নিজস্ব প্রতিবেদক: গতকাল দুপুরের বেশ আগে থেকে বিমানবন্দরের বাইরে সমর্থকদের ভিড় শুরু হয়। সময়ের সঙ্গে জনস্রোত রূপ নেয় জনজোয়ারে। হাতে হাতে পতাকা ও ব্যানার, কণ্ঠে স্লোগান। সুসজ্জিত ব্যান্ড দল বাজাতে থাকে‘জয় বাংলার, বাংলার জয়।’ বিমানবন্দরের ভেতরে তখন জয়ের গৌরব নিয়ে দেশে ফেরা নারী ফুটবল দলের প্রত্যেককে স্বাগত জানানো হয় ফুলের মালায়। নারী সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে ইতিহাস গড়া সাফল্য নিয়ে বাংলাদেশ দল কাঠমান্ডু থেকে ঢাকায় পা রাখে বেলা ২টার একটু আগে। যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল, বাফুফের সহসভাপতি আতাউর রহমান ভুঁইয়া, সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম সোহাগ ও অন্য কর্তারা বরণ করে নেন সাবিনা-মারিয়া-কৃষ্ণাদের। বিমানবন্দরে আনুষ্ঠানিকতা শেষে শুরুতেই কেক কাটা হয়। ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী কেক তুলে দেন অধিনায়ক সাবিনা খাতুনের মুখে। শিরোপাজয়ী অধিনায়কই শুধু নন, তিনি টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় ও সর্বোচ্চ গোল স্কোরারও। কোচ গোলাম রব্বানী ছোটনকেও কেক খাইয়ে দেয়া হয়। সেই পর্ব চলে বেশ কিছুক্ষণ ধরে। ক্রীড়ামন্ত্রী এরপর একে একে দলের প্রত্যেক খেলোয়াড় ও কোচিং স্টাফের গলায় পরিয়ে দেন ফুলের মালা। একটু পর দুহাতে ট্রফি উঁচিয়ে চওড়া হাসিতে এগিয়ে যান অধিনায়ক সাবিনা। তাকে অনুসরণ করে গোটা দল। বিমানবন্দরের বাইরে তখন অপেক্ষায় হাজারো জনতা। অনেকের হাতেই জাতীয় পতাকা, নানা রকম ব্যানার। বিকেএসপির একটি বড় দলও দেখা যায় সেখানে লাইন ধরে অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে মেয়েদের বরণ করে নিতে। সেøাগানে সেøাগানে মুখরিত হয় চারপাশ।
বিমানবন্দরের বাইরে অপেক্ষায় মেয়েদের সেই স্বপ্নযাত্রার বাহন ‘ছাদখোলা বাস’। সেই বাসে ওঠার সময়ও মেয়েদের আবার ফুল ছিটিয়ে অভিনন্দন জানানো হয়। শহরের নানা প্রান্ত প্রদক্ষিণ করে বাসটি যাবে মতিঝিলে বাফুফে ভবনে। মেয়েদের বরণ করে নেয়ার আনুষ্ঠানিকতা আছে সেখানেও। বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন দলকে অভ্যর্থনা জানাবেন বাফুফেতেই। কাঠমান্ডু থেকে ফেরার পথে ফ্লাইটেও এক দফা অভ্যর্থনা জানানো হয়। সেখানে বাংলাদেশ বিমানের পক্ষ থেকে অভিনন্দন জানানো হয় দলকে। সাবেক জাতীয় ক্রিকেটার ও বিমানের ক্রু সানোয়ার হোসেন মিষ্টিমুখ করান মেয়েদের। কেক কাটার পর্ব ছিল বিমানেও।
