ফেনীতে আঞ্চলিক মহাসড়কে পুলিশের চাঁদাবাজির অভিযোগ

কামরুল হাসান নিরব, ফেনী: ফেনীতে পরিবহন থেকে বেপরোয়া চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে হাইওয়ে থানা পুলিশের বিরুদ্ধে। এতে বাস, ট্রাক, মাইক্রো বাস, প্রাইভেট, সিএনজি, মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন পরিবহনের চালকরা অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন।

সরেজমিন দেখা গেছে, গাড়ির কাগজপত্র পরীক্ষার নামে রাস্তায় গাড়ি থামিয়ে কোনো না কোনো অজুহাতে তাদের কাছ থেকে দাবি করা হয় হাজার টাকার বেশি। টাকা না দিলে মামলাসহ নানা হয়রানির শিকার হন মালিক-চালকরা।

মহাসড়কে চলাচলকারী হারুন নামে এক ট্রাকচালক বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের একাধিক স্থানে চেকপোস্ট বসিয়ে প্রতিনিয়ত হাইওয়ে পুলিশ উৎকোচ আদায় করছেন। বিশেষত লেমুয়ার পরে হাফেজিয়া রাস্তার বিপরীতে এক বাদামগাছের নিচে একটি নিরাপদ স্পট আছে। সেখানে পুলিশ গাড়ি দাঁড় করিয়ে প্রতিদিন মোটরসাইকেল, সিএনজি, ট্রাক, মিনি ট্রাক, পিক-আপসহ বিভিন্ন গাড়িগুলোকে আটকে গাড়ির বিভিন্ন কাগজপত্রসহ পুলিশের মান্থলি টোকেন আছে কি না জিজ্ঞেস করেন। মান্থলি টোকেন না থাকলে হাজার খানিক টাকা দিলে তারা গাড়ি ছেড়ে দেন। এভাবে রাস্তায় গাড়ি দাঁড় করানোর ফলে কৃত্রিম জ্যামের সৃষ্টি হয়।

কুমিল্লা থেকে সবজি ক্রয় করে ফেনী ও নোয়াখালীতে ট্রাকযোগে নিয়ে নিয়মিত ব্যবসা করেন সবুজ ও করিম। তারা বলেন, মহাসড়কের স্টার লাইন পাম্প সংলগ্ন এলাকায় নিয়মিত হাইওয়ে পুলিশ চেকপোস্ট বসিয়ে অবৈধ মালামাল ও কাগজপত্র চেকিংয়ের নামে কাঁচামাল ও বিভিন্ন পণ্য বোঝাই ট্রাক, পিকআপ থেকে টাকা আদায় করে থাকে। টাকার অঙ্ক ২শ থেকে শুরু করে ২ হাজার ক্ষেত্রভেদে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত গিয়ে ঠেকে। এ পরিস্থিতির নিয়মিত শিকার হচ্ছেন অনেকে। অভিযোগ করে হয়রানির শিকার হতে হবে এমন আশঙ্কার কথা জানিয়ে তারা আর বলেন, ‘সাংবাদিকদের রিপোর্টের কারণে পুলিশের হয়রানি আরও বেড়ে যায়। নীরবে সহ্য করা ছাড়া কোনো উপায় নেই।’ অবৈধ মোটরসাইকেল, নসিমন, মাইক্রোবাস থেকে তিসান নামের একজন মোটরবাইক চালক বলেন, ‘সপ্তাহ খানেক আগে মাথায় হেলমেট দিয়ে লালপোল হতে আসছিলাম। এমন সময় সিগন্যাল দেয় প্রশাসনের এক সদস্য। গাড়ি দাঁড় করাতেই বলে চাপান, সাইডে আসুন। তারপর প্রায় ১২ মিনিট সব কাগজপত্র চেক করেন। এরপর বলেন, সিগারেট খাব, টাকা দেন। সব কাগজপত্রের পর আবার টাকা কেন?  এমন প্রশ্ন করার সঙ্গে সঙ্গেই ৩ হাজার টাকার মামলার সিøপ ধরিয়ে দেন।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশের এক সদস্য জানান, ফেনী হাইওয়ে ওসির বিভিন্ন ট্রান্সপোর্টের সঙ্গে মাসিক চুক্তি করা আছে। এর মধ্যে মোটা অঙ্কের টাকা আসে, কেএইচএফ ট্রান্সপোর্ট, আর আর ট্রান্সপোর্ট, নারায়ণগঞ্জ ট্রান্সপোর্ট, কুমিল্লা ট্রান্সপোর্ট, এমএমটি ট্রান্সপোর্ট, সাতক্ষীরা ট্রান্সপোর্ট, জাহাঙ্গীর অনলাইন সিম, খায়ের ট্রান্সপোর্ট, গৌরীপুর ট্রান্সপোর্ট ইত্যাদি। হাইওয়ে দিয়ে চলাচলের সময় এসব ট্রান্সপোর্টের গাড়ি কোনো প্রকার হয়রানির মুখে পড়ে না। পুলিশও তাদের কাগজপত্র দেখে না।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে মহিপাল হাইওয়ে থানার ওসি মোস্তফা কামাল বলেন, ‘হাইওয়ে থানার সব সদস্যদের কুরআনের শপথ করা আছে। কেউ চাঁদা নেয় না। আমরা ডান বাম টাকা খাই না। যদি কেউ চাঁদা নেয় তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব। তিনি আরও বলেন, কাগজপত্র না থাকলেই মামলা হবে। গাড়ি দাঁড় করিয়ে কৃত্রিম জ্যামের বিষয়ে তিনি বলেন, এমনটা করা হয় না। যদি কেউ করে থাকি তাহলে তার বিরুদ্ধে নেয়া হবে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০