Print Date & Time : 24 June 2025 Tuesday 4:07 am

ফার্স্ট ফাইন্যান্সে খেলাপি হলো ফাহিম স্টিল

সাইফুল আলম, চট্টগ্রাম: ২০১৭ সাল থেকে পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত আর্থিক প্রতিষ্ঠান ফার্স্ট ফাইন্যান্স লিমিটেড নিয়মিত লোকসানে আছে। এর মধ্যে লোকসানের বোঝা আরও বাড়ল চট্টগ্রামের ফাহিম স্টিল রি-রোলিং মিলস লিমিটেডের কারণে। ব্যাংক খাতে আলোচিত ঋণখেলাপি মাবিয়া গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠানটি সম্প্রতি খেলাপি হলো ফার্স্ট ফাইন্যান্সে।

ফার্স্ট ফাইন্যান্সের খেলাপির তালিকায় সাম্প্রতিক সময়ে ১২ কোটি ৬৭ লাখ টাকা যুক্ত হয়েছে ফাহিম স্টিলের। যদিও মাবিয়া গ্রুপের কয়েক বছর আগে প্রধান ব্যবসা ছিল জাহাজ আমদানি, জাহাজ ভাঙা ও ইস্পাত উৎপাদন। এসব ব্যবসায় ব্যর্থতার দায়ে খেলাপি হয়েছে একাধিক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে।

ফার্স্ট ফাইন্যান্স লিমিটেড সূত্রে জানা যায়, ব্যবসার প্রয়োজনে ২০১৩ ও ২০১৪ সালের দিকে সীতাকুণ্ডের ফাহিম স্টিল রি-রোলিং মিলসের নামে ফার্স্ট ফাইন্যান্স লিমিটেডের আগ্রাবাদ শাখা থেকে ঋণ নেয়, যা গত ৩ আগস্ট পর্যন্ত সুদাসলে দাঁড়ায় ১২ কোটি ৬৭ লাখ ২২ হাজার টাকা। আর  এ খেলাপি পাওনা আদায়ে প্রতিষ্ঠানটির সীতাকুণ্ড, খুলশী ও কুমিল্লায় মোট ১১৮ দশমিক ৯৬ শতক জমি নিলামে বিক্রির প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। আগামী ১০ সেপ্টেম্বর ফার্স্ট ফাইন্যান্সের আগ্রাবাদ শাখায় এ নিলাম অনুষ্ঠিত হবে। এতে আগ্রহী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান এ নিলামে সরাসরি অংশগ্রহণ করতে পারবেন।

সংশ্লিষ্ট ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান সূত্রে, সীতাকুণ্ডের জাহানারাবাদ এলাকার মহরম আলীর তিন সন্তান জাহাঙ্গীর আলম, ফরিদুল আলম ও খোরশেদ আলম এ তিন সহোদর ২০০৮ সালের পর মেসার্স জিলানী ট্রেডার্স, ফাহিম স্টিল রি-রোলিং মিল, মাবিয়া শিপ ব্রেকার্স, মাবিয়া শিপ ব্রেকার্স ইউনিট-২, এফএমএস ইস্পাত শিপ ব্রেকিং, আলী স্টিল এন্টারপ্রাইজ ও মেসার্স খাজা আজমীর কর্পোরেশনের সমন্বয়ে গড়ে তোলেন মাবিয়া গ্রুপ।

সময়ের সঙ্গে তারা আস্তে আস্তে ব্যবসার পরিধি বাড়াতে থাকেন। কিন্তু তাদের অদূরদর্শী প্রকল্প গ্রহণ, প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা ও ব্যবসায়িক অনভিজ্ঞতা প্রভৃতি বিষয় বিবেচনা করেনি দি সিটি ব্যাংক, এবি ব্যাংক, মাকেন্টাইল ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক, যমুনা ব্যাংক, পদ্মা ব্যাংকসহ আরও কয়েকটি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানগুলোর পাওনা প্রায় ৮০০ কোটি টাকা, যা এখন গলার কাঁটা হয়ে আছে তাদের জন্য। ঋণের টাকা ফেরত পেতে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো চেক প্রত্যাখ্যানের জন্য এনআই অ্যাক্ট ও অর্থঋণ আদালতে শতাধিক মামলা করে, যা চলমান আছে।

চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস সূত্রে জানা যায়, মাবিয়া গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান মাবিয়া শিপ ব্রের্কাস সর্বশেষ ২০১৫-১৬ অর্থবছর ৮৭ কোটি ৬৩ লাখ টাকায় একটি জাহাজ আমদানি করেছিল। এরপর আর কোনো জাহাজ ভাঙার জন্য আমদানি করেনি কোম্পানিটি। পাশাপাশি জাহাজ ভাঙা ও ইস্পাত খাতের ব্যবসায়ীরা জানান, বর্তমানে তাদের কোনো ধরনের ব্যবসা চালু নেই। ব্যাংকঋণের দায়ে নতুন করে ব্যবসা চালু করতে পারছে না।

খেলাপি পাওনা পরিশোধে বিষয়ে জানতে মাবিয়া গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। ফলে তার মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে ফার্স্ট ফাইন্যান্স লিমিটেডের আগ্রাবাদ শাখার ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ শফি উদ্দিন শেয়ার বিজকে বলেন, ‘আমি এ প্রতিষ্ঠানে যোগদান করি ২০১৭ সালে, তখন এসে দেখি মাবিয়া গ্রুপের ফাহিম স্টিল রি-রোরিং মিলস লিমিটেডের ঋণ আছে। বর্তমানে সুদাসলে ১২ কোটি ৬৭ লাখ টাকা খেলাপি পাওনা আছে। আর এ ঋণ আদায়ে নিলামে বিক্রির চেষ্টা করছি। তবে আমার মনে হয় তারা আমাদের ঋণ আবার নিয়মিত করবে। তারা ঢাকার কিছু জমি বিক্রির চেষ্টা করছে। এতে কিছু প্রতিষ্ঠান কিছু পেমেন্ট পাবে।’

অন্যান্য ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে তো মাবিয়া গ্রুপের জাহাঙ্গীর আলমের তেমন যোগাযোগ নেই, আপনার সঙ্গে কি যোগাযোগ আছেÑএ প্রশ্নের উত্তরে শফি উদ্দিন বলেন, ‘আমার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ হয়। তার সঙ্গে ২০০৮ সাল থেকে আমার ব্যাংকিং সম্পর্ক।’

উল্লেখ্য, ২০১৭ সাল থেকে লোকসানি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয় ফার্স্ট ফাইন্যান্স লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটির সর্বশেষ প্রকাশিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুসারে ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৯ সালে নিট লোকসান হয় ৩৮ কোটি ২৩ লাখ টাকা, যা আগের বছরের (২০১৮) ৩০ সেপ্টেম্বর ছিল ৩৬ কোটি ২৫ লাখ টাকা। এর মধ্যে মালিকানা বদল হয়ে পরিচালনায় আসেন সদ্যপ্রয়াত সংসদ সদস্য ইসরাফিল আলম। সর্বশেষ ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৯ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন খাতে মোট ৮৭৪ কোটি টাকা ঋণ হিসেবে বিতরণ করে কোম্পানিটি। এর মধ্যে বেশিরভাগ বিনিয়োগই খেলাপি ঋণে পরিণত হয়।

ফার্স্ট ফাইন্যান্স লিমিটেড পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত হয ২০০৩ সালে। প্রতিষ্ঠানটির অনুমোদিত মূলধন ৫০০ কোটি টাকা। আর পরিশোধিত মূলধন ১১৬ কোটি টাকা। জেড ক্যাটেগরির কোম্পানিটিতে উদ্যোক্তা পরিচালকদের শেয়ার ৪১ দশমিক ৩১ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের ২২ দশমিক ৫৩ শতাংশ ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ৩৬ দশমিক ১৬ শতাংশ শেয়ার মালিকানা রয়েছে। কোম্পানিটি সর্বশেষ ২০১৪ সালে পাঁচ শতাংশ স্টক লভ্যাংশ দেয়।