অপরদিকে টানা খেলার ক্লান্তি এখনও সঙ্গী; ভ্রমণের ধকল তো আছেই। সাবিনা খাতুনের চেহারায় এ ছাপ স্পষ্ট। বিমানবন্দরে নামার পর থেকে ভালোবাসার ‘অত্যাচারও’ চলতে থাকল। ভিড়বাট্টা ও হইহুল্লোড়ে দু-এক পা এগোনোই কঠিন। তবে শ্রান্তিকে পাত্তা না দিয়ে সারাক্ষণই মুখে চওড়া হাসি ঝুলিয়ে রাখলেন সাবিনা। বিমানবন্দরে দারুণ অভ্যর্থনা পেয়ে অভিভূত বাংলাদেশ অধিনায়ক গর্বিত কণ্ঠে তাদের স্মরণীয় সাফল্য উৎসর্গ করলেন দেশের মানুষকে। নেপালে নারী সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ জিতে বুধবার বেলা ২টার একটু আগে ঢাকায় পা রাখে বাংলাদেশ দল। বিমানবন্দরে নানা আয়োজনে তাদের বরণ করে নেয়া হয়।
পরে বিমানবন্দরেই ছোট্ট সংবাদ সম্মেলনে প্রতিক্রিয়া জানান সাবিনাÑ‘আমাদের এত সুন্দর করে বরণ করে নেয়ার জন্য আমরা অনেক কৃতজ্ঞ। মন্ত্রী মহোদয় ও ফেডারেশনের যারা এসেছেন, সবার প্রতি কৃতজ্ঞ। বাংলাদেশের মেয়েদের, বাংলাদেশের ফুটবল যে আপনারা এত ভালোবাসেনÑএসব দেখে আমরা অনেক অনেক গর্বিত। সবাইকে ধন্যবাদ। আমাদের জন্য দোয়া করবেন। বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষ বলুন, বা ১৮ কোটি কিংবা ২০ কোটিÑএ ট্রফি বাংলাদেশের সব মানুষের।
নারী সাফে আগের সব আসরের চ্যাম্পিয়ন ও এবারও ফেভারিট হয়ে আসা ভারতকে গ্রুপ পর্বেই উড়িয়ে দেয় বাংলাদেশ। একের পর এক জয় ও প্রতিপক্ষকে গোলবন্যায় ভাসিয়ে ফাইনালে স্বাগতিক নেপালের বিপক্ষেও দাপুটে জয়ে শিরোপা জয় করে বাংলাদেশ। সেই জয়ে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন সাবিনা। আট গোল করে টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ গোলস্কোরার তিনি, আসরের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কারও জেতেন তিনিই।
বাংলাদেশ নারী ফুটবলের মুখ হয়ে ওঠা এ ফুটবলার আরেকবার মনে করিয়ে দিলেন, অনেক পরিশ্রম ও পরিকল্পনার ফসল এই জয়। এবার তারা তাকাতে চান আরও উঁচুতে। আমাদের ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন স্যার, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ও মন্ত্রীর সহায়তায় ২০১২ সাল থেকে মহিলা ফুটবল ভালোভাবে চলছে। মেয়েদের পরিশ্রম যদি দেখেন, চার-পাঁচ বছরের সাফল্য দেখেন, এতেই সব বোঝা যায়। সাফে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর আমাদের চিন্তা-ভাবনা হচ্ছে সামনের দিকে আরও কীভাবে এগিয়ে যাওয়া যায়।
‘রাজসিক এই আয়োজনে আমাদের বরণ করে নেয়ার জন্য কৃতজ্ঞতা জানাই। আমাদের এই পথচলা অনেক দিনের। অনেক পেছন থেকে আমরা উঠে এসেছি, ২০১২ সাল থেকে পরিবর্তনটা শুরু হয়েছিল। সবার অবদানেই আজকের এ সাফল্য।’ বিমানবন্দর থেকে বের হয়ে সাজিয়ে রাখা ছাদখোলা বাসে উঠে যান দলের সবাই। পথজুড়ে দুই পাশে দেখা যায় জনতার ভিড়। হাত নাড়িয়ে গলা ফাটিয়ে তারা অভিবাদন জানান মেয়েদের। ট্রফি উঁচিয়ে ও জাতীয় পতাকা উড়িয়ে অভিনন্দনের জবাব দেন সাবিনারা।