দুই মাস আমদানি বন্ধ

ফার্নেস অয়েলের অতিরিক্ত মজুত নিয়ে বিপাকে বিপিসি

সাইফুল আলম, চট্টগ্রাম: গত ছয় মাসের ব্যবধানে আন্তর্জাতিক বাজারে ফার্নেস অয়েলের দাম কমেছে প্রতি ব্যারেলে ৪৫ ডলার। এ সুযোগকে কাজে লাগাতে বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর মালিকরা নিজেরাই তেল আমদানি করছে। পাশাপাশি সরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রে চাহিদা কম থাকায় ফার্নেস অয়েলের বিক্রি কমেছে।

এতে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) আমদানি ও পরিশোধনকৃত ফার্নেস অয়েলের মজুত বেড়েছে। এ নিয়ে বিপাকে পড়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাটি। ফলে বাধ্য হয়েই দুই মাস ধরে ফার্নেস অয়েল আমদানি করছে না বিপিসি।

তথ্যমতে, দেশের বিদ্যুৎ খাতে চাহিদানুসারে বিপিসি ফার্নেস অয়েল আমদানি ও পরিশোধন করে। চলতি (২০১৯-২০) অর্থবছর বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) ফার্নেস অয়েলের চাহিদা ছিল তিন লাখ পাঁচ হাজার মেট্রিক টন। কিন্তু পিডিবি তার চাহিদা অনুসারে বিপিসি’র কাছ থেকে তেল ক্রয় করেনি। অপরদিকে বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর চাহিদা তিন লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন থাকলেও তারা নিজেরাই বিদেশ থেকে আমদানি করছে। ফলে বিপিসির আমদানি ও পরিশোধনকৃত ফার্নেসের মজুত বেড়েছে।

বর্তমানে বিপিসির কাছে এক লাখ ২০ হাজার মেট্রিক টন ফার্নেস অয়েল মজুত আছে। এ কারণে দুই মাস ধরে ফার্নেস অয়েল আমদানি করছে না বিপিসি।

বিপিসি’র বিপণন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ছয় মাস আগে আন্তর্জাতিক বাজারে ফার্নেস অয়েলের ব্যারেলপ্রতি ক্রয়মূল্য ছিল ৩৪২ মার্কিন ডলার, যা গত ১৮ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক বাজারে বুকিংমূল্য ছিল ২৯৭ মার্কিন ডলার। অর্থাৎ গত ছয় মাসের ব্যবধানে আন্তর্জাতিক বাজারের ফার্নেস অয়েলের দাম কমেছে প্রতি ব্যারেলে ৪৫ ডলার।

বিপিসি’র পেট্রোলিয়াম পণ্য বিক্রয় পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে বিপিসি ফার্নেস অয়েল বিক্রির পরিমাণ ছিল ৯ লাখ ছয় হাজার ৭৭১ মেট্রিক টন। একইভাবে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে সাত লাখ ১১ হাজার ৮৮৯ মেট্রিক টন, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে আট লাখ ছয় হাজার ৪৪৪ মেট্রিক টন, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৯ লাখ ২৫ হাজার ১৫০ মেট্রিক টন এবং ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বিক্রয় ছিল ছয় লাখ ৮৩ হাজার ৮৮০ মেট্রিক টন।

গত অর্থবছরের মোট ফার্নেস অয়েল বিক্রির মধ্যে বিদেশ থেকে আমদানির পরিমাণ ছিল তিন লাখ ২০ হাজার মেট্রিক টন এবং অপরিশোধিত তেল (ক্রুড) থেকে পরিশোধন করা হয় তিন লাখ ৩৮ হাজার মেট্রিক টন। আর বাকি ২৬ হাজার মেট্রিক টন আগের অর্থবছরের মজুত তেল ছিল।

হিসাব ও বিপণন বিভাগের কর্মকর্তারা বলেন, বর্তমানে বিপিসি ফার্নেস অয়েল বিক্রয়ে লোকসানে আছে। শুধু ভ্যাট ও অন্যান্য করের কারণে লিটারপ্রতি গড়ে লোকসান ১০ টাকা। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান হয়ে আমাদের শুল্ককর ও ভ্যাট পরিশোধ করতে হয়। অথচ বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো পুরোপুরি শুল্কমুক্ত আমদানি সুবিধা পাচ্ছে। যদিও ২০১৮ সালের শেষ দিকে আন্তর্জাতিক বাজারের জ্বালানি তেলের দাম ও দেশীয় বাজরের ডলারের বিনিময় হার বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রতি লিটার ফার্নেস অয়েলে ১৫ টাকা ৬০ পয়সা লোকসান গুনছে বিপিসি। একই সময়ে ডিজেলে ৯ টাকা চার পয়সা লোকসান হয়েছিল।

তারা আরও বলেন, বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে ফার্নেস অয়েলের দাম কমেছে। এতে বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো নিজের চাহিদা অনুসারের ফার্নেস অয়েল আমদানি করছে। আবার তারা সব ধরনের শুল্ক ও করমুক্ত সুবিধায় আমদানির সুযোগ পাচ্ছে। এতে তারা প্রাইস বেনিফিট পাচ্ছে। ফলে বিপিসি থেকে ফার্নেস কিনছে না। অপরদিকে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়লে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো আবারও বিপিসি থেকে ফার্নেস অয়েল কেনা শুরু করেছে। এতে ফার্নেস অয়েলের চাহিদা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিপিসির লোকসানও বাড়ে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেসরকারি একটি বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের পরিচালক শেয়ার বিজকে বলেন, প্রতিযোগিতামূলক বাজারে যেখানে কম দামে ফার্নেস পাওয়া যাবে, সেখান থেকে আমরা তেল কিনি সেটা স্থানীয় উৎস হোক কিংবা আন্তর্জাতিক বাজার হোক। এটাই স্বাভাবিক। আর এটা আমাদের ব্যবসায়ের অংশ। এখানে আমাদের দোষের কিছু নেই। তবে বিপিসি এটা করতে পারে আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করে মূল্য নির্ধারণ করে। তখন সবাই বিপিসি থেকেই নেবে।

জানতে চাইলে বিপিসির পরিচালক (বিপণন) সৈয়দ মেহদী হাসান শেয়ার বিজকে বলেন, মূলত ফানের্সের অতিরিক্ত মজুত থাকায় দুই মাস ধরে আমরা ফার্নেস অয়েল আমদানি করছি না। মূলত বিশ্ববাজারে ফার্নেসের দাম কম থাকায় বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো নিজেরাই আমদানি করছে। তাদের আমদানিতে কর অব্যাহতি আছে, যা বিপিসির নেই। এছাড়া সরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর যে চাহিদা ছিল, তারাও সেই পরিমাণ ক্রয় করেনি। এদিকে আমাদের রিফাইনারিতেও ফার্নেস রিফাইন হয়। সব মিলিয়ে আমাদের ফার্নেসের মজুত বেড়েছে। এ কারণে দুই মাস ধরে ফার্নেস আমদানি হচ্ছে না। তবে লোকসানে নেই।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০