Print Date & Time : 20 June 2025 Friday 5:52 pm

ফারমার্স ব্যাংকে মূলধন জোগানকারীদের বৈঠক আজ

নিজস্ব প্রতিবেদক: বেসরকারি খাতের ফারমার্স ব্যাংকে সংকট থেকে ফেরাতে মূলধন জোগানে আগ্রহী প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে বৈঠকে বসছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ লক্ষ্যে আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টায় সম্ভাব্য বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন বাংলাদেশ (আইসিবি), রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক ও জনতা ব্যাংকের পর্ষদ চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষকে ডাকা হয়েছে।

গত বছরের শেষ দিকে তারল্য সংকটে থাকা ফারমার্স ব্যাংককে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য ব্যাংকটির পুনর্গঠিত পর্ষদ এবং ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ নিজেরা বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে। ব্যাংকটিতে বাঁচাতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক সহায়তা দিচ্ছে। তারই অংশ হিসেবে মূলধন জোগান বাড়িয়ে সংকট কাটাতে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

জানা গেছে, ফারমার্স ব্যাংক আইসিবি থেকে বিনিয়োগ মূলধন হিসেবে নিতে আগ্রহী হলেও সোনালী, জনতা ও রূপালী ব্যাংক থেকে অর্থ মূলধন হিসেবে না নিয়ে ঋণ হিসেবে পেতে চায়। তবে এ ব্যাংকগুলো তাতে রাজি নয়। ব্যাংকগুলো চায় মূলধন হিসেবে অর্থ নিয়ে ফারমার্স ব্যাংক পরিচালনায় তাদের প্রতিনিধিকে পাঠাতে। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতও এমনটি চাচ্ছেন বলে জানা গেছে। এ লক্ষ্যে তিনি এক হাজার ১০০ কোটি টাকা মূলধন জোগানের প্রস্তাবে নীতিগত সায় দিয়েছেন।

জানতে চাইলে ফারমার্স ব্যাংকের উপদেষ্টা প্রদীপ কুমার দত্ত বলেন, আমাদের ব্যাংকটিতে ঘুরে দাঁড় করানোর জন্য তারল্য দরকার। আমরা সংশ্লিষ্ট কিছু প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনা করে এক হাজার ১০০ কোটি টাকা প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগের সম্ভাব্য খাত পেয়েছি। আশা করি, সমস্যা থেকে আমরা আবার ঘুরে দাঁড়াব। আজকের বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির উপস্থিত থাকবেন বলে জানা গেছে। বৈঠকে ফারমার্স ব্যাংকের প্রতিনিধিদেরও ডাকা হয়েছে।

সূত্র জানায়, বর্তমানে ফারমার্স ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধন রয়েছে ৪০১ কোটি টাকা। আরও এক হাজার ১০০ কোটি টাকা বাড়িয়ে দেড় হাজার কোটি টাকার মূলধন করা হচ্ছে সংকট দূর করতে। এর মধ্যে ৩৭৫ কোটি টাকা জোগান দেবে আইসিবি ও আইসিবি মিউচুয়াল ফান্ড। সম্প্রতি ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ নেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে।

রাজনৈতিক বিবেচনায় বর্তমান সরকারের গত মেয়াদে অনুমোদন পাওয়া নতুন ৯ ব্যাংকের একটি ফারমার্স ব্যাংক। ব্যাংকটির বিরুদ্ধে নিয়োগ প্রক্রিয়া ও ঋণ বিতরণে ব্যাপক অনিয়মের তথ্য বেরিয়ে আসে। ব্যাপকহারে ঋণ বিতরণের ফলে ব্যাংকটি তহবিল সংকটে পড়ে। ফলে ব্যাংকটি আমানতকারীদের অর্থ পরিশোধ যেমন করতে পারছে না, অন্যদিকে নিয়মমতো বাংলাদেশ ব্যাংকে টাকা জমা রাখতে ব্যর্থ হচ্ছে। ব্যাংক চালাতে ব্যর্থ হওয়ায় গত ২৭ নভেম্বর পদত্যাগ করেন ফারমার্স ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর ও নিরীক্ষা কমিটির চেয়ারম্যান মাহাবুবুল হক চিশতী। ব্যাংকের এমডি একেএম শামীমকে অপসারণ করে বাংলাদেশ ব্যাংক।

প্রসঙ্গত, ফারমার্স ব্যাংকের ঋণ বিতরণ ও নিয়োগ অনিয়মের সঙ্গে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীরের সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে সম্প্রতি গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তার সংশ্লিষ্টতা খতিয়ে দেখছে বলেও জানা গেছে। তবে এ বিষয়ে গতকাল সোমবার সংসদে বক্তব্যে ক্ষমতাসীন দলের এই সংসদ সদস্য তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলেও দাবি করেন। এ বিষয়ে তিনি স্পিকারের ‘প্রটেকশন’ চেয়েছেন। ঋণ কেলেঙ্কারি ও অব্যবস্থাপনা নিয়ে চাপের মুখে ফারমার্স ব্যাংকের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব ছাড়লেও কোনো অনিয়মে জড়িত ছিলেন না বলে দাবি করেছেন মহীউদ্দীন খান আলমগীর। আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য মহীউদ্দীন খান আলমগীর বর্তমান সংসদে সরকারি হিসাব কমিটির সভাপতি। শেখ হাসিনার গত সরকারে কিছু দিন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন তিনি।