প্রতিনিধি, ফেনী : ফেনীতে ৬ লাখ ৮০ হাজার পিস ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধারের ঘটনায় করা মামলায় পাঁচ পুলিশ সদস্যসহ ১৩ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
সোমবার (৬ মার্চ) দুপুরে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত-১ এর বিচারক সৈয়দ মো. কায়সার মোশাররফ ইউসুফ এ রায় ঘোষণা করেন। এসময় বরখাস্তকৃত এএসআই মাহফুজসহ ৮ আসামি আদালতে উপস্থিত ছিলেন। সাজাপ্রাপ্ত দুই পুলিশ কর্মকর্তাসহ অপর ৫ আসামি পলাতক।
রাষ্ট্রপক্ষের মামলা পরিচালনা করা এপিপি দ্বিজেন্দ্র কুমার কংশ বণিক জানান, ‘আদালত বরখাস্ত করা এসআই মো. বিল্লাল হোসেন, এসআই মো. আশিকুর রহমান, এএসআই মাহফুজুর রহমান, সালেহ আহম্মদ, ফরিদুল ইসলাম, মো. জাফরসহ ছয় আসামিকে ১৫ বছর করে কারাদণ্ড ও এক লাখ টাকা জরিমানা, আনাদায়ে তাদের ৬ মাস বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।’
এছাড়া, অ্যাডভোকেট জাকির হোসেন, গিয়াস উদ্দিন, আবদুল মোতালেব মুহুরী, কনস্টেবল কাশেম আলী, কনস্টেবল মো. শাহিন মিয়া ও তোফাজ্জল হোসেনসহ ৬ আসামিকে ১০ বছর কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, আনাদায়ে ৪ মাস বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। অপর এক আসামী মাদক পরিবহনের কাজে ব্যবহৃত গাড়ির চালক জাবেদ আলীকে ৫ বছর কারাদণ্ড এবং ৫ হাজার টাকা জরিমানা, আনাদায়ে এক মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও জানান, ‘গত ৭ বছরে ৩৯ জন সাক্ষীর মধ্যে ১৬ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন। গত ১ মার্চ অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত-১-এর বিচারক সৈয়দ মো. কায়সার মোশাররফ ইউসুফের আদালতে মামলার যুক্তিতর্ক উপস্হাপন শেষ হয়।’
আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট হাফেজ আহাম্মদ জানান, ‘গত বছরের ৬ মার্চ তৃতীয় মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তা ও সিআইডির কুমিল্লা জোনের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জালাল উদ্দিনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়। চাঞ্চল্যকর এ মামলায় তিন ম্যাজিস্ট্রেট, তদন্তকারী কর্মকর্তা ও মামলার বাদীসহ ১৬ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ মামলার ১৩ আসামির মধ্যে ৮ জন আদালতে উপস্থিত ছিলেন। ৫ আসামি পলাতক।’
প্রসঙ্গত , ২০১৫ সালের ২১ জুন ফেনী শহরতলীর ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের লালপোলে একটি শিশুকে ধাক্কা দিয়ে প্রাইভেটকারে পালিয়ে যাচ্ছিলেন এএসআই মাহফুজুর রহমান। র্যাব-৭ এর একটি দল গাড়িটি ধাওয়া করে আটক করে। পরে গাড়িটিতে তল্লাশি চালিয়ে ৬ লাখ ৮০ হাজার পিস ইয়াবা ও নগদ ৭ লাখ টাকা জব্দ করে তারা।
এ ঘটনায় পুলিশের এএসআই মাহফুজুর রহমান ও গাড়ি চালক জাবেদ আলীকে গ্রেপ্তার করা হয়। র্যাবের পক্ষ থেকে নায়েক সুবেদার মনিরুল ইসলাম বাদী হয়ে ২২ জুন ফেনী মডেল থানায় মাদক আইনে মামলা করেন। মামলা তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় ফেনী মডেল থানার তৎকালীন ইন্সপেক্টর মো. শাহীনুজ্জামানকে।
মো. শাহীনুজ্জামান ২০১৫ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। আদালত সন্তুষ্ট না হয়ে পুনঃতদন্তের জন্য সিআইডি পুলিশকে নির্দেশ দেন। ২০১৬ সালের ২২ মে দ্বিতীয় মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডি ইন্সপেক্টর আবুল বশর অভিযোগপত্র জমা দিলে আদালত সেটিও গ্রহণ না করে আবারও পুনঃতদন্তের নির্দেশ দেন। পরে ১৩ জনকে আসামি করে ২০১৯ সালের ২৫ মে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন মামলার তৃতীয় তদন্তকারী কর্মকর্তা ও সিআইডি কুমিল্লা জোনের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জালাল উদ্দিন।
চাঞ্চল্যকর এ মামলাটি এএসআই মাহফুজুর রহমান ও আইনজীবীসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে ২০২০ সালের ৩ নভেম্বর অভিযোগ গঠন করে ১০ ডিসেম্বর সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য করেন বিচারক।