ইমাম হোসেন, মীরসরাই (চট্টগ্রাম) : সারাদেশের মতো মীররাইয়ে হু-হু করে বাড়ছে হাস-মুরগির খাবার ফিডের দাম। সেইসঙ্গে বাড়ছে ভ্যাকসিনের দামও। মধ্যস্বত্বভোগীরা উচ্চ মুনাফার লোভে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়াচ্ছে লেয়ারের বাচ্চার মূল্য। সে অনুযায়ী ডিমের দাম বাড়লেও পোলট্রি খামারিদের ব্যবসায় নেমেছে ধস। বন্ধ হয়ে যাচ্ছে বেশ কিছু খামার। এ শিল্প রক্ষায় সরকারকে লেয়ারের বাচ্চা, ফিড ও ওষুধের মূল্য নিয়ন্ত্রণের দাবি জানিয়েছেন খামারিরা।
সারাদেশের মুরগি খামারি ও ব্যবসায়ীরা খুবই প্রতিকূল সময় অতিবাহিত করছেন। মীরসরাই উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চলের যুবকরা একসময় খামারে মুরগি পালন করে আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছিলেন। কিন্তু বর্তমানে খামারের বিভিন্ন পণ্য ও খাদ্যদ্রব্যের দাম বৃদ্ধির ফলে ধীরে ধীরে গুটিয়ে যাচ্ছে জনপ্রিয় খামার ব্যবসা। গত বছরের করোনার ক্ষতি সামাল দিতে না পেরে অনেকেই ঋণ নিয়ে ব্যবসা টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করে আরও লোকসানে পড়েছেন। বেকার কোনো যুবক উদ্যোক্তা হয়ে যখন খামারের মুরগি পালন করত, তখন তার পরিবারে ইতিবাচক অর্থনৈতিক প্রভাব পড়ত। কিন্তু বর্তমানে অধিকাংশ খামার ব্যবসায়ী ব্যবসা গুটিয়ে প্রবাসের দিকে ছুটছেন।
মীরসরাই প্রাণিসম্পদ অফিস সূত্রে জানা যায়, মীরসরাইয়ে প্রায় ৩০ হাজার খামারি রয়েছেন। এসব খামারে ব্রয়লার, লেয়ার, সোনালি ও দেশি মিলে প্রায় সাত লাখ মুরগি রয়েছে। গরু, ছাগল ও ভেড়ার খামারে প্রায় এক লাখ পশু রয়েছে এবং কবুতরের ৩০টি খামার ও কোয়েলের পাঁচটি খামার রয়েছে।
সারাদেশে খামারিপর্যায়ে গড়ে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৩৫ টাকায়। অথচ এক কেজি ওজনের একটি ব্রয়লার মুরগি উৎপাদনে খরচ হচ্ছে ১৪৫ থেকে ১৫০ টাকা। খামারি পর্যায়ে মুরগির দাম কম হলেও ভোক্তাপর্যায়ে ১৬০ থেকে ১৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে ফার্মের মুরগি। এছাড়া কেজিতে ২০ থেকে ৪০ টাকা দাম বেড়ে সোনালি মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৬০ থেকে ২৯০ টাকায়, যা আগে ছিল ২৪০ থেকে ২৫০ টাকা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দুই থেকে তিন বছর আগে যেসব বেকার যুবক বা ব্যবসায়ী খামারে সফলতা লাভ করেছেন, তারা এখন ধোঁয়াশা দেখছেন। অনেকেই আবার পাঁচ বা ছয় হাজার সেটের মুরগির খামারকে ছোট করে দু-তিন হাজার সেটে পরিণত করেছেন।
উপজেলার ইছাখালী ইউনিয়নের চৎচরত এলাকার খামারি বিপ্লব দাশ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ২০২১-২২ সালে প্রতিটি বস্তায় মুরগির খাদ্যের দাম দ্বিগুণ বৃদ্ধি করা হয়েছে। আগে যে বস্তা আমরা কিনতাম এক হাজার ৬৫০ টাকা দিয়ে, এখন তা কিনতে হচ্ছে তিন হাজার ২৫০ টাকা দিয়ে এবং এক্ষেত্রে যদি নগদে না হয়, তবে তিন হাজার ৩০০ টাকা করে দিতে হয়।
মায়ানী ইউনিয়নের রিপন নামে এক খামার ব্যবসায়ী দাবি করেন, কিছুদিন আগে ডিমের দাম বৃদ্ধি করায় মানুষ ব্যাপক সমালোচনা করে। কিন্তু প্রতিটি ওষুধ ও খাদ্যের দাম দ্বিগুণ থেকে তিনগুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। আগে যে ওষুধ আমরা কিনতাম এক হাজার ৫০০ টাকা দিয়ে, এখন তা কিনতে হচ্ছে তিন হাজার ৫০০ থেকে চার হাজার টাকায়।
মীরসরাই উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. জাকিরুল ফরিদ বলেন, ‘ওষুধ ও খাদ্যদ্রব্যের দাম বৃদ্ধির কারণে অনেকটা বিপাকে পড়েছেন মীরসরাইয়ের খামারিরা। ওষুধ ও খাদ্যদ্রব্যের দাম শিগগিরই সহনীয় অবস্থায় না এলে খামার ব্যবসায়ীদের জন্য একটি দুর্বিষহ অবস্থা সৃষ্টি হতে পারে। তিনি আরও বলেন, প্রান্তিক খামারিদের সরকারিভাবে আর্থিক প্রণোদনা দেয়া গেলে ঘুরে দাঁড়াবে এসব প্রান্তিক খামারি।