ক্রীড়া প্রতিবেদক: অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে সদ্য শেষ হওয়া শ্রীলঙ্কা সফর অনেক দিন ধরেই মনে থাকবে বাংলাদেশের। কেননা, এবারই এ সফরে কোনো সিরিজ হারেনি টাইগাররা। সাফল্য নিয়েই দেশে ফিরেছেন তারা। কিন্তু হঠাৎ করেই আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি থেকে মাশরাফি বিন মুর্তজার অবসর, মোটেই সন্তুষ্ট করতে পারেননি সতীর্থ থেকে শুরু করে ভক্তদের। যদিও এরই মধ্যে আসন্ন ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন ক্রিকেটাররা। বাদ যাননি টাইগার ওয়ানডে অধিনায়কও। তারপরও ম্যাশকে টি-টোয়েন্টিতে মাঠে ফেরাতে রাস্তায় নেমেছেন ভক্তরা। যার শুরুটা হয়েছিল মাশরাফির নিজ জেলা লড়াইল থেকে। এরপর মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের মূল ফটকের পাশে কয়েকটি ক্রিকেট সংগঠন এ ডানহাতি পেসারের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার জন্য মানববন্ধন করে। গত পরশু রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে নড়াইল জেলা সমিতিও ম্যাশকে অবসর ভাঙতে আহ্বান জানিয়েছেন।
এদিকে লঙ্কা সফর শেষে দেশে ফিরেও টি-টোয়েন্টি থেকে অবসরের কথা বলেন মাশরাফি, তখন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন সংবাদমাধ্যমকে বলেছিলেন, টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে আছেন মাশরাফি। অবশ্য আগেই তিনি জানিয়ে দেন, অধিনায়কত্ব ছাড়লেও মাশরাফি যত দিন ফিট থাকবে তত দিন খেলে যাবে এ ফরম্যাটে ‘আমি একটা কথা বারবারই বলছি, মাশরাফি কিন্তু টি-টোয়েন্টি এখনও ছাড়েনি। আমরা এখন পর্যন্ত মাশরাফিকে বলিনি যে, ও টি-টোয়েন্টি স্কোয়াডে নেই। শুধু অধিনায়কত্ব ছেড়েছে। আমাদের তিনটা ফরমেটে তিনজন অধিনায়ক। সেটা আমি অনেক আগেই বলেছি। ও যদি ফিট থাকে খেলবে। যদি বলে খেলতে চায় না, আর আমাদের যদি দরকার হয়, তাহলে কি ছেড়ে দেবো?’ এ কথাতেই স্পষ্ট হয়ে যায়, নিজেদের ভুলটা টের পেয়েছে বোর্ডপ্রধান। কিন্তু অবসর ভেঙে মাশরাফি কি ফিরবেন?
এদিকে দেশে ফিরে মাশরাফি তার অবসরের ব্যাপারটি স্পষ্ট করেছেন। আন্দোলনরত সমর্থকদের ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেছিলেন আবার দেখা হবে ওয়ানডেতে, মাঠে মজা হবে। ‘যারা আমাকে নিয়ে আন্দোলন বা মানববন্ধন করছেন, তাদের সবাইকে ধন্যবাদ। উনাদের এ ধরনের ইতিবাচক দিকগুলোর কারণেই আমার ক্যারিয়ার এত লম্বা হয়েছে। আমার খুব খারাপ সময়েও তাদের দোয়া ছিল। আমি এখনও ওয়ানডে খেলছি। আমাকে মাঠে দেখা যাবে, মজা হবে ওখানেই!’ তারপরও মাশরাফি কি একবার অবসর ভেঙে ফেরার চিন্তা করতে পারেন না! কেননা লিওনেল মেসি, দিয়েগো ম্যারাডোনার মতো কিংবদন্তি ফুটবলাররা যে অবসর নিয়েও ভক্তদের জন্য আবারও ফিরছিলেন দেশের জার্সিতে। এখনও জাতীয় দলের হয়ে মাঠ মাতাচ্ছেন মেসি। হয়তো এটা থেকে অনুপ্রেরণা পেতেও পারেন ম্যাশ।
টি-টোয়েন্টি থেকে অবসরের আগে মাশরাফির ক্যারিয়ার ছিল বর্ণাঢ়্য। ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটে ব্যাট-বল হাতে সামনে থেকেই দলকে দিয়েছেন নেতৃত্ব। এখন পর্যন্ত তিনিই এ সংস্করণে সর্বোচ্চ জয়ী টাইগার অধিনায়ক। এর আগে ২০১৪ সালে নেতৃত্ব উঠেছিল তার কাঁধে। সে সময়টা ছিল বাংলাদেশের ক্রিকেটের বিপর্যয়ের বছর। হংকংয়ের সঙ্গেও দল হেরেছিল তখন। হারতে হারতে খাদের কিনারে চলে যাওয়া দলকে তিনি শুধু টেনেই তোলেননি, দেখিয়েছেন মেরুদণ্ড সোজা করে লড়াই করার ক্ষমতাও। এরপর অনেক সাক্ষাৎকারেই ম্যাশ বলেছিলেন, সে সময় অধিনায়কত্বে তেমন প্রস্তুত ছিলেন না তিনি। কিন্তু দেশের প্রয়োজনের কথা ভেবে এবং তার বাবার অনুরোধের পরই রাজি হয়েছিলেন নেতৃত্ব নিতে। এবার কি সমর্থকদের অনুরোধে এ ডানহাতি পেসার দেশের জার্সিতে টি-টোয়েন্টিতে ফিরবেন। এখন সমর্থকের মনে কোটি টাকার প্রশ্ন- বাংলাদেশের সর্বকালের সেরা এ অধিনায়ক কি আসলেই অবসর ভেঙে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে ফিরবেন?
Add Comment