Print Date & Time : 17 June 2025 Tuesday 12:09 pm

ফার্নেস অয়েলের দাম সাড়ে ১৩ মাসে দ্বিগুণ

নিজস্ব প্রতিবেদক” দেশে পেট্রোল, অকটেন, ডিজেল ও কেরোসিনের দাম সর্বশেষ বাড়ানো হয়েছে গত ৬ আগস্ট। এর প্রভাবে বাস ও লঞ্চ ভাড়া বৃদ্ধি পেয়েছে। পরিবহন ভাড়া বৃদ্ধির প্রভাবে বেড়ে গেছে সব ধরনের নিত্যপণ্যের দাম। এরই মধ্যে আবার বৃদ্ধি করা হয়েছে আরেক জ্বালানি পণ্য তথা ফার্নেস অয়েলের দাম। গত প্রায় সাড়ে ১৩ মাসে এ জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি পেয়ে দ্বিগুণ হয়েছে।

সূত্রমতে, মূলত বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহার করা হয় ফার্নেস অয়েল। আর সাড়ে ১৩ মাসে সাত দফা বাড়ানো হয়েছে ফার্নেস অয়েলের দাম। ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় বেড়েই চলেছে। এছাড়া কিছু শিল্প-কারখানায়ও সামান্য পরিমাণে এ জ্বালানির ব্যবহার রয়েছে। তবে সাধারণ গ্রাহক পর্যায়ে এর ব্যবহার নেই। তাই ফার্নেস অয়েলের দাম বাড়লেও তা নিয়ে কোনো আলোচনা বা সমালোচনা হয় না। এ সুযোগে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) কোনো ঘোষণা ছাড়াই দাম বাড়িয়ে চলেছে।

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্তমানে গ্যাস সংকটে প্রায় তিন হাজার মেগাওয়াট গ্যাসচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ রাখতে হয়েছে। আবার লোকসান কমানোর জন্য ডিজেলের বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোও বন্ধ রাখার নির্দেশনা দিয়েছে মন্ত্রণালয়। এতে বাধ্য হয়েই ফার্নেস অয়েলের কেন্দ্রগুলোয় উৎপাদন বাড়াতে হয়েছে। তবে দাম বেড়ে যাওয়ায় গত অর্থবছর পিডিবির উৎপাদন ব্যয় তথা লোকসান প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে।

বিপিসির তথ্যমতে, ২০১৬ সালের ১ এপ্রিল দেশে ফার্নেস অয়েলের দাম লিটারে ১৮ টাকা কমানো হয়েছিল। আন্তর্জাতিক বাজারে নি¤œমুখী থাকায় এ জ্বালানি তেলের দাম সে সময় লিটারে ৪২ টাকা নির্ধারণ করা হয়। এরপর পাঁচ বছর তিন মাস দেশের বাজারে এ দাম স্থিতিশীল ছিল। যদিও আন্তর্জাতিক বাজারে এর মধ্যে ফার্নেস অয়েলের দাম ওঠানামা করে। ২০২০ সালে বিশ্বব্যাপী করোনা শুরুর পর এ দাম অনেকখানি কমে যায়। তবে দেশের বাজারে কমানো হয়নি ফার্নেস অয়েলের দাম।

এদিকে আন্তর্জাতিক বাজারে কয়েক মাস ধরেই টানা বাড়ছে ফার্নেস অয়েলসহ সব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম। এতে গত বছর ৪ জুলাই ফার্নেস অয়েলের দাম ২৬ দশমিক ১৯ শতাংশ বাড়ানো হয়। সে সময় এ জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে হয় লিটারে ৫৩ টাকা। এর তিন মাস পর ৮ অক্টোবর আবারও বাড়ানো হয় ফার্নেস অয়েলের দাম। সে সময় এ জ্বালানি পণ্যটির দাম লিটারে ছয় টাকা বা ১১ দশমিক ৩২ শতাংশ বৃদ্ধি করা হয়। এতে ফার্নেস অয়েলের দাম বেড়ে দাঁড়ায় ৫৯ টাকা।

৫ নভেম্বর আরেক দফা বাড়ানো হয় ফার্নেস অয়েলের দাম। লিটারে তিন টাকা বা পাঁচ দশমিক শূন্য আট শতাংশ বাড়ানো হয় এ দাম। এতে জ্বালানি পণ্যটির দাম বেড়ে দাঁড়ায় লিটারে ৬২ টাকা। তবে আন্তর্জাতিক বাজারে কিছুটা নি¤œমুখী হওয়ায় ১৬ ডিসেম্বর এ জ্বালানির দাম কমিয়ে ৬০ টাকা নির্ধারণ করা হয়।

এর প্রায় তিন মাস পর ফার্নেস অয়েলের দাম লিটারে সাত টাকা বা ১১ দশমিক ৬৭ শতাংশ বাড়ানো হয়। গত ১০ মার্চ লিটারে ৬৭ লিটারে দাম নির্ধারণের দুই সপ্তাহ পর আবারও ফার্নেস অয়েলের দাম সাত টাকা বা ১০ দশমিক ৪৫ শতাংশ বাড়ানো হয়। এতে ২৫ মার্চ ফার্নেস অয়েলের দাম বেড়ে দাঁড়ায় ৭৪ টাকা।

সর্বশেষ ১৫ আগস্ট ফার্নেস অয়েলের দাম প্রতি লিটারে ১১ টাকা তথা ১৪ দশমিক ৮৬ শতাংশ বৃদ্ধি করা হয়েছে। এতে প্রতি লিটার ফার্নেস অয়েলের দাম বেড়ে হয়েছে ৮৫ টাকা। এটি বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ দাম। সব মিলিয়ে প্রায় সাড়ে ১৩ মাসে ফার্নেস অয়েলের দাম লিটারে ৪৩ টাকা বা ১০২ দশমিক ৩৮ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে।

সূত্র জানায়, সরকারি-বেসরকারি মিলে দেশে বর্তমানে ফার্নেস অয়েলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে ৪৬টি। এর মধ্যে ২৬টি বেসরকারি আইপিপি (ইন্ডিপেন্ডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসার) ও রেন্টাল কেন্দ্র এবং ২০টি সরকারি কেন্দ্র। এ বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোয় মাসে ৬০ হাজার টন ফার্নেস অয়েলের চাহিদা রয়েছে। এর মধ্যে সরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোয় ফার্নেস অয়েলের চাহিদা মাসে ১৫ হাজার টন। আর বেসরকারি আইপিপিগুলোয় মাসে চাহিদা থাকে ৪৫ হাজার টন।

এদিকে বিশেষ অনুমোদন নিয়ে ২০১৪ সাল থেকে সরাসরি ফার্নেস অয়েল আমদানি শুরু করে বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো। এরপর আইপিপিগুলোয় ফার্নেস অয়েল সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। যদিও আইপিপিগুলোকে শর্ত দেয়া হয়েছিল চাহিদার ১০-১২ শতাংশ ফার্নেস অয়েল বিপিসি থেকে নিতে হবে। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানির দাম কম থাকায় চুক্তির শর্ত মানত না আইপিপিগুলো।