ফার্স্ট ক্যাপিটালের সিইওর বিরুদ্ধে টাকা-শেয়ার আত্মসাতের অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের পুঁজিবাজারে স্বল্প মূলধনি প্ল্যাটফর্মে (এসএমই মার্কেট) তালিকাভুক্ত কোম্পানি মাস্টার ফিড এগ্রোটেকের প্রয়াত পরিচালক রফিকুল আলমের স্ত্রী উম্মে হাবিবা ইয়াসমিনের শেয়ার ও টাকা আত্মসাতের চেষ্টা করার অভিযোগ উঠেছে। এ ধরনের জালিয়াতি চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে ফার্স্ট ক্যাপিটাল সিকিউরিটিজের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. কাউসার আল মামুনের বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে প্রতিকার চেয়ে গতকাল সোমবার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বরাবর চিঠি দিয়েছেন উম্মে হাবিবা।

তথ্যমতে, পুঁজিবাজারে বেশ কিছুদিন ধরে বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউসের বিরুদ্ধে বিনিয়োগকারীদের টাকা আত্মসাতের প্রমাণ ও অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। এতে বাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থা কমে যাচ্ছে, যা প্রতিরোধে নিয়ন্ত্রক সংস্থার তৎপরতার মধ্যেই নতুন করে এ অভিযোগ উঠেছে।

চিঠিতে উম্মে হাবিবা ইয়াসমিন বলেছেন, গত বছরের ১৫ জুলাই আমার স্বামী (মাস্টার ফিডের প্রয়াত পরিচালক) মৃত্যুবরণ করেন। ফলে আদালতের রায়ে উত্তরাধিকার সার্টিফিকেট অনুযায়ী স্বামীর মোট শেয়ারের ২৫ শতাংশ বা ১৭ লাখ ৬২ হাজার ৫০০টি শেয়ার পান তিনি, যা নিজের নামে নিতে ফার্স্ট ক্যাপিটাল সিকিউরিটিজের মতিঝিল শাখায় একটি বিও অ্যাকাউন্ট হিসাব খুলেন। যার বিও আইডি নং ১২০৪৪৩০০৭৫৮৭৪৯৪৯। পরবর্তীকালে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) অনুমোদনক্রমে সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিডিবিএল) মাধ্যমে ওই বিও হিসাবে শেয়ার স্থানান্তর করা হয়।

এরপর পর্যায়ক্রমে শেয়ার বিক্রি করে এবং বিভিন্ন তারিখে ফার্স্ট ক্যাপিটালের সিইও মো. কাউসার আল মামুনের অনুমোদনের মাধ্যমে টাকা উত্তোলন করেন উম্মে হাবিবা। এক্ষেত্রে গত ১৪ থেকে ১৮ মে পর্যন্ত সময়ে এক কোটি ১৮ লাখ টাকা উত্তোলন করেন তিনি। কিন্তু এরপর অজ্ঞাত কারণে সিইও কাউসার উম্মে হাবিবার পরিচয় নিয়ে বিভিন্ন অজুহাত তৈরি করে টাকা দিতে বিলম্ব করার মাধ্যমে টাকা আত্মসাতের চেষ্টা করেন বলে অভিযোগ করেন উম্মে হাবিবা।

এর ধারাবাহিকতায় উম্মে হাবিবা গত ১৭ জুলাই তার বাবা, পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দেয়া মো. আবুল বাসার ও মাস্টার ফিডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. কবীর হোসেনকে নিয়ে ফার্স্ট ক্যাপিটালে যান। শেয়ার বিক্রির টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানানোর কারণ জানতে চাইলে মো. কাউসার আল মামুন তাদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন।

কাউসার আল মামুন ওই সময় উম্মে হাবিবার পরিচয় নিয়ে বারবার সন্দেহ করেন বলে চিঠিতে জানানো হয়েছে। এমনকি তিনি বলেন, আপনি উম্মে হাবিবা ইয়াসমিন নন এবং আপনার সঙ্গের ব্যক্তি আপনার বাবা নন, এগুলো সব সাজানো নাটক। তখন তাকে প্রমাণ হিসেবে সব কাগজ মিলিয়ে দেখতে বলেন উম্মে হাবিবা। কিন্তু মো. কাউসার আল মামুন কোনোভাবে প্রমাণ করতে রাজি হননি এবং অপমানজনক ও কুরুচিপূর্ণ ভাষা ব্যবহারের মাধ্যমে হেনস্তা করেন।

চিঠিতে উম্মে হাবিবা আরও বলেন, ফার্স্ট ক্যাপিটালের সিইও’র আচরণ কাম্য ছিল না, যা তার সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে দেখলেই প্রমাণিত হবে। একই সঙ্গে তিনি কমিশনে প্রমাণ হিসেবে রফিকুল আলমের মৃত্যু সনদ, আদালতের উত্তরাধিকার আদেশ, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের অনুমোদন কপি, জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি, ফান্ড রিকুইজিশন সিøপ এবং রফিকুল আলম ও উম্মে হাবিবা ইয়াসমিনের কাবিননামার কাগজ জমা দিয়েছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফার্স্ট ক্যাপিটাল সিকিউরিটিজের সিইও মো. কাউসার আল মামুন শেয়ার বিজকে বলেন, বিভিন্ন তথ্যের ভিত্তিতে এবং প্রমাণের মাধ্যমে সন্দেহ হওয়ায় আমি বিএসইসির কাছে অভিযোগ জানিয়েছি। এ বিষয়ে কমিশন তদন্ত করবে বলে জানা গেছে। এখানে আমি তো কোনো শেয়ার বা টাকা আত্মসাৎ করতে যাইনি। কারণ শেয়ার ও টাকা যে নির্দিষ্ট বিও হিসাবে থাকার কথা সেখানেই রয়েছে। কমিশন তদন্ত করে দেখবে যে, তিনি কোম্পানিটির মৃত পরিচালকের স্ত্রী কি না। এরপর সে বিষয়ে তদন্ত ও সত্যতা নিশ্চিত করবে কমিশন। যদি তদন্তের পর বিএসইসি সত্যতা নিশ্চিত করে আমাকে তাকে পাওনা পরিশোধ করতে বলে আমি করব। এছাড়া তদন্ত শেষে বিএসইসি অন্য যে নির্দেশনা দেবে, সে অনুযায়ী কাজ করবেন বলে জানান তিনি।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০