নিজস্ব প্রতিবেদক: নির্ধারিত সময়ের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন জমা দিতে ব্যর্থ হওয়ার অভিযোগে ফু-ওয়াং ফুড ও বেঙ্গল ফাইন কেমিক্যালের প্রত্যেক পরিচালককে জরিমানা করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। কোম্পানি দুটির প্রত্যেক পরিচালককে (স্বতন্ত্র ও মনোনীত পরিচালক ছাড়া) এক লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে।
গতকাল বিএসইসির ৬০৮তম কমিশন সভায় এ দুই কোম্পানিকে জরিমানা করা হয়, যা বিএসইসি’র মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. সাইফুর রহমান স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
ফু-ওয়াং ফুড লিমিটেডের ৩০ জুন, ২০১৪ সমাপ্ত হিসাববছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনে সাবসিডিয়ারি কোম্পানি ফু-ওয়াং বেভারেজ লিমিটেডের হিসাব সমন্বিত না করেই আর্থিক প্রতিবেদন দাখিল করতে ব্যর্থ হয়েছে, যা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ রুলস, ১৯৮৭ এর ধারা ১২ এর লঙ্ঘন। এছাড়া সাবসিডিয়ারি কোম্পানিতে অগ্রিম হিসাবে প্রদত্ত দুই কোটি ৫৩ লাখ ৪০ হাজার টাকা ৩০ জুন ২০১৪ সালের সমাপ্ত হিসাব বিবরণীতে প্রদর্শিত হলেও প্রয়োজনীয় প্রমাণ দাখিলে ব্যর্থ হয়েছে।
এছাড়া ওয়ার্ক ইন প্রসেস হিসেবে দুই কোটি ১৪ লাখ ২২ হাজার ১৪০ টাকা এবং তিন কোটি ২৫ লাখ ৭৮ হাজার ৯২২ টাকা যথাক্রমে ৩০ জুন ২০১৪ এবং ৩০ জুন ২০১৩ সমাপ্ত বছরের ক্যাশ ফ্লো স্টেটমেন্টে প্রদর্শিত হলেও প্রয়োজনীয় প্রমাণ দাখিলে ব্যর্থ হয়েছে, যা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ রুলস, ১৯৮৭ এর ধারা ১২ এর লঙ্ঘন। তাই বিএসইসি কোম্পানিটির প্রত্যেক পরিচালককে (স্বতন্ত্র ও মনোনীত পরিচালক ব্যতীত) এক লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে।
এদিকে বেঙ্গল ফাইন কেমিক্যাল ৩০ জুন, ২০১৪ সমাপ্ত হিসাববছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন নির্ধারিত সময়ের মধ্যে দাখিল করতে ব্যর্থ হয়েছে, যা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ রুলস, ১৯৮৭ এর ধারা ১২-এর লঙ্ঘন। এছাড়া কোম্পানিটি ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৪ সময়ে সমাপ্ত প্রথম প্রান্তিক, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৪ সময়ে সমাপ্ত অর্ধবার্ষিকের এবং ৩১ মার্চ ২০১৫ সময়ে সমাপ্ত তৃতীয় প্রান্তিকের অনিরীক্ষিত প্রতিবেদন দাখিল করতে পারেনি, যা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ রুলস, ১৯৮৭ এর ধারা ১৩-এর লঙ্ঘন। তাই বিএসইসি কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ প্রত্যেক পরিচালককে (স্বতন্ত্র ও মনোনীত পরিচালক ব্যতীত) এক লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে।
এছাড়া গতকালের কমিশন সভায় আর্থিক প্রতিবেদন তৈরিতে আইন লঙ্ঘন করার অভিযোগে রিপাবলিক ইন্স্যুরেন্সকে সতর্ক এবং প্রাইম টেক্সটাইলের প্রত্যেক পরিচালককে দুই লাখ টাকা করে জরিমানা করেছে বিএসইসি। তবে এ জরিমানার পাশাপাশি কোম্পানি দুটির অডিটরকেও জবাবদিহিতার আওতায় আনা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ইনস্টিটিউট অব চ্যার্টার্ড অ্যাকাউন্টস অব বাংলাদেশকে (আইসিএবি) দায়িত্ব দিয়েছে কমিশন।
জানা যায়, রিপাবলিক ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডে তাদের ৩১ ডিসেম্বর ২০১৩ সমাপ্ত অর্থবছরের ব্যালেন্স শিট এবং ক্যাশ ফ্লো স্টেটমেন্টস এ অ্যাডভান্স, ডিপোজিট এবং রি-পেমেন্টস সংক্রান্ত উপস্থাপনা ও ডিসক্লোজার সংশ্লিষ্ট ইন্টারন্যাশনাল অ্যাকাউন্টিং স্ট্যান্ডার্ডস (আইএএস) অথবা বাংলাদেশ অ্যাকাউন্টিং স্ট্যান্ডার্ডস (বিএএস) অনুযায়ী প্রস্তুত করেনি, যা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (রাইট ইস্যু) রুলস, ২০০৬ এর রুল ৩(ই) লঙ্ঘন। তাই কোম্পানিটিকে সতর্ক করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা।
এছাড়া এ কোম্পানির নিরীক্ষক এ মতিন অ্যান্ড কোং চার্টার্ড অ্যাকাউন্টস বিষয়টি নিরীক্ষা প্রতিবেদন কোয়ালিফাইড অপিনিয়ন হিসেবে উল্লেখ না করায় ওই নিরীক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিষয়টি ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্টস অব বাংলাদেশ (আইসিএবি)কে প্রেরণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
প্রাইম টেক্সটাইল স্পিনিং মিলস লিমিটেডের ৩০ জুন, ২০১৪ সমাপ্ত অর্থবছরের আর্থিক হিসাব বিবরণী আইএএস-১৬ অথবা বিএএস অনুযায়ী পুনঃমূল্যায়িত সম্পদের (রি-ভ্যালুয়েশন অ্যাসেট) বিপরীতে যথাযথভাবে অবচয় ধার্য না করে স্টেটমেন্ট অব কমপ্রিহেনসিভ ইনকাম প্রস্তুত করেছে। আর এটি এ কোম্পানির নিরীক্ষকের রিপোর্টে কোয়াইলিফাইড অপিনিয়ন হিসেবে উল্লেখ ছিল না। বিষয়টি পরীক্ষা করে দেখা গেছে, যথাযথভাবে অবচয় ধার্য না করে স্টেটমেন্ট অব কমপ্রিহেনসিভ ইনকাম প্রস্তুতের ফলে প্রাইম টেক্সটাইলের ৩০ জুন,২০১৪ সমাপ্ত অর্থবছরের অবচয় খরচ ৬ কোটি ১৬ লাখ টাকা কম দেখানো হয়েছে। ফলশ্রুতিতে ওই বছরের মুনাফা ও শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) অতিমূল্যায়িত হওয়ায় বিনিয়োগকারীরা বিভ্রান্ত হয়েছে।
প্রাইম টেক্সটাইলের কার্যকলাপ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ রুলস, ১৯৮৭ ১২(২) এর লঙ্ঘন। আর এ আইন ভঙ্গের জন্য প্রাইম টেক্সটাইলের প্রত্যেক পরিচালককে (স্বতন্ত্র ও মনোনীত পরিচারক ছাড়া) দুই লাখ টাকা করে জরিমানা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএসইসি।
এছাড়া ও কোম্পানির নিরীক্ষক শফিক বসাক অ্যান্ড কোং চ্যাটার্ড অ্যাকাউন্টস বিষয় নিরীক্ষা রিপোর্টে কোয়ালিফাইড অপিনিয়ন হিসেবে উল্লেখ না করায় ওই নিরীক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিষয়টি আইসিএবিকে প্রেরণেরও সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন।
Add Comment