Print Date & Time : 17 June 2025 Tuesday 2:41 am

ফুটবল হোক বাংলাদেশ আর্জেন্টিনার নতুন মেলবন্ধন 

ফুটবলের প্রতি বাঙালির ভালোবাসা আর পাগলামির গল্প বহু দিনের পুরোনো। নিজেরা ফুটবলের বিশ্বমঞ্চে পৌঁছাতে না পেরে যদিও ক্রিকেটকে কাছে টেনে নিয়েছে তবুও আজও বাঙালির প্রথম ভালোবাসা ফুটবল। সেই ভালোবাসা যে কতটা গভীর তা প্রতি চার বছর পর বিশ্বকাপ এলেই বোঝা যায়। এ যেন বাংলাদেশের সংস্কৃতির সঙ্গে মিশে যাওয়া এক উৎসব।

ফুটবল পাগল বাঙালির বেশিরভাগই দুদলে বিভক্ত। সেই ১৯ শতক থেকেই লাতিন আমেরিকার দুইটি দেশ আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিলকে সমর্থন করে যাচ্ছে বাংলাদেশের মানুষ। প্রিয় দলের সমর্থনে বাংলার মানুষের এই পাগলামি এতদিন দেশের মানুষ দেখেছে। কিন্তু তথ্যপ্রযুক্তি আর সোশ্যাল মিডিয়ার এই যুগে কিছুই আর গোপন থাকে না। বাংলাদেশের মানুষের সমর্থন, ভালোবাসা আর ফুটবল পাগলামির গল্প সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণে পৌঁছে গেছে বিশ্বমঞ্চে। বিশেষত বাংলার মানুষের মেসি, ম্যারাডোনার দেশ আর্জেন্টিনার প্রতি ভালোবাসা এখন আর অজানা নয়। কাগজে কলমে ১৭ হাজার কিলোমিটার দূরে থাকা এক ছোট্ট দেশে আর্জেন্টিনার ফুটবলের প্রতি এমন ভালোবাসা দেখে বিমোহিত আর্জেন্টিনার মানুষ। ভালোবাসলে নাকি তার প্রতিদান পাওয়া যায়। আর্জেন্টিনার জনগণ থেকে ঠিক যোগ্য প্রতিদানই পাচ্ছে বাংলার মানুষ। সোশ্যাল মিডিয়ায় বাংলাদেশের প্রতি নিজেদের ভালোবাসার কথা জানাচ্ছে  আর্জেন্টাইনরা, খুলেছে বাংলাদেশের ক্রিকেটের সমর্থনে ফেসবুক গ্রুপ, আর্জেন্টিনার পথে বিক্রি হচ্ছে বাংলাদেশের পতাকা, জার্সি, মিডিয়ায় চলছে বাংলাদেশ বন্দনা। ভামোস বাংলাদেশ সেøাগানে কাঁপছে আর্জেন্টিনার রাজপথ। ভালোবাসার নাকি আলাদা ভাষা আছে তাই ভিন্ন ভাষা, সংস্কৃতি আর ভৌগোলিক দূরত্ব বাধা হতে পারেনি বাংলাদেশ ও আর্জেন্টিনার ভালোবাসায়। ফুটবল এক করেছে দুটি দেশকে; দুটি দেশের মানুষকে।

তাই এখনই সময় দুটি দেশের মানুষের মধ্যে থাকা এই সম্পর্ককে জাতীয় সম্পর্কে রূপান্তরের। দু’দেশের মানুষের এই বন্ধনকে কাজে লাগিয়ে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক ও দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নয়নের এটাই মোক্ষম সময়। এক্ষেত্রে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য, পর্যটন, স্পোর্টস ডেভেলপমেন্টসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজ করতে পারে দু’দেশ।

দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য: বাংলাদেশের আরএমজি সেক্টরের অন্যতম বাজার হতে পারে আর্জেন্টিনা। এছাড়া বাংলাদেশে উৎপন্ন মেডিসিন, পাট ও পাটজাত পণ্য, চামড়াজাত পণ্য ও প্লাস্টিক পণ্যের বড় বাজার হতে পারে আর্জেন্টিনা। দেশের বাজারে সয়াবিন, ক্রুড ওয়েল, গমের চাহিদা মেটাতে আর্জেন্টিনা হতে পারে অন্যতম আমদানি বাজার। বাংলাদেশের সঙ্গে আর্জেন্টিনার বাণিজ্য ঘাটতি দৃশ্যমান ২০২০ সালে বাংলাদেশ আর্জেন্টিনা থেকে ৪৫০ মিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করেছে পক্ষান্তরে আর্জেন্টিনায় রপ্তানি করেছে মাত্র ১৭.৩ মিলিয়ন ডলারের পণ্য। এই বাণিজ্য ঘাটতি রোধে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

পর্যটন : ফুটবল কাছে টেনেছে ১৭ হাজার কিলোমিটার দূরে থাকা মানুষকে। আর্জেন্টিনার মানুষের বাংলার প্রতি ভালোবাসা তাদের টানছে বাঙালি সংস্কৃতি ও সুজলা সুফলা শস্য শ্যামলা বাংলার অপরূপ প্রাকৃতিক রূপের প্রতি। আর্জেন্টিনার মানুষ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বাংলাদেশের সংস্কৃতি, সাহিত্য, খাদ্যাভ্যাস, ভাষা ও সৌন্দর্য নিয়ে জানতে আগ্রহ প্রকাশ করছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পের বিকাশে সরকারিভাবে প্রচার-প্রচারণা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। বাংলাদেশের সংস্কৃতি ও সৌন্দর্যকে লাতিন আমেরিকার মানুষের কাছে তুলে ধরার এ এক অনন্য সুযোগ।

স্পোর্টস ডেভেলপমেন্ট: ফুটবল দিয়ে যেই সম্পর্কের শুরু তা যেন বাংলাদেশের ফুটবলের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে সেদিকে নজর দেয়া উচিত। বাংলাদেশের ফুটবলের উন্নয়নে আর্জেন্টিনা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। খেলোয়াড়দের উন্নত প্রশিক্ষণ, নলেজ শেয়ারিং, ফুটবল অবকাঠামো উন্নয়নে একত্রে কাজ করতে পারে দু’দেশ। ক্রিকেটে আইসিসির সহযোগী দেশ হিসেবে ৫১ নম্বর র‌্যাঙ্কিংয়ে আছে আর্জেন্টিনা। আর্জেন্টিনার ক্রিকেট উন্নয়নে সহযোগিতা করতে পারে বাংলাদেশ যা দুই দেশের সম্পর্ক উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা পালন করতে পারে।

বিশ্বমঞ্চে বাংলাদেশের নতুন বন্ধু হিসেবে আবর্তিত হচ্ছে আর্জেন্টিনা। দুই দেশে পারস্পরিক সম্পর্ক উন্নয়নের মাধ্যমে এই বন্ধুত্বকে কাজে লাগানোই হবে বিচক্ষণ সিদ্ধান্ত। দু’দেশের মানুষের ভালোবাসার বন্ধন দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে যে নতুন মাত্রা এনেছে তা আরও দৃঢ় হলেই লাভবান হবে দুই দেশ। বিশ্বমঞ্চে বাংলাদেশ পাবে নতুন বন্ধু।

মাহমুদুল হাসান

শিক্ষার্থী, সমাজকর্ম বিভাগ

নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়