ফেব্রুয়ারিতে রেমিট্যান্স কমেছে ১৮ শতাংশ

নিজস্ব প্রতিবেদক: চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে কমেছে দেশে আসা প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স। এ মাসে আসা রেমিট্যান্সের পরিমাণ ৯৩ কোটি ৬২ লাখ ডলার, যা আগের বছরের একই মাসের তুলনায় ২০ কোটি ডলার বা ১৭ দশমিক ৬০ শতাংশ কম। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে দেশে রেমিট্যান্স এসেছিল ১১৩ কোটি ৬২ লাখ ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রানীতি বিভাগের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ চিত্র উঠে এসেছে।

প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, প্রতি অর্থবছরে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়লেও গত অর্থবছরে এসে আড়াই শতাংশ কমে যায়। চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরেও রেমিট্যান্স প্রবাহে নেতিবাচক ধারা অব্যাহত রয়েছে। অর্থবছরের প্রথম মাস তথা জুলাইয়ে ১০০ কোটি ৫৫ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স আসে, যা বিগত ৩৪ মাসের মধ্যে ছিল সর্বনিম্ন। এরপর আগস্টে ১১৮ কোটি ৩৬ লাখ, সেপ্টেম্বরে ১০৫ কোটি ৬৬ লাখ এবং অক্টোবরে ১০১ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স দেশে আসে। আর নভেম্বরে এসে মাত্র ৯৫ কোটি ১৪ লাখ ডলার হয়। এরপর ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে যথাক্রমে ৯৫ কোটি ৮৭ লাখ ডলার ও ১০০ কোটি ৯৪ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স আসায়। সর্বশেষ ফেব্রুয়ারি মাসে ৯৩ কোটি ৬২ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স আসে।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ  বলেন, প্রবাসী আয় কমে যাওয়ায় দেশের অর্থনীতিতে চরম নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংককে এ পরিস্থিতি সামাল দিতে এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে।

তিনি বলেন, রেমিট্যান্স কমার পেছনে প্রধানত তিনটি কারণ রয়েছে। প্রথমত, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোয় দীর্ঘ অস্থিরতা ও তেলের দর পড়ায় বাংলাদেশের শ্রমিকদের আয় কমে গেছে। দ্বিতীয়ত, দীর্ঘদিন ধরে টাকার বিপরীতে ডলারের মূল্য কম থাকায় প্রবাসীরা আগের মতো অর্থ পাঠাচ্ছেন না। তাছাড়া ব্যাংকের তুলনায় খোলা বাজারে ডলারের মূল্য বেশি থাকায় ভিন্ন উপায়ে বৈদেশিক মুদ্রা দেশে ঢুকছে। তৃতীয়ত, মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবস্থা ব্যবহারে হুন্ডিওয়ালারা অবৈধ উপায়ে টাকা দ্রুত প্রবাসীর আত্মীয়ের কাছে পৌঁছে দিচ্ছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম ৮ মাসে ৮১১ কোটি ২৫ লাখ মার্কিন ডলারের রেমিট্যান্স দেশে এসেছে। আগের অর্থবছরের একই সময়ে এসেছিল ৯৭৭ কোটি ৪০ লাখ ডলার। সে হিসাবে চলতি অর্থবছরের ৮ মাসে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমেছে ১৬৬ কোটি ডলার বা ১৭ শতাংশ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রানীতি বিভাগের প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০১০-১১ অর্থবছরে প্রবাসী আয় এসেছিল এক হাজার ১৬৫ কোটি ডলার বা সমমূল্যের বৈদেশিক মুদ্রা। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে রেমিট্যান্স আসে এক হাজার ৪৯৩ কোটি ডলার।

রেমিট্যান্স প্রবাহের ধারাবাহিক পতনে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারাও উদ্বিগ্ন। সম্প্রতি কয়েক দফায় ব্যাংকগুলোর সঙ্গে বৈঠক করা হয়েছে। এজন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দুটি প্রতিনিধি দল মধ্যপ্রাচ্য, সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ায় সরেজমিন তদন্তে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এমনকি মোবাইল ব্যাংকিং সেবা প্রদানকারী শীর্ষ প্রতিষ্ঠান বিকাশের সঙ্গে বৈঠক করা হয়েছে। হুন্ডিওয়ালারা যাতে কোনোভাবেই বিকাশ নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে বৈদেশিক মুদ্রা দেশে না পাঠায় সে ব্যাপারে কড়া বার্তাও দেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশি দূতাবাসগুলোরও সহায়তা চাওয়া হয়েছে। তবুও রেমিট্যান্স বাড়ানো যাচ্ছে না। ইতোমধ্যে টাকার বিপরীতে ডলারের দর বাড়তে শুরু করেছে। বিগত এক মাসে ব্যবধানে ডলারপ্রতি এক টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, গত বছরের ফেব্রুয়ারি শেষে প্রতি ডলার বিক্রি হয়েছিল ৭৮ টাকা ৪৫ পয়সা। যা চলতি ফেব্রুয়ারি শেষে হয়েছে ৭৯ টাকা ৩৭ পয়সা।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০