ফার্স্ট ফাইন্যান্সের মুনাফা জালিয়াতির অভিযোগ: ব্যবস্থা নিতে বিএসইসিতে বিনিয়োগকারীদের চিঠি

নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রভিশন না রেখে মুনাফা বেশি দেখানোর অভিযোগ উঠেছে পুঁজিবাজারে আর্থিক খাতে তালিকাভুক্ত ফার্স্ট ফাইন্যান্স কোম্পানির বিরুদ্ধে। একই সঙ্গে মুনাফার বিপরীতে লভ্যাংশও ঘোষণা কারায় কোম্পানিটির শেয়ারদর অস্বাভাবিকভাবে বাড়তে থাকে। এ বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে (বিএসইসি) আবেদন করেছেন বিনিয়োগকারীরা।

বিনিয়োগকারীদের পক্ষে মো. আনোয়ারুল ইসলাম স্বাক্ষরিত বিএসইসির চেয়ারম্যান বরাবর পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, জালিয়াতির মাধ্যমে লভ্যাংশ ঘোষণা একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য বিশ্লেষণে কোম্পানিটি জালিয়াতি করেছে বলে প্রমাণিত। এ বিষয়ে তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানানো হয় গতকাল বিএসইসিতে পাঠানো চিঠিতে।

উল্লেখ্য, গত ৯ মে ‘ফার্স্ট ফাইন্যান্সের মুনাফা জালিয়াতি’ শীর্ষক শিরোনামে প্রতিবেদনটি শেয়ার বিজে প্রকাশিত হয়। ফার্স্ট ফাইন্যান্স কোম্পানির মুনাফা জালিয়াতির বিষয়ে দৈনিক শেয়ার বিজসহ কয়েকটি দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদনের কপি বিনিয়োগকারীরা আবেদনের সঙ্গে সংযুক্ত করে দিয়েছেন।

তথ্যমতে, ২০১৬ সালের ৩১ ডিসেম্বরে শেষ হওয়া আর্থিক বছরে কোম্পানিটি বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলার অনুযায়ী প্রয়োজনীয় প্রভিশন রাখেনি উল্লেখ করেছে ফার্স্ট ফাইন্যান্সের নিরীক্ষক প্রতিষ্ঠান জি কিবরিয়া অ্যান্ড কোং চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টসের মতামতে। নিরীক্ষকের মতে, ঋণের বিপরীতে কোম্পানিটিকে ছয় কোটি ৭০ লাখ ৮৭ হাজার ৮৬৪ টাকা প্রভিশন রাখতে হতো। কিন্তু তারা তা রাখেনি। পাশাপাশি কোম্পানিটি দুই কোটি ১৯ লাখ ৬১ হাজার ৯২ টাকার ইনকাম ট্যাক্স প্রভিশনও রাখেনি। যদি এ প্রভিশন রাখা হতো তাহলে কোম্পানিটির মুনাফা ও শেয়ারপ্রতি আয় মারাত্মকভাবে প্রভাবিত হতো।

কোম্পানির ক্যাটাগরি উন্নতি হলে শেয়ারদরে বড় ধরনের প্রভাব পড়ে। বিশেষ করে ‘জেড’ থেকে ‘বি’ বা ‘এ’ ক্যাটাগরিতে স্থানান্তর হলে ওই কোম্পানির দর রাতারাতি অস্বাভাবিকভাবে বাড়ে। আর এ সুযোগ নেয় অনেক কোম্পানি। ভুয়া হিসাব-নিকাশের মাধ্যমে কোম্পানির মুনাফা দেখিয়ে হাতিয়ে নেয় বিপুল অর্থ। ফার্স্ট ফাইন্যান্সের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ পাওয়া গেছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ফার্স্ট ফাইন্যান্সের ৭০ কোটি টাকা প্রভিশন ঘাটতি রয়েছে। এ প্রভিশন ঘাটতির বিপরীতে সঞ্চিতি না রেখে প্রতিষ্ঠানটি মুনাফা দেখিয়েছে। নানা ধরনের অনিয়মের মাধ্যমে তথ্য গোপন করে তারা পাঁচ শতাংশ বোনাস ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে। কেবল শেয়ারের দর বৃদ্ধির জন্য কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ অত্যন্ত কৌশলে এটি করেছে বলে জানা গেছে। ফলে কোম্পানিটির শেয়ার বেড়ে যায় ৪০ শতাংশেরও বেশি।

ডিএসই সূত্রে জানা গেছে, বছর শেষে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় দেখানো হয় ৪৩ পয়সা। এদিকে মুনাফা দেখানোর ফলে পুঁজিবাজারে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম তরতর করে বাড়তে থাকে। গত ২৬ এপ্রিলেও কোম্পানিটির শেয়ারের দাম ছিল ১০ টাকা, যা সর্বশেষ ১১ মে ১৪ টাকা ১০ পয়সায় লেনদেন হয়েছে। অর্থাৎ আট কর্মদিবসের লেনদেনে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম বেড়েছে ৪১ শতাংশ। গতকাল রোববার কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ার লেনদেন হয় ১৩ টাকায়।

‘জেড’ ক্যাটাগরির এ কোম্পানিটির অতিরিক্ত পারিবারিক শেয়ারহোল্ডিং পজিশন ছিল। আর তা বাংলাদেশ ব্যাংকের বিশেষ পরিদর্শনে ধরা পড়ে। পরে তা কমাতে নির্দেশনা দেয় ব্যাংক। সে নির্দেশ অমান্য করে এখনও পাঁচটি বেনামি ও নামসর্বস্ব পারিবারিক কোম্পানিসহ তাদের ব্যক্তিগত শেয়ারহোল্ডিং ৪২ শতাংশের ওপরে রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনার পর পারিবারিক অতিরিক্ত শেয়ারহোল্ডিং পজিশন কমিয়ে এনেছে বলে দাবি করেছেন ফার্স্ট ফাইন্যান্সের কোম্পানি সচিব সারওয়ার শফিক।

জানা গেছে, প্রতিটি ফাইন্যান্স কোম্পানিটিতে আমানতের বিপরীতে সুদ প্রভিশন করার নিয়ম বাধ্যতামূলক থাকলেও ফার্স্ট ফাইন্যান্স তা করেনি। যদি আমানতের বিপরীতে সুদ প্রভিশন করা হতো তাহলে প্রায় ২০ কোটি টাকা প্রভিশন করতে হতো। এ অবস্থায় কোম্পানিটির ইনকাম ট্যাক্স প্রভিশন, জেনারেল প্রভিশন, চলতি ও দীর্ঘমেয়াদি দায়ের ঘাটতি এবং সুদের বিপরীতে প্রভিশন সব মিলিয়ে দাঁড়ায় ৬০ কোটি টাকা। এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে ইনকাম ট্যাক্স প্রতিবেদন চাইলে তা দাখিল করতে ব্যর্থ হয়েছে কোম্পানিটি।

 

 

 

 

 

Add Comment

Click here to post a comment

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০