ফিচ রেটিংসের প্রাক্কলন: রেমিট্যান্স পতনে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমবে

 

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশের অর্থনীতি স্থিতিশীল থাকলেও ধারাবাহিকভাবে কমছে রেমিট্যান্স প্রবাহ। এতে অভ্যন্তরীণ ব্যয় হ্রাস পাবে। ফলে দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ১ শতাংশ থেকে কমে চলতি অর্থবছরে ৬ দশমিক ৬ শতাংশে নেমে আসবে। আগামী অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি আরো কমে ৬ দশমিক ৪ শতাংশে নেমে আসবে।

যুক্তরাজ্যভিত্তিক আন্তর্জাতিক ঋণমান নির্ণয়কারী প্রতিষ্ঠান ফিচ রেটিংস বাংলাদেশের বিষয়ে এসব তথ্য উল্লেখ করেছে। গতকাল সোমবার প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইটে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে।

ফিচ-এর প্রতিবেদনে বলা হয়, অবকাঠামোগত দুর্বলতা, রাজনৈতিক ঝুঁকি ও দুর্বল ব্যাংকিং খাত হলেও বাংলাদেশে স্থিতিশীল জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করছে। দেশটির বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ অনেক শক্তিশালী। ডিসেম্বর শেষে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩২ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি। কিন্তু রেমিট্যান্স আয় ক্রমেই  কমছে। এতে স্থানীয় ভোক্তা ব্যয় কমে যাচ্ছে। ফলে গত বছরের ৭ দশমিক ১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হলেও চলতি বছর শেষে তা কমে ৬ দশমিক ৬ শতাংশে নেমে আসবে। আগামী বছর তার আরও কমে ৬ দশমিক ৪ শতাংশে নেমে আসবে। ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক ঋণমান ‘বিবি মাইনাস’। ‘বিবি মাইনাস’ রেটিংয়ের মানে হলো দেশি ও আন্তর্জাতিক মুদ্রায় ঋণগ্রহণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থা স্থিতিশীল। টানা তৃতীয়বার এই মান স্থিতিশীল হিসেবে প্রকাশ করেছে ফিচ।

প্রতিবেদনে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে, আগামী ২০১৯ সালে বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এর আগে রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি হতে পারে। এটি হলে বিনিয়োগকারী ও তৈরি পোশাকের ক্রেতাদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এছাড়া রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি হলে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

দেশের ব্যাংকিং খাত ক্রমেই দুর্বল হচ্ছে বলেও ফিচের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। বিশেষ করে সরকারি ব্যাংকে সুশাসনের ব্যাপক ঘাটতি রয়েছে। খেলাপি ঋণের হার সিঙ্গেল ডিজিট থেকে ১০ দশমিক ৩ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। ব্যাংকগুলোর সংরক্ষিত মূলধনের পরিমাণ ১০ দশমিক ৬ শতাংশ থেকে কমে ১০ দশমিক ৩ শতাংশে নেমে এসেছে। সরকারি ছয় বাণিজ্যিক ব্যাংকের মূলধন সংরক্ষণের হার মাত্র ৫ দশমিক ৬ শতাংশ।

এদিকে চলতি অর্থবছরের জুলাই মাস থেকে ধারাবাহিকভাবে কমছে রেমিট্যান্স আহরণের পরিমাণ। জুলাইতে রেমিট্যান্স এসেছিল ১০০ কোটি মার্কিন ডলার। আগস্টে আবার রেমিট্যান্সের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় ১১৮ কোটি ডলারে। এরপর থেকে ধারাবাহিকভাবে পতন হয় রেমিট্যান্সের। অক্টোবর, নভেম্বর ও ডিসেম্বরে রেমিট্যান্স আসে যথাক্রমে ১০১ কোটি, ৯৫ কোটি ১৩ লাখ এবং ৯৫ কোটি ৮৭ লাখ মার্কিন ডলার। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে রেকর্ড পরিমাণ অর্থাৎ ১ হাজার ৫০০ কোটি ডলারের বেশি রেমিট্যান্স দেশে আসে। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ১ হাজার ৪৯৩ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। তবে চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) আহরিত রেমিট্যান্সের পরিমাণ ৬১৬ কোটি ডলারের কিছু বেশি। এদিকে চলতি অর্থবছরের বাজেটে দেশের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ২ শতাংশ লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে সরকার। আর অর্থনীতির গতি-প্রকৃতি বিশ্লেষণ করে সরকারের পক্ষ থেকে এরই মধ্যে দাবি করা হয়েছে, প্রবৃদ্ধি সাড়ে ৭ শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে। তবে সরকারের এ বক্তব্যের সঙ্গে একমত নয় অন্যতম প্রধান উন্নয়ন সহযোগী বিশ্বব্যাংক। সংস্থাটি জানিয়েছে, চলতি অর্থবছর বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে ৬ দশমিক ৮ শতাংশ।

গত মঙ্গলবার সংস্থাটির প্রকাশিত গ্লোবাল ইকোনমিক প্রসপেক্ট ২০১৭তে (বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সম্ভাবনা) এ কথা জানানো হয়। এতে উল্লেখ করা হয়, আগামী অর্থবছর প্রবৃদ্ধির হার হবে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ। অর্থবছরটিতে সরকারের প্রক্ষেপণ ৭ দশমিক ২ শতাংশ। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাংলাদেশের জন্য ৬ দশমিক ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি প্রাক্কলন করেছে সংস্থাটি। ওই অর্থবছরে সরকারের প্রাক্কলন ৭ দশমিক ৬ শতাংশ। ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি কিছুটা বেড়ে ৭ শতাংশে দাঁড়াবে। অন্যদিকে সরকার প্রক্ষেপণ দিয়েছে অর্থবছরটিতে প্রবৃদ্ধি হবে ৮ শতাংশ।

Add Comment

Click here to post a comment

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০