Print Date & Time : 22 June 2025 Sunday 9:42 am

ফাস্টফুড ও কোমল পানীয় নিরাপদ করার উদ্যোগ নিন

খাদ্যনিরাপত্তা নিয়ে বিশ্বজুড়ে দিন দিন উদ্বেগ বাড়ছে। জনস্বাস্থ্য বিবেচনা করে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে দেশগুলোর সরকার পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। আমাদের দেশও এক্ষেত্রে একেবারে পিছিয়ে নেই। সরকারি-বেসরকারি নানা সংস্থা নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে কিছু প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এগুলো কতটা ফলপ্রসূ হচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলার অবকাশ অবশ্য রয়েছে। বিশেষত রাস্তার ধারে গড়ে ওঠা দোকানগুলোর খাবারের মান নিয়ে প্রশ্ন দীর্ঘদিনের। বিভিন্ন ধরনের কোমল পানীয় কিংবা এনার্জি ড্রিংকের উপাদানও দিন দিন উদ্বেগ বাড়াচ্ছে। তবে দুঃখজনক হলো, নানা উদ্যোগ সত্ত্বেও এসবের মান এখনও কাক্সিক্ষত স্তরে পৌঁছাতে পারেনি। জনস্বার্থ বিবেচনায় এ ধরনের খাদ্যপণ্য নিরাপদ করতে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।
গতকালের শেয়ার বিজে ‘ফাস্টফুড ও কোমল পানীয় নিষিদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ দাবি’ শিরোনামে একটি খবর প্রকাশ হয়েছে। বিশ্ব খাদ্য দিবস উপলক্ষে আয়োজিত বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বিশেষজ্ঞরা খাদ্যনিরাপত্তা নিয়ে কথা বলেছেন। সেখানে ফাস্টফুড ও কোমল পানীয় নিয়ে উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এটা অবশ্য নতুন নয়। বিশেষত রাস্তার পাশের ফাস্টফুড ও অতিরিক্ত ক্যাফেইনযুক্ত এনার্জি ড্রিংক নিয়ে উদ্বেগ ক্রমে বাড়ছে। এক্ষেত্রে নিরাপদ খাদ্য অধিদফতরসহ সংশ্লিষ্টদের আরও সজাগ হওয়া জরুরি। যদিও এ ব্যাপারে নানা উদ্যোগ রয়েছে, তবে সেগুলোর যথাযথ বাস্তবায়ন নিয়ে প্রশ্ন তোলার অবকাশ রয়েছে।
ওইসব খাদ্যপণ্যের বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার ক্ষেত্রে অবশ্য সতর্কতার ব্যাপার রয়েছে। কারণ ফাস্টফুড কিংবা এনার্জি ড্রিংক উৎপাদন ও বিপণনের সঙ্গে হাজার হাজার মানুষের জীবিকা জড়িত। শুধু রাজধানীতেই দিনের দ্বিতীয় ভাগে, বিশেষত সন্ধ্যায় কোটি কোটি টাকার ফাস্টফুডের ব্যবসা হচ্ছে। এতে অধিকাংশ ক্ষেত্রে নিম্নআয়ের মানুষ কিংবা নতুন উদ্যোক্তারা জড়িত। এ ব্যবসার পরিমাণও ক্রমে বাড়ছে। এতে বিশাল অর্থ প্রবাহিত হচ্ছে। সেক্ষেত্রে হঠাৎ করে কঠিন সিদ্ধান্ত নিলে অনেক মানুষ বড় ক্ষতির মুখে পড়তে পারে। এজন্য সব দিক বিবেচনা করেই সিদ্ধান্ত নেওয়া জরুরি। ফাস্টফুড তৈরির উপাদান নিয়েও সতর্কতার ব্যাপার রয়েছে। নিম্নমানের ভোজ্যতেল থেকে পচা ও অস্বাস্থ্যকর সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। এ বিষয়েও সবাইকে পূর্ণমাত্রায় সচেতন হতে হবে। এসব খাবার খেয়ে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে অনেকেই। সেজন্য কেউ এ ধরনের কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।
এ ধরনের খাদ্যব্যবস্থা নিয়ে অবশ্য সম্প্রতি কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন লক্ষণীয়। ফাস্টফুড বিক্রয়কেন্দ্রগুলো এখন তাৎক্ষণিকভাবে খাবার তৈরি করে বিক্রিসহ নানা উদ্যোগ নিচ্ছে। এর মূল উদ্দেশ্য মানুষের আস্থা অর্জন। এতে তাদের প্রতি ভোক্তাদের আস্থাও বাড়ছে। এসব খাবারক্রেতাদের বড় অংশই তরুণ। এনার্জি ড্রিংক বা কার্বোনেটেড বেভারেজে ক্যাফেইনের নিরাপদ মাত্রা নিশ্চিতকরণে নিরাপদ খাদ্য অধিদফতর অবশ্য সক্রিয়। তবে এর কতটা বাস্তবায়ন সম্ভব হচ্ছে, তাতে সন্দেহ আছে অনেকের। এ ধরনের ড্রিংক উৎপাদনে জড়িতরা বেশ প্রভাবশালী বটে। তবে অনিরাপদ খাদ্য উৎপাদন বা বিক্রিতে যে বা যারাই জড়িত থাকুক, সবার বিরুদ্ধেই কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।
শুধু এনার্জি ড্রিংক কিংবা ফাস্টফুড নয়, সব ধরনের খাদ্যবস্তু নিরাপদ করার উদ্যোগ নেওয়া এখন সময়ের দাবি। এক্ষেত্রে নিরাপদ খাদ্য অধিদফতর কিংবা সংশ্লিষ্ট অন্য সংস্থাগুলোকে সবার আগে ব্যবস্থা নিতে হবে। এ সংস্থাগুলোর জনবল অবশ্য অপর্যাপ্ত। এক্ষেত্রে সরকারকে তাদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা জোগাতে হবে। তাদের কোনো ধরনের ঘাটতি থাকলে তা পূরণের উদ্যোগ নেওয়া চাই। একই সঙ্গে মানুষকে নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্য গ্রহণে সচেতন করে তোলাও জরুরি।