কামরুল হাসান নিরব, ফেনী: বাইরে বড় বড় অক্ষরে ফেস্টুনে লেখা ‘ফেনী তাঁত, বস্ত্র ও কুটিরশিল্প মেলা’, কিন্তু লেখার সঙ্গে পণ্যের কোনো সাদৃশ্য নেই। এমনটি দেখা গেছে ফেনীর জহির রায়হান মাঠে অনুষ্ঠিত তাঁত-বস্ত্র নামক পণ্যের মেলায়। মেলাটির অনুমোদনকারী কর্তৃপক্ষ ফেনী চেম্বার অব কমার্স ইন্ডাস্ট্রি। তবে এ বিষয়ে কিছু জানেন না বলে মন্তব্য করেন চেম্বার সভাপতি আইনুল কবির শামীম। তিনি জানান, মেলার ব্যবসায়ীরা দেশীয় পণ্যের প্রচার-প্রসার এবং তাঁত-বস্ত্রশিল্পকে মানুষের কাছে সুলভ মূল্যে পৌঁছানোর কথা বলে মেলাটির অনুমোদন গ্রহণ করেন। কিন্তু বর্তমানে মেলাটির সার্বিক পরিস্থিতি কেমন, এ নিয়ে তার কোনো ধারণাই নেই।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশ অনিচ্ছুক ফেনী শহরের এক কাপড় ব্যবসায়ী দাবি করেন, ফেনী চেম্বার অব কমার্স ইন্ডাস্ট্রি মেলার অনুমোদন দিয়ে থাকলে মেলার সার্বিক বিষয়ে তাদেরই জানার কথা। তাহলে চেম্বারের সভাপতি যদি বলেন, এ বিষয়ে তার কিছু জানা নেই, তাহলে সে বক্তব্য কোনোভাবেই বিশ্বাসযোগ্য হতে পারে না। তবে আমি শুনেছি, এসব মেলায় দেশীয় পণ্যের প্রতি মানুষের তিক্ততার কারণে এবং দেশীয় পণ্য মানুষ গ্রহণে ইচ্ছুক না হওয়ায় বিদেশি পণ্য দিয়ে বিক্রি করতে এসেছেন ব্যবসায়ীরা।
এ বিষয়ে ফেনী জেলার ডিসি আবু সেলিম মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘মেলাটির বিষয়ে আমি শুনেছি। দেশীয় পণ্যের প্রচার-প্রসারে মেলাটির অনুমোদন নেয়া হয়েছে। কিন্তু পরে শুনলাম, আয়োজকরা দেশীয় পণ্যের পরিবর্তে ভিনদেশি পণ্য প্রদর্শন ও বিক্রি করছেন।’
এ বিষয়ে মেলায় ঘুরতে আসা ফেনী পিটিআই স্কুলের গণিত বিভাগের শিক্ষক জামাল উদ্দিন বলেন, ‘এখানে দেশীয় কুটিরশিল্প কেনার জন্য পরিবারের উৎসাহে আমি দুই সন্তানকে নিয়ে এসেছিলাম। কিন্তু এসে দেখি সব বিদেশি পণ্যে ভরপুর এবং পণ্যগুলো দামে চড়া হলেও মান ভালো নয়। এখানে যেসব বিদেশি কন্ডিশনার ও প্রসাধনী বিক্রি হচ্ছে, তার কোনোটিই মানসম্মত নয়।
এদিকে করোনার ধকল কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই বারবার মেলা বসানোয় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ফেনী শহরের বিভিন্ন বিপণিবিতানের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। তাদের দাবি, বিভিন্ন সময় স্থানীয় মহল অর্থের বিনিময়ে ফেনীর উš§ুক্ত বিভিন্ন স্থানে মেলা পরিচালনা করার জন্য অনুমোদন দিয়ে থাকে। এতে একদিকে যেমন স্থানীয়দের ব্যবসার ক্ষতি হচ্ছে, অন্যদিকে ক্রেতাদের বিভ্রান্ত করা হচ্ছে। আবার বর্তমানে সমগ্র ফেনীতে বিদ্যুতের লোডশেডিং চললেও মেলায় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ দেয়া হচ্ছে।
মিজান রোডের জহির রায়হান মাঠে মেলার আয়োজন করায় এ রোডে যাতায়াতের ক্ষেত্রে ব্যাপক ঝামেলা সৃষ্টি হচ্ছে। এজন্য মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন চলাচলকারী যাত্রীরা। তাদের দাবি, মেলাটি একদিকে যেমন সাধারণ মানুষের কোনো উপকারে আসছে না, অন্যদিকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজট লেগে থাকছে। এতে আমাদের গুরুত্বপূর্ণ কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে।