ফেনীতে ইফতার আয়োজনে এগিয়ে নবী হোটেল

ফেনীর ইফতারির খ্যাতি আর ঐতিহ্যের কথা সর্বজনবিদিত। প্রতিবারের মতো এবারও রমজান উপলক্ষে জমে উঠেছে এ ইফতার বাজার। রোজার শুরুতে বাহারি ইফতারের পসরা সাজানো হয় ফেনীর প্রাচীন নবী হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্টে, যা থাকে মাসজুড়ে। শুধু ইফতারসামগ্রী নিয়ে এমন বাজার ফেনীতে আরও বসলেও নবী হোটেল সেরাদের সেরা। রমজানে প্রতিদিন দুপুর থেকেই শহরজুড়ে বাতাসে ভাসে নানা স্বাদের মুখরোচক খাবারের মনকাড়া সুবাস। দুপুর থেকেই জমে উঠতে শুরু করে ইফতারি বাজার। জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বাহারি এসব ইফতার কিনতে ছুটে আসেন ভোজনরসিকরা।
ক্রেতা-বিক্রেতাদের উপস্থিতিতে ফেনীর ট্রাংক রোডে নবী হোটেলের সামনে ইফতারি বাজার পরিণত হয় এক মিলনমেলায়। চলে জমজমাট বিকিকিনি। বাহারি সব খাবার নিয়ে বসা এ হোটেলে ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে শুরু হয় নানা হাঁকডাক। সবকিছু ছাড়িয়ে ব্যবসায়ীদের মুখ থেকে যে কথাটি বারবার বেরিয়ে আসে তা হলো, ‘বড় বাপের পোলায় খায়, ঠোঙায় ভইরা লইয়া যায়।’
নিত্যদিনের চিত্র এই যে, দুপুর থেকেই দোকানিরা বৈচিত্র্যে ভরপুর লোভনীয় ইফতারসামগ্রী থরে থরে সাজিয়ে রাখছেন টেবিলে। বাহারি সেই ইফতার কিনতে প্রথম থেকেই ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড় লেগে থাকে। দেখা গেছে, হোটেলটিতে ক্রেতা সাধারণের উপচেপড়া ভিড়। কেউ নিচ্ছেন ছোলা, পেঁয়াজু, খেজুর; আবার কেউ নিচ্ছেন আস্ত মুরগির রোস্ট, ফ্র্রাই; আবার কেউ নিচ্ছেন কাবাব। ক্রেতাদের অনেকে নিতে ভুল করছেন না নবীর স্পেশাল হালিমও। রমজানে এ হোটেলের হালিমের রয়েছে বিশেষ কদর। দাম একটু বেশি হলেও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কারণে হোটেলটি বেশিরভাগ মানুষের পছন্দের শীর্ষে।
হোটেলের ম্যানেজার শাহাদাত হোসেন বলেন, প্রতিদিন আমাদের তৈরি করা ইফতারিতে বিশেষ আয়োজন করা হয়। তাই রোজার স্পেশাল খাবার শেষ হয়ে যায়।
হোটেল মালিক মো. নবী বলেন, খাবারের গুণগত মান বজায় রাখার কারণে প্রতি রমজানেই হোটেলে ক্রেতারা ভিড় জমান। পুরো রমজানেই বেচাকেনা থাকে জমজমাট। কেননা বাজারের সবচেয়ে সেরা জিনিসটি হোটেলের জন্য কিনে নিয়ে আসি। আর তার সঠিক মান নিয়ন্ত্রণের পর, তা ক্রেতার কাছে পৌঁছে দিই। তিনি আরও বলেন, বাহারি ইফতারের মধ্যে সামি কাবাব ৪০ থেকে ৫০ টাকায় পাওয়া যায়। টিক্কা কাবাবের দাম ৩০ থেকে ৪০ টাকা। চাপালি কাবাব প্রতিটি ৫০ থেকে ৬০ টাকা। মুরগির রোস্ট প্রতিটি ১২০ থেকে ২৫০ টাকা। আস্ত মুরগি মোসাল্লামের প্রতিটি ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা। খাসির মাংসের কিমা পরোটা ৬০ থেকে ৭০ টাকা ও গরুর মাংসের কিমা পরোটা ৪০ থেকে ৫০ টাকা। পাঁচ থেকে ১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে বেগুনি, পেঁয়াজু, আলুর চপ ও সমুচা।
বাহারি ইফতারি তৈরিতে পুরান ঢাকার চকবাজারের আলোকে নবী হোটেলের রয়েছে ঐতিহ্য। ফেনীর ক্রেতাদের সেই একই মানের ইফতারি সরবরাহ করা হয় এখানে। ইফতারসামগ্রীতে কোনো রং বা রাসায়নিক উপাদান ব্যবহার করা হয় না। ইফতার তৈরিতে প্রতিদিন নতুন ও তাজা পণ্য ব্যবহার করা হয়। গ্রাহকদের স্বাস্থ্যসম্মত খাবার উপহার দেওয়া হয় এখানে।
নুর নবী জীবন নামে এক ক্রেতা বলেন, আমি এ হোটেলের নিয়মিত ক্রেতা। এখানকার রমজানের বাহারি আয়োজন আমাকে মুগ্ধ করে। ঐতিহ্যের সঙ্গে এখানে মানের দিকটাও দেখা হয়। একটু বেশি দাম দিয়ে হলেও এখানকার ইফতার সে কারণেই বাড়িতে কিনে নিয়ে যাই।
স্থানীয় লেখক ও রাজনীতিবিদ আলাল উদ্দিন আলাল বলেন, ফেনীর ইতিহাস আর ঐতিহ্যের সঙ্গে মিশে গেছে নবী হোটেল। হোটেলটির খাবারের মান শহরের মধ্যে সেরা।

শাহাদাত হোসেন তৌহিদ, ফেনী

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০