মহসিন মিলন, বেনাপোল (যশোর): যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলায় ফুলের রাজধানীতে গদখালিতে করোনার বড় ধরনের প্রভাব পড়েছে। আশানুরূপ বিক্রি না হওয়ায় চাষিদের উৎপাদিত ফুল নষ্ট হচ্ছে বিক্রির অভাবে। এতে তারা বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। এখন আগামী ফেব্রুয়ারি মাসকে লক্ষ্য করে আশায় আছেন চাষিরা। মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে বসন্তবরণ, বিশ্ব ভালোবাসা দিবস, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ও মার্চে স্বাধীনতা দিবসের ফুল বাজারে সরবরাহ শুরু হবে তারা জানিয়েছেন। সে কারণে গদখালী ও পানিসার ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকায় মাঠে এখন দেখা যাচ্ছে ফুলের সমারোহ।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ফুল উৎপাদন বাড়লেও ক্রেতার আনাগোনা নেই বাজারে। এছাড়া ফেব্রুয়ারির বিশেষ দিবসগুলো সামনে রেখে ফুলচাষিরা এখন ব্যস্ত সময় পার করলেও তাদের মধ্যে বিক্রির নির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা নেই বলে জানিয়েছেন। তবে বেশি বিক্রি হবে সে আশায় ফুল পরিচর্যা করে বিক্রির উপযোগী করে তুলছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মৌসুমের এই চার দিবসে গত বছর ফুল সমিতির বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭০-৮০ কোটি টাকা। বিক্রি হয়েছিল প্রায় ৭০ কোটি টাকার ফুল। কিন্তু চলতি বছরের মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ঘরোয়া পরিবেশের অনুষ্ঠান ও বৈদেশিক যোগাযোগ বন্ধ হওয়ায় চাষিদের পক্ষে কোনো লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভয় নয় বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির সভাপতি আব্দুর রহিম। তবুও বসে নেই ফুলচাষিরা, দিন-রাত ফুল বাগানের পরিচর্যা করে চলেছেন।
জানা গেছে, গদখালীসহ ঝিকরগাছার কয়েকটি এলাকায় বিভিন্ন ধরনের জারবেরা, গোলাপ, গ্লাডিওলাস, রজনীগন্ধা, গাঁদা, চন্দ্রমল্লিকা ফুলের চাষ হচ্ছে। প্রকৃতিতে হাতছানি দিয়ে ডাকছে মায়া ভরা নানা রঙের ফুল। প্রায় প্রতিটি ক্ষেতেই চাষিরা ফুলের গাছ পরিচর্যায় মগ্ন রয়েছেন। তারা জানিয়েছেন, বসন্তবরণ, বিশ্ব ভালোবাসা দিবস, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ও স্বাধীনতা দিবসকে ঘিরে তাদের ব্যস্ততা বৃদ্ধি পায়। তারা বছরের অন্য সময় অলসভাবে সময় পার করলেও বছরের শুরুতে এই বিশেষ দিনগুলোয় বাড়তি ফুল বিক্রির আশায় ক্ষেতে বেশি সময় ব্যয় করেন।
ফুলচাষি নজরুল ইসলাম খোকন ও আলমগীর হোসেন জানান, তাদের প্রায় চার বিঘা জমিতে জারবেরা, চন্দ্রমল্লিকা, গ্লাডিওলাস ও রজনীগন্ধা ফুল রয়েছে। উৎসবকে সামনে রেখে ফুল সরবরাহ করতে প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা। ফুলের এই ভরা মৌসুমে তাদের খাওয়া-দাওয়া থাকে না বলেও তারা জানান।
এই দুই ফুলচাষি বলেন, ‘এখনও ফুলের চাহিদা ও দাম কম। আশানুরূপ বিক্রি না হওয়ায় উৎপাদিত ফুল হচ্ছে নষ্ট। পহেলা বৈশাখে ফুলের চাহিদা হতে পারে মনে করে ফুল উৎপাদন করছি। এক বিঘা গোলাপ রোপণে প্রায় এক লাখ ২০ হাজার টাকা খরচ হয়। চার হাজার চারার দাম প্রায় ৬০-৭০ হাজার টাকা। আর রোপণসহ অন্যান্য খরচ আরও ৬০ হাজার টাকা। সঙ্গে পরিচর্যার খরচ রয়েছে। একবার রোপণে ৪-৫ বছর পর্যন্ত গোলাপ ফুল পাওয়া যায়।’
স্থানীয় পাইকারি ব্যবসায়ী মাসুদ রানা জানান, ভালোবাসা দিবসে ফুল বিক্রি বেশি হয়। বাজারে জারবেরা, গোলাপ, রজনীগন্ধ ফুলের চাহিদা বেশি থাকে। কৃষকরাও দাম ভালো পান। প্রতি বছরের এ সময়ে ফুলের আবাদ বাড়ে। এবারও তার ব্যতিক্রম হবে না বলে আশাবাদী সবাই। তবে করোনাকালে পুঁজি বাঁচানো দায় হয়ে পড়েছে বলেও জানান তিনি।
বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির সভাপতি আব্দুর রহিম বলেন, ‘যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলায় প্রায় ছয় হাজার কৃষক আড়াই হাজার হেক্টর জমিতে ফুলের আবাদ করছে। গত বছর বসন্তবরণ, বিশ্ব ভালোবাসা দিবস, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ও স্বাধীনতা দিবসে গদখালী এলাকার কৃষকদের ১০০ কোটি টাকার ফুল সরবরাহের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও ৭০ কোটি টাকার ফুল বিক্রি করেন। এবার করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ঘরোয়া পরিবেশের অনুষ্ঠান ও বৈদেশিক যোগাযোগ বন্ধ হওয়ায় চাষিদের পক্ষে কোনো ধরনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হচ্ছে না। ফুলচাষিরা এবারও বিপুল পরিমাণ ভালো মানের ফুল উৎপাদন করেছেন। পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলে চাষিরা তাদের ফুলের দাম পাবেন বলে আশা করছি।’
ঝিকরগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আরাফাত রহমান বলেন, ‘এ অঞ্চলের ফুলচাষিদের জন্য সরকার ব্যাপক কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। ফুলচাষিদের বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ফুলচাষিদের ব্যাংকঋণ সহজ করতে ও ফুল দেশের বিভিন্ন স্থানে বাজারজাত করতে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। ইতোমধ্যে তাদের জন্য সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে স্বল্প সুদে ঋণের ব্যবস্থা করা হয়েছে।’