÑমাহবুবুল হক চিশতী (বাবুল চিশতী), তার স্ত্রী রুজী চিশতী, ছেলে রাশেদুল হক চিশতী, পূত্রবধূ ফারহানা আহমেদ, মেয়ে রিমি চিশতী ও মাজেদুল হক চিশতী। মাহবুবুল হক চিশতী ফারমার্স ব্যাংকের নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন। ঋণ বিতরণে একাধিপত্যের অভিযোগে তাকে পদ থেকে অব্যাহতিও দিয়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
২০১৩ সালের ৩ জুন চতুর্থ প্রজন্মের ব্যাংক হিসেবে ফারমার্স ব্যাংকের কার্যক্রম শুরু হয়। বর্তমানে ব্যাংকটির শাখার সংখ্যা ৫৬ ও এটিএম বুথ রয়েছে ১১টি। প্রতিষ্ঠার পর থেকে ২০১৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকটি মোট ঋণ বিতরণ করেছে চার হাজার ৪১৩ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে গত বছর এই ব্যাংক থেকে দেওয়া ঋণের পরিমাণ এক হাজার ৮৩৯ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। ২০১৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ফারমার্স ব্যাংকের মোট আমানত সংগ্রহের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে পাঁচ হাজার ৬৩ কোটি ৬১ লাখ টাকা; যা ২০১৫ সালে ছিল ৩ হাজার ৪৮২ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। সম্প্রতি ব্যাংকটির চেয়ারম্যানের পদ ছাড়তে বাধ্য হন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর ও নিরীক্ষা কমিটির চেয়ারম্যান মাহাবুবুল হক চিশতী। গত ১৯ ডিসেম্বর ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) একেএম শীমামকেও অপসারণ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ঋণ কেলেঙ্কারির কারণে প্রতিষ্ঠার চার বছর না পেরোতেই ধুঁকছে ফারমার্স ব্যাংক। এর পরিপ্রেক্ষিতে ব্যাংকটির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব ছাড়তে হয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য মহীউদ্দীন খান আলমগীরকে।