ফুটবল খেলায় সমর্থনের নামে সংঘাত নয়

সাকিবুল ইসলাম : ফুটবল খেলার সঙ্গে জড়িয়ে আছে আবেগ, ভালোবাসা অনুভূতি। চারদিকে এখন ফুটবল বিশ্বকাপের বাতাস বইছে। ফুটবল বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা। বলা যায়, বিনোদনের একটি বড় মাধ্যম এ ফুটবল খেলা। কিন্তু বর্তমান সময়ে এ খেলাকে কেন্দ্র করে সমর্থকদের মধ্যে সংঘাতের সৃষ্টি হচ্ছে। ফুটবল খেলা বাংলাদেশেরও অন্যতম জনপ্রিয় একটি খেলা। এই ফুটবল খেলা নিয়ে বাংলাদেশের শহর, গ্রাম এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলেও মাতামাতির শেষ নেই। বাংলাদেশ দল বিশ্বকাপ ক্রিকেটে প্রতিনিধিত্ব করলেও এখনও বাংলাদেশ ফুটবল দল বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করতে পারেনি। অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলও ফুটবল বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করবে সেই

প্রত্যাশা করি।

বাংলাদেশের ফুটবলপ্রেমী জনসাধারণ বাংলাদেশে সাদাকালো টেলিভিশন সম্প্রচার চালু হওয়ার পর থেকে বেশ কয়েক দশক ধরে কিংবদন্তি খেলোয়াড় পেলে, আর্জেন্টিনা ফুটবল দলের কিংবদন্তি খেলোয়াড় ম্যারাদোনার অসাধারণ ফুটবল নৈপুণ্যের বদৌলতে ব্রাজিল ও আজেন্টিনা ফুটবল দলের সমর্থন করে চলেছে।

ব্রাজিল ফুটবল দলের নেইমার ও আর্জেন্টিনা ফুটবল দলের কিংবদন্তি খেলোয়াড় মেসির অসাধারণ ফুটবল নৈপুণ্যের কারণে বাংলাদেশের বর্তমান প্রজšে§র নিকট ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা ফুটবল দলের সমর্থন ও জনপ্রিয়তা আকাশচুম্বি। ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা ফুটবল দলের সমর্থন এক ধরনের বংশানুক্রমিক ধারায় প্রবাহিত হচ্ছে বলে মনে হয়। লিওনেল মেসি পিএসজি ফুটবল ক্লাবের তারকা ফুটবলার হওয়ার ফলে অনেক ব্রাজিল ফুটবল দলের সমর্থকও লিওনেল মেসিকে সমর্থন করে থাকে এবং লিওনেল মেসির ফুটবল খেলাকে ভালোবাসে।

এক এক মানুষ এক এক ধরনের হয়ে থাকে। সবার পছন্দ ও অপছন্দ এক নয়। আবার স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে গভীর ভালোবাসা থাকলেও উভয়ের পছন্দ কিংবা খাবার, পোশাকের রং, তারকা, নাটক, সিনেমা দেখাসহ আরও অনেক কিছুর পছন্দ এক রকম হয় না। তেমনি ফুটবল খেলার ক্ষেত্রেও তাই। কারও ব্রাজিল দলের ফুটবল খেলা ভালো লাগবে, কারও আর্জেন্টিনা দলের ফুটবল খেলা ভালো লাগবে। আবার কারও কারও জার্মানি, ফ্রান্স, ইতালি, পর্তুগাল, স্পেনসহ অন্যান্য দলের ফুটবল খেলা ভালো লাগবে এটা স্বাভাবিক। তারকার বেলায়ও তাই কারও লিওনেল আন্দ্রেস মেসিকে ভালো লাগবে আবার কারও নেইমার দা সিলভা সান্তোসকে কিংবা পর্তুগাল ফুটবল দলের রোনালদোকে ভালো লাগবে, আর এটাই স্বাভাবিক বিষয়। এই স্বাভাবিক বিষয়কে নিয়ে কিংবা কেউ ভিন্ন মতের বা পছন্দের হলে তাকে নিয়ে কটূক্তি, ব্যঙ্গাতর্ক আচরণ করা উচিত নয়।

খেলাধুলা মানসিক বিকাশের একটি অন্যতম মাধ্যম এবং মানুষের মনের মধ্যে সৎ চিন্তা ও মুক্ত বুদ্ধির বিকাশ সাধন করে। খেলাধুলা মানুষের চিত্তকে প্রফুল্ল করে এবং সৎ চরিত্রের সুনাগরিক তৈরিতে সহায়তা করে। খেলাধুলার মাঠে নেতৃত্বের প্রতিফলনের মাধ্যমে ভবিষ্যত প্রজন্মের যোগ্য নেতৃত্ব তৈরিতেও সহায়তা করে এবং জয়-পরাজয়কে সহজভাবে মেনে নেয়ার সাহস ও শক্তি তৈরি করে। খেলাধুলাকে মাঠপর্যায়ে সীমাবদ্ধ রাখা উচিত। এই খেলাধুলার জয়-পরাজয়, সমর্থন নিয়ে আশপাশের ভিন্ন দলের সমর্থনকারীর সঙ্গে উসকানি মূলক কথাবার্তা, ঝগড়া-বিবাদ, তর্কাতর্কি করে অযথা সংঘাতে জড়ানোর কোনো মানে হয় না।

প্রিয় ও অপ্রিয় দলের খেলা দেখা ও খেলার জয়-পরাজয়কে মেনে নিতে চেষ্টা করতে হবে। কারণ ফুটবল হোক কিংবা অন্য যেকোনো খেলাধুলা হোক একক কোনো দল প্রতিপক্ষবিহীন খালি মাঠে গোল দিলে সেই খেলার কোনো জনপ্রিয়তা থাকবে না। নিজের পছন্দের ফুটবল দলকে সমর্থন করার পাশাপাশি বন্ধু-বান্ধব পাড়া প্রতিবেশীর মতামতকে প্রাধান্য ও মেনে নেয়ার এবং সম্মান করার মানসিকতা সৃষ্টি করতে হবে।

বর্তমান ফুটবল বিশ্বকাপ খেলা চলছে। এ ফুটবল খেলা নিয়ে কিংবা ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার ফুটবল খেলা নিয়ে যেরকম মাতামাতি হচ্ছে তা অন্য কোনো খেলা নিয়ে সে রকম কোনো মাতামাতি দেখা যাচ্ছে না। এর কারণ হচ্ছে বংশানুক্রমিক ও দীর্ঘদিনের জনপ্রিয় ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা ফুটবল দলের সমর্থন। অনেকে ভিন্ন ফুটবল দলের সমর্থন করায় সেই ফুটবল দলের নামে কিংবা সেই ফুটবল দলের তারকা খেলোয়াড়ের নামে দোষ-ত্রুটি, জয়, পরাজয় ইত্যাদির হিসাব কষে বিভিন্ন রকম কটূক্তি ও ব্যঙ্গার্তক আচরণ করে থাকে। এটি কোনো অবস্থাতেই উচিত নয়। ফুটবল খেলা চলছে হাজার হাজার মাইল দূরের দেশে। যাদের দেশে খেলা হচ্ছে কিংবা যেসব ফুটবল খেলোয়াড় খেলায় অংশগ্রহণ করছে তারা কিছুদিন পর ক্লাব ফুটবলে এগার জনের একজন হয়ে অংশগ্রহণ করে একসঙ্গে একই দলের হয়ে খেলাধুলা করবে, একসঙ্গে হাসিঠাট্টা করবে, খাবার খাবে এবং চলাফেলা করবে। তবে আমাদের মধ্যে কেন এই ফুটবল দল নিয়ে দলাদলি করে অযথা সংঘাত?

সম্প্রতি ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা দলের সমর্থন করা নিয়ে কয়েক জেলায় সংঘাত সৃষ্টি হয়েছে, অনেকে আহত হয়েছে, কয়েক মাস আগে কোপা আমেরিকার খেলায় বাংলাদেশের একটি জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে সংঘাতের ঘটনা ঘটে। এই ঘটনাটি আমাদের দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আর্জেন্টিনার ইংরেজি গণমাধ্যম ইঁবহড়ং অরৎবং ঞরসবং-এ প্রকাশিত হতেও দেখা যায়।

আমরা ভালো কিছু করে বিশ্ব দরবারে বাংলা দেশকে প্রশংসিত ও সম্মানিত করতে চাই। নিজেদের মধ্যে অহেতুক সংঘাত সৃষ্টি করে বিশ্ব দরবারে খারাপভাবে পরিচিত হতে চাই না। নিজের জন্য না হলেও লাখো শহিদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন দেশের মানসম্মানের কথা ভেবে ভালো মানুষ হতে হবে। পরিশেষে বলব, ফুটবল খেলায় সমর্থন ভালো, খেলা নিয়ে সংঘাত কাম্য নয়।

শিক্ষার্থী

সমাজকর্ম বিভাগ

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

বিষয় ➧

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০