সাইফুল আলম, চট্টগ্রাম: খেলাপি ঋণ আদায়ে গত মাসে (ফেব্রুয়ারি) চট্টগ্রামের অর্থঋণ আদালতে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ৪০টি মামলা করেছে বিভিন্ন ব্যাংক। এর আগের মাসে অর্থাৎ জানুয়ারিতে মামলা দায়ের করা হয়েছিল ১৭টি। চট্টগ্রামের ক্ষুদ্র মুদি দোকান থেকে দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ী পর্যন্ত এ তালিকায় রয়েছে। এদিকে মামলা করলেও পাওনা আদায় নিয়ে সংশয়ে অধিকাংশ ব্যাংক ব্যবস্থাপকরা।
ব্যাংক ও অর্থ ঋণ আদালত সূত্রে জানা যায়, ভোগ্যপণ্য আমদানি, আবাসন ও জাহাজভাঙা শিল্পের প্রয়োজনে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে লাভবান হতে না পেরে খেলাপি হয়ে পড়েন চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে বহুল আলোচিত ঋণখেলাপি প্রতিষ্ঠান ম্যাক ইন্টান্যাশনালের বিরুদ্ধে পাওনা আদায়ে আরেকটি মামালা করেন দি সিটি ব্যাংক আগ্রাবাদ শাখা। পাশাপাশি এ ব্যাংক ভাটিয়ারি শাখা মেসার্স এমএম এন্টারপ্রাইজের বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা করে। এ নিয়ে এ ব্যাংকের মোট মামলা সংখ্যা দুটি।
পাওনা আদায়ে সবচেয়ে বেশি মামলা করেছে ব্র্যাক ব্যাংক। এ ব্যাংকের বিভিন্ন শাখাগুলো মিলে মোট ১৯টি মামলা করে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে নার্গিস বেগম, মোহাম্মদ সোহেল, নিজাম উদ্দিন, ফেরদোস উল ইসলাম, মীর হোসেন মিলন, জয়নাল আবেদিন, সুলতানুরুল আলম, লোকমান হাকিম, শাহাবুবুর রহমান, রুপম মজুমদার, আবদুল বায়েত, জাহানারা বেগম, বাবুল কুমার বড়–য়া, আবুল কাশেম, এমরান লিটন নাজমুল হাসান, রুমি চৌধুরী, আয়েশা খাতুন ও আরশাদ হোসেন।
মামলাকারী অন্য ব্যাংকগুলোর মধ্যে উত্তরা ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড চ্যাটার্ড ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক, আগ্রণী ব্যাংক, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক, আইডিএলসি লিমিটেড, ন্যাশনাল ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া মিলে ১৯ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অনাদায়ী ঋণ আদায়ের জন্য মামলা করেন। এসব মামালা হয় মেসার্স মোরশেদ এন্টারপ্রাইজ, মেসার্স সৌদিয়া স্টোর, জাহিদ এন্টারপ্রাইজ, মেসার্স হেরিটেজ গ্লাস অ্যান্ড অ্যালুমিনিয়াম, মেসার্স হক মেডিকো, মেসার্স রনি ফ্যাশন অ্যান্ড ওয়ারস লিমিটেড, নাজমুল হুদা, নেয়ামত উল্লাহ, মেসার্স চৌধুরী এন্টারপ্রাইজ, আবদুল আলীম, মেসার্স একেআর করপোরেশন, জাহিদ হোসেন মিয়া, নিউ সুমন ফার্মেসি, মেসার্স খাজা আলমগীর স্টোর, মুসলিম মিয়া, জসিম উদ্দিন, মেসার্স মাওলানা অ্যান্ড সন্স প্রভৃতি।
ব্যাংক, ট্রেড অ্যাসোসিয়েশন ও আমদানিকারকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ব্যাংক ঋণের সুদ বেশি, ব্যবসায়িক অদক্ষতা, টানা লোকসান, ব্যাংকের দায় পরিশোধে ব্যর্থতা ও আন্তর্জাতিক বাজারে ধারাবাহিক দর পতনের কারণে চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের এমন অবস্থা। একাধিক প্রতিষ্ঠানের কর্ণধারদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও কেউ কোনো কথা বলতে রাজি হননি। তবে আইনি প্রক্রিয়ায় তা নিষ্পত্তি করবেন বলে জানান।
এ বিষয়ে মামলার বাদী ব্যাংকগুলোর একাধিক শাখা ব্যবস্থাপকরা বলেন, ‘পুরোনো করপোরেটগুলো ভোগ্যপণ্য আমদানিতে এরই মধ্যে ঝুঁকিতে পড়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানকে আমদানি ঋণপত্র খুলতে ব্যাংকের অনীহা কিংবা আইনি বাধ্যবাধকতা আছে। এ ঋণ আদায়ে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। গত কয়েক বছরে নতুন আমদানিকারকদের আত্মগোপনে চলে যাওয়া ভোগ্যপণ্যে ব্যাংকের বিনিয়োগ প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।’
চিটাগং চেম্বার অব কমার্সের পরিচালক মাহফুজুল হক শাহ শেয়ার বিজকে বলেন, অর্থঋণের আইনটি একটি মার্শাল ‘ল। এ আইন একতরফাভাবে করা হয়েছে। এ আইনের আলোকে বিচারের ৮০ ভাগ ব্যাংকের পক্ষে যাই। আর ব্যাংকাররা ভালোভাবে যাচাই-বাচাই ও মূল্যায়ন করে ঋণ দিলে এতো ঋণখেলাপি হতো না। এখানে ব্যাংকগুলো দায় এড়াতে পারে না।
চিটাগং চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের পরিচালক ও মোস্তফা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জহির উদ্দিন শেয়ার বিজকে বলেন, ‘তৃতীয় প্রজšে§র ব্যাংকগুলো অতি মুনাফার জন্য না বুঝে ইচ্ছামত ঋণ দেয়। আর অদক্ষ ব্যবসায়ী না বুঝে বিনিয়োগ করে। এতে প্রকৃত ব্যবসায়ীরা বিপাকে পড়ে। পাশাপাশি বাজারে একটি অসম বিনিয়োগ পরিস্থিতি তৈরি হয়। যা সবার জন্য ক্ষতিকর ছিল। এতে বেশ কিছু শিল্প গ্রুপ ব্যবসায়িকভাবে লোকসানে পড়ে। ফলে পাওনা আদায়ে ব্যাংকগুলো মামলা করছে। তবে ব্যবসায়ীদের ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ দিতে হবে।’