মো. রজব আলী, ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) : দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে কোরবানির চামড়ার বাজারে আবারও ধস নেমেছে। সরকার প্রতি বর্গফুট চামড়ার দাম ৪৭ টাকা নির্ধারণ করলেও সেই দাম পায়নি চামড়া বিক্রেতারা। ফলে চামড়া কিনে বিপাকে পড়েছেন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা।
চামড়ার মহাজনেরা বলছেন, প্রক্রিয়াজাত চামড়ার মূল্য ৪৭ টাকা নির্ধারণ করা হলেও বাজারে লবণের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় চামড়া প্রক্রিয়াজাত ও ট্যানারি মালিকদের কাছে নিয়ে যেতে প্রতিটি চামড়ায় খরচ হয় ২০০ থেকে ২৫০ টাকা। আবার বছরের পর বছর ট্যানারি মালিকদের কাছে বকেয়া টাকা পড়ে থাকে। এ কারণে তারা সরকারের নির্ধারিত মূল্যে চামড়া কিনতে পারছে না।
এদিকে দেশীয় বাজারে চামড়া মূল্য কমে যাওয়ায় সেই চামড়া চোরাই পথে ভারতে পাচার হওয়ার আশঙ্কার করছেন সংশ্লিষ্টরা। সচেতন মহল বলছেন, দেশীও বাজারে চামড়ার মূল্য কমে যাওয়ায়, অধিক মুনাফার আশায় চোরাকারবারিরা চোরাই পথে ভারতে চামড়া পাচার করতে পারে। তবে সেই আশঙ্কা নাকচ করে দিয়েছেন ফুলবাড়ী ২৯ বডার গার্ড ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল আলমগীর কবির। তিনি বলেছেন, চামড়া পাচারসহ চোরাকারবারি রোধে সীমান্ত এলাকায় নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়েছে। সেই সঙ্গে সীমান্ত এলাকায় টহল জোরদার করা হয়েছে।
কোরবানির চামড়ার বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতিটি গরুর চামড়া আকারভেদে ২৫০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। এছাড়া ছাগলের চামড়া বিক্রি হয়েছে ৩০ টাকা থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত। আবার অনেকে ছাগলের চামড়া বিক্রি করতে না পেরে সেই চামড়া মাটিতে পুঁতে রেখেছেন। চামড়ার মৌসুমি শাহনেওয়াজ হাশমি বলেন, গ্রাম থেকে চামড়া কিনে এনে মহাজনেরা চামড়ার কেনা দামও বলছে না। এতে তিনি বড় রকমের লোকসানে পড়েছেন।
চামড়া ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম বলছেন, একটি ১৫ ফিটের গরুর চামড়া প্রক্রিয়াজাত করলে ১৩ ফিট হয়ে যায়। বাজারে লবণের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায়, চামড়া প্রক্রিয়ার খরচও বৃদ্ধি পেয়েছে। একই কথা বলেন, চামড়া ব্যবসায়ী কাবির হোসেন ও সুধির চন্দ্র।
নজরুল ইসলাম আরও বলেন, একটি চামড়া প্রক্রিয়াজাত করে মোকামে নিয়ে যেতে খরচ হয় ২০০ টাকা থেকে ২৫০ টাকা। এরপর বছরের পর বছর ট্যানারি মালিকরা চামড়ার দাম বাকি রাখেন। তাই সরকারের নির্ধারিত মূল্যে তারা চামড়া কিনতে পারছে না।
চামড়া বিক্রি করতে আসা বারকোনা গ্রামের আব্দুল আলিম বলেন, এঁেড় গরুর চামড়া ৪০০ টাকা দামে বিক্রি করেছেন। কয়েকজন কওমি মাদরাসার শিক্ষক বলেন, কোরবানির পশুর চামড়ার টাকা দিয়ে কওমি মাদরাসাগুলো বছরের বেশি সময় খরচ জোগায়। কয়েক বছর থেকে চামড়ার দাম কমে যাওয়ায় মাদরাসাগুলোকে বিকল্প পথে আয় করতে হচ্ছে।
তেল গ্যাস খনিজসম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির ফুলবাড়ী শাখার আহ্বায়ক সৈয়দ সাইফুল ইসলাম জুয়েল বলেন, চামড়া একটি ঐতিহ্যবাহী জাতীয় সম্পদ। বর্তমানে দেশীয় বাজারে চামড়া জাত পণ্যের দাম দিন দিন বৃদ্ধি পেলেও চামড়ার বাজারে ধস নামছে। এতে করে এ জাতীয় সম্পদ চোরাই পথে বিদেশে পাচার হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তিনি এ জাতীয় সম্পদকে রক্ষার জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানান।