ফার্নেস অয়েলের দাম ৯ মাসে ৭৬% বাড়িয়েছে বিপিসি

নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম সর্বশেষ বাড়ানো হয় ৪ নভেম্বর। এর প্রভাবে পরিবহন ভাড়া বৃদ্ধি পেয়েছে। এ নিয়ে নানা সমালোচনা হলেও কোনো ধরনের ঘোষণা ছাড়াই বৃদ্ধি করা হচ্ছে আরেক জ্বালানি পণ্য তথা ফার্নেস অয়েলের দাম। গত প্রায় ৯ মাসে এ জ্বালানির দাম বৃদ্ধি করা হয়েছে ৭৬ শতাংশের বেশি।

সূত্রমতে, মূলত বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহার করা হয় ফার্নেস অয়েল। ফলে ফার্নেস অয়েলের দাম বাড়ায় বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় বেড়েই চলেছে। এছাড়া কিছু শিল্প-কারখানায়ও সামান্য পরিমাণে এ জ্বালানির ব্যবহার রয়েছে। তবে সাধারণ গ্রাহক পর্যায়ে এর ব্যবহার নেই। তাই ফার্নেস অয়েলের দাম বাড়লেও তা নিয়ে কোনো আলোচনা বা সমালোচনা হচ্ছে না। আর বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনও (বিপিসি) কোনো ধরনের ঘোষণা ছাড়া দাম বাড়িয়েই চলেছে।

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্তমানে গ্যাসের সংকটে প্রায় তিন হাজার মেগাওয়াটের গ্যাসচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ রাখতে হয়েছে। এতে বাধ্য হয়েই তেলচালিত বিশেষত ফার্নেস অয়েলের কেন্দ্রগুলোয় উৎপাদন বাড়াতে হয়েছে। তবে এর দাম বেড়ে যাওয়ায় চলতি অর্থবছর পিডিবির উৎপাদন ব্যয় তথা লোকসান প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা বৃদ্ধি পাবে। আর অতিরিক্ত তেল সরবরাহ করতে গিয়ে বিপিসিও পড়েছে বিপাকে।

বিপিসির তথ্যমতে, ২০১৬ সালের ১ এপ্রিল দেশে ফার্নেস অয়েলের দাম লিটারে ১৮ টাকা কমানো হয়েছিল। আন্তর্জাতিক বাজারে নিন্মমুখী থাকায় এ জ্বালানি তেলের দাম সে সময় কমিয়ে লিটারে ৪২ টাকা নির্ধারণ করা হয়। এরপর পাঁচ বছর তিন মাস দেশের বাজারে এ দাম স্থিতিশীল ছিল। যদিও আন্তর্জাতিক বাজারে এর মধ্যে ফার্নেস অয়েলের দাম ওঠানামা করে।

এদিকে আন্তর্জাতিক বাজারে কয়েক মাস ধরেই টানা বাড়ছে ফার্নেস অয়েলসহ সব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম। এতে গত ৪ জুলাই ফার্নেস অয়েলের দাম ২৬ দশমিক ১৯ শতাংশ বাড়ানো হয়। সে সময় এ জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে হয় লিটারে ৫৩ টাকা। এর তিন মাস পর ৮ অক্টোবর আবারও বাড়ানো হয় ফার্নেস অয়েলের দাম। সে সময় এ জ্বালানি পণ্যটির দাম লিটারে ছয় টাকা বা ১১ দশমিক ৩২ শতাংশ বৃদ্ধি করা হয়। এতে ফার্নেস অয়েলের দাম বেড়ে দাঁড়ায় ৫৯ টাকা।

৫ নভেম্বর আরেক দফা বাড়ানো হয় ফার্নেস অয়েলের দাম। লিটারে তিন টাকা বা পাঁচ দশমিক শূন্য আট শতাংশ বাড়ানো হয় এ দাম। এতে জ্বালানি পণ্যটির দাম বেড়ে দাঁড়ায় লিটারে ৬২ টাকা। তবে আন্তর্জাতিক বাজারে কিছুটা নি¤œমুখী হওয়ায় ১৬ ডিসেম্বর এ জ্বালানির দাম কমিয়ে ৬০ টাকা নির্ধারণ করা হয়।

এর প্রায় তিন মাস পর ফার্নেস অয়েলের দাম লিটারে সাত টাকা বা ১১ দশমিক ৬৭ শতাংশ বাড়ানো হয়। গত ১০ মার্চ লিটারে ৬৭ লিটারে দাম নির্ধারণের দুই সপ্তাহ পর আবারও ফার্নেস অয়েলের দাম সাত টাকা বা ১০ দশমিক ৪৫ শতাংশ বাড়ানো হয়। এতে ২৫ মার্চ ফার্নেস অয়েলের দাম বেড়ে দাঁড়ায় ৭৪ টাকা। এটি বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ দাম। সব মিলিয়ে প্রায় ৯ মাসে ফার্নেস অয়েলের দাম লিটারে ৩২ টাকা বা ৭৬ দশমিক ১৯ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে।

সূত্র জানায়, সরকারি-বেসরকারি মিলে দেশে বর্তমানে ফার্নেস অয়েলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে ৪৬টি। এর মধ্যে ২৬টি বেসরকারি আইপিপি (ইন্ডিপেন্ডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসার) ও রেন্টাল কেন্দ্র এবং ২০টি সরকারি কেন্দ্র। এ বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোয় মাসে ৬০ হাজার টন ফার্নেস অয়েলের চাহিদা রয়েছে। এর মধ্যে সরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোয় ফার্নেস অয়েলের চাহিদা মাসে ১৫ হাজার টন। আর বেসরকারি আইপিপিগুলোয় মাসে চাহিদা থাকে ৪৫ হাজার টন।

এদিকে বিশেষ অনুমোদন নিয়ে ২০১৪ সাল থেকে সরাসরি ফার্নেস অয়েল আমদানি শুরু করে বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো। এরপর আইপিপিগুলোয় ফার্নেস অয়েল সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। যদিও আইপিপিগুলোকে শর্ত দেয়া হয়েছিল চাহিদার ১০-১২ শতাংশ ফার্নেস অয়েল বিপিসি থেকে নিতে হবে। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানির দাম কম থাকায় চুক্তির শর্ত মানত না আইপিপিগুলো। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানির দাম বেড়ে গেলে আইপিপিগুলো সেই শর্ত কাজে লাগিয়ে বিপিসি থেকে ফার্নেস অয়েল নেয়া শুরু করেছে।

অন্যদিকে জানুয়ারির শুরু থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য নিয়ে অস্থিরতা তৈরি হয়। এতে হঠাৎ করে ফার্নেস অয়েল সংগ্রহ নিয়ে ঝামেলায় পড়েছে বিপিসি। আর চলতি বছর প্রথম ছয় মাসের জন্য বিপিসি ৮০ হাজার টন ফার্নেস অয়েল কিনলেও, পরে শুধু পিডিবি একাই চাহিদা দিয়েছে আরও দুই লাখ ৮০ হাজার টনের। এর পরিপ্রেক্ষিতে আরও এক লাখ টন ফার্নেস অয়েল কেনার প্রক্রিয়া শুরু করেছে বিপিসি।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০